প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে ফ্রান্সে মসজিদ বন্ধ করবেন ম্যারি লি পেন
২৩ এপ্রিল ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রথম পর্ব অনুষ্ঠিত হবে। এই নির্বাচনকে ‘উগ্র জাতীয়তাবাদী’ আর ‘মানবিকতা’র আরও একটি চূড়ান্ত পরীক্ষা বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন। কেননা প্যারিসে সাম্প্রতিক হামলার পর একজন বলছেন ফ্রান্সে মসজিদ বন্ধের কথা, অপরজন ভয়কে জয়ের আহ্বান জানিয়েছেন। তাই বিশ্ব কী সস্তা জনপ্রিয়তার প্রতি ঝুঁকবে, নাকি মানবিকবোধে আরো দৃঢ় হবে? বিশ্লেষকরা বলছেন, এমন প্রশ্নেরই উত্তর দেবে এই নির্বাচন।
এই নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা কেউ না পেলে পরবর্তীতে সবচেয়ে বেশি ভোট পাওয়া দুই প্রার্থীর মধ্যে লড়াই হবে ৭ মে। নির্বাচনে আরও রয়েছেন মধ্য-ডানপন্থী প্রার্থী ফ্র্যান্সিস ফিলোন এবং বামপন্থী প্রার্থী জিন-লুক মেলেনকন। তারাও ভোটের উল্লেথযোগ্য অংশ পাবেন বলেই ধারণা, তাই প্রথম পর্বের লড়াইয়ে কেউ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে না। তবে প্রথম ও দ্বিতীয়তে যে পেন-ম্যাকরন থাকবেন, তা অনেকেই নিশ্চিত। তাই দ্বিতীয় দফা ভোটগ্রহণই বেশি আলোচিত হবে। কারণ তখনই দেখা যাবে ব্রেক্সিট, ট্রাম্পের জয়ের পর আবারও কি জাতীয়তাবাদী একজনের জয় হচ্ছে।
নির্বাচনের মূল প্রতিদন্দ্বী একদিকে যখন কট্টর ডানপন্থী ম্যারি লি পেন অপরদিকে মধ্য-বামপন্থী ইমানুয়েল ম্যাকরন তখনতো এমনটা বলা যেতেই পারে। জাত্যাভিমানি, ইসলাম ও অভিবাসী বিদ্বেষী মার্কিন প্রেসিডন্টের অনুরূপ আদর্শধারী পেনের শক্ত প্রতিপক্ষ ‘বিভাজন বিরোধী’ ম্যাকরন। ট্রাম্পের সমর্থন পেয়েছে প্রথমজন, দ্বিতীয়জন ওবামার।
জাতীয়তাবাদীদের উন্মেষের প্রথম প্রকট প্রদর্শন ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে ব্রিটেনের বের হয়ে যাওয়ার পক্ষে (ব্রেক্সিট) রায়, যার প্রক্রিয়া ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। সেই রেষ ধরে আবারও বিশ্বকে নাড়িয়ে দেয় ইসলাম-বিদ্বেষী, জাত্যাভিমানি ডোনাল্ড ট্রাম্পের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়া। এখন আবার সামনে ফ্রান্স।
ফরাসি রাজনীতিতে জঙ্গিবাদ একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। আবার নির্বাচনের প্রাক্কালে সেন্ট্রাল প্যারিসের চ্যাম্পস-এলেসিস অ্যাভিনিউয়ে হামলার ঘটনা প্রভাব বিস্তার করতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। ২০১৫ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ফ্রান্সে জঙ্গিবাদের শিকার হয়ে নিহত হয়েছে অন্তত ২৩৮ জন।
মার্কিন গণমাধ্যম সিএনএন-এ প্রকাশিত এক বিশ্লেষণধর্মী নিবন্ধে ক্রিস সিলিজা লিখেছেন, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন এমন কিছু নয় যার দিকে আমি আপনাদের দৃষ্টি দেয়ার কথা বলতে পারি। আসলে এখানে নজর দিতে আকৃষ্ট করাটাও খুব কঠিন। কিন্তু ফ্রান্সে সাম্প্রতিক হামলার প্রেক্ষিতেই শুধু নয়, এই নিবার্চন বিশ্বের জন্য তাৎপর্যবহ।
নির্বাচনপূর্ব অধিকাংশ জরিপেই ইঙ্গিত মেলে লি পেন প্রথম পর্বে প্রথম বা দ্বিতীয় অবস্থানেই থাকবেন। ‘ফ্রান্সের চেতনাকে বিঘ্নিত করছে অভিবাসীরা’ এবং তা ‘কঠোরভাবে কাঁটছাটের’ পক্ষপাতী ঘোষিত জাতীয়তাবাদী এই নেতা অভিবাসী ও ইসলামি সন্ত্রাস নিয়ে কঠোর অবস্থান জানিয়েছেন।
বৃহস্পতিবারের সাম্প্রতিক সন্ত্রাসী হামলায় এক পুলিশ অফিসারের মৃত্যুর পর দেশটিতে সকল ‘ইসলামিস্ট’ মসজিদ বন্ধের আহ্বান জানান লি পেন। সন্ত্রাসী তালিকায় থাকা সকলকে তাড়িয়ে দেওয়ার কথাও বলেন তিনি।
নির্বাচনের অনুষ্ঠানের আগে আগে এই হামলা লি পেনের পক্ষেই গেছে বলে ধারণা, যা সন্ত্রাসের ভয়াবহতা আবারও তুলে ধরে। এই হামলার দায় স্বীকার করেছে (আইএস)। এমন ধারণার পক্ষে মত দিয়েছেন ট্রাম্পও। এপি কে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, সাম্প্রতিক এই হামলা সম্ভবত লি পেনকে সহায়তা করবে। ‘সীমান্তে লি পেন সবচেয়ে শক্তিশালী, ফ্রান্সে যা ঘটছে তার লড়াইয়েও তিনি সবচেয়ে শক্তিশালী’ বলেন ট্রাম্প।
লি পেনের বিষয়ে ট্রাম্পের এই মন্তব্যের একদিন আগে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা লি পেনের শক্ত প্রতিপক্ষ ম্যাকরনকে আসন্ন দিনগুলির জন্য শুভেচ্ছা জানান। সাবেক ব্যাংকার ম্যাকরন গত বছর আগস্টে অর্থমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে নিজেই পৃথকভাবে নির্বাচনের ঘোষণা দেন।
লি পেনের কঠোরতার বিপরীতে ম্যাকরনের বক্তব্যও ওবামার মতো। তিনি বলেন, ভয়ের কাছে পরাজিত হবেন না, বিভাজিত হবেন না, ভীতি প্রদর্শনের কাছে নতি স্বীকার করবেন না। নির্বাচনে সঠিক নিতে ফরাসিদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, রোববারে আপনারা যে সীদ্ধান্ত নেবেন তা ভবিষ্যতের জন্যই নেবেন।
মন্তব্য চালু নেই