প্রশাসনিক তদন্ত কমিটির সিদ্ধান্ত
প্রয়োজনে ভারতে গিয়ে নূর হোসেনকে জিজ্ঞাসাবাদ
নারায়ণগঞ্জে সাত খুনের ঘটনার প্রধান আসামি নূর হোসেনকে প্রয়োজনে ভারতে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করবে প্রশাসনিক তদন্ত কমিটি।
মঙ্গলবার বিকেলে সাংবাদিকদের এ কথা জানিয়েছেন কমিটি প্রধান জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব শাজাহান আলী মোল্লা ।
তিনি বলেন, নূর হোসেনকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনা হলে তাকে দেশেই জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। আর তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার আগে যদি তাকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনা না হয় তবে ভারতে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের চিন্তা আছে।’
আগামী ৯ জুলাই সাত খুনের অগ্রগতি প্রতিবেদন আদালতে জমা দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
ভারতে গিয়ে নূর হোসেনকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে ওই দেশের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের অনুমোদন লাগবে জানিয়ে শাজাহান বলেন, ‘বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা করব।’ তবে এ বিষয়ে এখনও আলোচনা হয়নি বলে জানান তদন্ত কমিটির প্রধান।
অতিরিক্তি সচিব বলেন, ‘কেবল তো নূর হোসেন গ্রেপ্তার হয়েছেন। আমরা অপেক্ষা করছি কবে তাকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনা হয়। যদি শিগগিরই তাকে দেশে ফিরিয়ে আনা না হয় সেক্ষেত্রে আমরা ভারতে গিয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের চিন্তা করছি।’
পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের স্পেশাল টাস্কফোর্সের একটি দল শনিবার রাতে কলকাতার নেতাজী সুভাস চন্দ্র বোস আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিকটবর্তী বাগুইহাটির একটি বাড়ি থেকে অন্য দুজনসহ নূর হোসেনকে গ্রেপ্তার করে।
ওবায়দুর রহমান সেলিম ও সুমন খান বিটু নামের ওই দুজনকে রোববার নূর হোসেনের সঙ্গে আদালতে হাজির করা হলে তাদের আট দিনের রিমান্ডে পাঠায় আদালত।
প্রশাসনিক তদন্ত কমিটির সদস্য সচিব আবুল কাশেম মহিউদ্দীন বলেন, ‘আশা করছি নির্ধারিত সময়ের আগেই প্রতিবেদন দেয়া সম্ভব হবে। তদন্তরে অগ্রগতিও বেশ ভালো।’
নারায়ণগঞ্জের কাউন্সিলর নজরুল ইসলামসহ সাত খুনের ঘটনায় র্যাব ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ অন্যদের জড়িত থাকার অভিযোগ তদন্তে হাই কোর্টের নির্দেশে গত ৭ মে তদন্ত কমিটি করে সরকার। এ কমিটি গণতদন্তের মাধ্যমে নারায়ণগঞ্জের অপহারণ ও হত্যার সঙ্গে প্রশাসনের কোনো সদস্য বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো সদস্যের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভূমিকা ও সংশ্লিষ্টতা রয়েছে কি না, তা উদঘাটন করবে।
অপহৃত ব্যক্তিদের জীবিত উদ্ধারে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো অবহেলা বা ইচ্ছাকৃত গাফিলতি ছিল কি না- এই কমিটিকে তাও খতিয়ে দেখতে বলেছে আদালত।
উল্লেখ্য, গত ২৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের প্যানেল মেয়র নজরুল ও জ্যেষ্ঠ আইনজীবী চন্দন সরকারসহ সাতজন অপহৃত হওয়ার তিন দিন পর শীতলক্ষ্যা নদীতে তাদের লাশ ভেসে ওঠে। অপহরণের পরপরই নজরুলের পরিবারের পক্ষ থেকে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নূর হোসেনকে প্রধান আসামি করে একটি মামলা করা হয়। মামলার পর অভিযোগ অস্বীকার করে সংবাদ মাধ্যমে বক্তব্য দিলেও অপহৃতদের লাশ উদ্ধারের পর লোকচক্ষুর আড়ালে চলে যান নূর হোসেন।
নূর হোসেন ও তার সহযোগীরা র্যাবকে ছয় কোটি টাকা দিয়ে নজরুলসহ সাতজনকে হত্যা করিয়েছে বলে নিহত কাউন্সিলরের শ্বশুর শহীদুল ইসলাম অভিযোগ করেন। তার অভিযোগের ভিত্তিতে র্যাব-১১ এর তৎকালীন কমান্ডার তারেক সাঈদ মোহাম্মদসহ তিন কর্মকর্তাকে প্রথমে দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার এবং পরে সামরিক বাহিনী থেকে চাকরিচ্যুত করা হয়।
এরপর উচ্চ আদালতের নির্দেশে ওই তিন কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। যাদের দুজন হত্যাকাণ্ডের ‘দোষ স্বীকার’ করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। এরইমধ্যে নূর হোসেনকে ধরতে পুলিশের আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারপোলের সহযোগিতা চায় বাংলাদেশ পুলিশ।
পরিবহন শ্রমিক থেকে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর হওয়া নূর হোসেন শীতলক্ষ্যার তীরে অবৈধ বালু ব্যবসাসহ বিভিন্ন ধরনের অবৈধ ব্যবসা চালাতেন। সিদ্ধিরগঞ্জ ট্রাকস্ট্যান্ডে তার কয়েকটি দোকান থেকে বিপুল পরিমাণ মাদক ও অস্ত্র উদ্ধার করেছে পুলিশ।
মন্তব্য চালু নেই