প্রেসক্লাবের সামনে অনশনে একা এক বৃদ্ধ মুক্তিযোদ্ধা
মুক্তিযোদ্ধা ডা. মো. দেলোয়ার হোসেন খান। কাজ করছিলেন ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর দ্য ইন্টেলেকুয়ালি ডিবেবল্ড (নিড) এবং সুইড বাংলাদেশে। কিন্তু নির্ধারিত মেয়াদের আগেই চাকরি হারিয়ে তাকে নামতে হয়েছে রাজপথে। বাধ্য হয়েছেন জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অনশনে বসতে।
মঙ্গলবার সকাল থেকেই জাতীয় প্রেসক্লাবে সামনে অনশনে বসেছেন দেলোয়ার হোসেন। পেছনে বড় ব্যানার। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী বাড়তি দুই বছর চাকরির সুবিধা না পেয়ে অনশনে বসেছেন। একই সাথে অবসরকালীন ভাতার নিশ্চয়তা চান। এছাড়া মন্ত্রণালয়ে যে কোনো কাজে (নামের বানান সংশোধন) মুক্তিযোদ্ধাদের হয়রানি বন্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি তার।
এ মুক্তিযোদ্ধা মুক্তি সংগ্রামের সঠিক ইতিহাস সংরক্ষণের জন্য লিখেছেন ‘মুক্তিযুদ্ধে চাঁদপুর’। পাশাপাশি প্রতিবন্ধীদের সেবার জন্য লিখেছেন ‘এ গাইড টু হেলফ চিলড্রেন উইথ ডিজেবিলিটি’। প্রতিবন্ধীদের নিয়ে গবেষণামূলক প্রবন্ধ ইউরোপসহ এশিয়ার বিভিন্ন স্থানে সেমিনার এবং ওয়ার্কশপে উপস্থাপন করে সম্মান অর্জন করেছেন।
তিনি বলেন, সমন্বিত বিশেষ শিক্ষা নীতিমালা-২০০৯ অনুযায়ী নিড ও সুইড বাংলাদেশের সব প্রফেশনাল, শিক্ষক ও কর্মচারিদের চাকরির বয়স ষাট (৬০) বছর। ফলে আমার চাকরির বয়স ২০১৫ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর শেষ হয়ে যায়। এ ক্ষেত্রে আমি মুক্তিযোদ্ধা হওয়ায় আরো ২ বছর চাকরিতে থাকার সুযোগ আছে। কিন্তু আমি তা পাইনি।
২০১৫ সালের ১৫ জুন সুইড কর্তৃপক্ষের কাছে বাড়তি দুই বছর চাকরিতে বহাল থাকার জন্য আবেদন করি। সেখানে কোনো সমাধান না পেয়ে চলতি বছরের ১০ ফেব্রুয়ারি সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব বরারব একটি আবেদন করি। এখান থেকেও কোনো জবাব না পেয়ে গত ৯ মে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন করি।
তিনি আরো বলেন, ২০০৮ সালে সুইড বাংলাদেশের প্রফেশনাল, শিক্ষক, কর্মচারীরা টানা আট মাস বেতন পাননি। ওই সময় সবাইকে সঙ্গে নিয়ে কর্মচারী সমিতি গঠন করে আন্দোলন করি। পরে আমাদের দাবি সরকার মেনে নেয়।
স্বাধীনতার সময়ের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে অস্ত্র হাতে জীবন বাজি রেখে দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ি। বিজয়ের আগ মুহূর্ত পর্যন্ত ২নং সেক্টরে যুদ্ধ করি।
তিনি অভিযোগ করেন বলেন, সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে গেলেও নিরাশ হয়ে ফিরতে হয়েছে। এ বয়সে আর কতো দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হবে। আমার কি এখন সেই বয়স আছে?
মুক্তিযোদ্ধা ডা. মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, এই অবস্থায় যদি আমার মৃত্যু হলে তার জন্য দায়ী থাকবে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় ও কুচক্রীমহল। যারা সমাজের অভ্যন্তরে ঘাপটে থাকা রাজাকার ও দালাল। তারা জানে না মুক্তিযোদ্ধারা হলো গ্রামের সাধারণ মানুষের সন্তান। তারা যুদ্ধ করে লাল সবুজের পতাকা এবং বাংলাদেশের জন্ম না দিলে বড় আমলা হতে পারতো না। মুক্তিযোদ্ধারা মরবে, তবে সবাইকে সাক্ষী রেখে বীর দর্পে মরবে।
মন্তব্য চালু নেই