প্রেমের জন্য লিঙ্গ পরিবর্তন!
প্রেম কোন বাঁধা মানে না। ভালোবাসার কোন জাত, ধর্ম, বর্ণ, গোত্র নেই। কোন বাধাই ভালোবাসার টানকে আটকাতে পারে না। ভারত-পাকিস্তানের রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব দীর্ঘ দিনের। দুই দেশের এই দ্বন্দ্ব যে একমাত্র ভালোবাসাই দূর করতে পারে তা আরেকবার প্রমাণ হল।
ভারতের লক্ষ্ণৌর কথক নৃত্যশিল্পী প্রেমে মজেছেন পাকিস্তানি এক ছেলের। তাদের প্রেমকে শুধু প্রেমই বলা যায় না, তারচেয়েও বেশি কিছু। কারণ শুধু ভালোবাসার সম্পর্কটিকে সার্থক করার জন্য লিঙ্গ পরিবর্তন করেছেন ভারতীয় ওই নৃত্যশিল্পী।
ভারতের ওই নৃত্যশিল্পীর নাম গৌরব। লিঙ্গান্তরের পরে নাম রাখেন মীরা। মুম্বাইয়ের চিকিৎসক ডা. মিথিলেশ মিত্র মীরার অস্ত্রোপচারের কাজটি করেন।
মীরা টাইমস অব ইন্ডিয়াকে জানায়, ঘটনাটি পাঁচ বছর আগের। আর এর শুরুটাও হয়েছিল খুব স্বাভাবিকভাবে। তিনি স্বাভাবিকভাবেই বড় হচ্ছিলেন। এক নারীর সঙ্গে তার ভালোবাসার সম্পর্কও গড়ে উঠেছিল। কিন্তু সবকিছু বদলে যায় সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে রিজওয়ানের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার পর। মীরা তখন ‘সুফিবাদ’ নিয়ে পিএইচডি করছিলেন। রিজওয়ান নিজেও সুফি মতাদর্শের। মীরার পিএইচডির জটিল বিষয়গুলো বুঝতে সহযোগিতা করতো রিজওয়ান।
দুজনের বন্ধুত্ব তখন থেকেই শুরু। এ সময় তারা প্রচুর চ্যাট করতেন। দিন দিন তাদের ঘনিষ্ঠতা বাড়তে থাকে।
মীরা বলেন, এভাবে একটা সময় আমরা একজনের আরেকজনের জন্য তীব্র টান অনুভব করতে শুরু করলাম। তখনও আমাদের দুজনের দেখা হয়নি। আমাদের ‘বন্ধুত্ব’ একটা সময় ভালোবাসায় রূপ নেয়। আমরা দুজনই সমলিঙ্গ, কিন্তু এই ব্যাপারটি একবারের জন্য আমাদের চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায়নি। সুফিবাদেও বলা আছে, ভালোবাসা কোনো জাত, ধর্ম, বর্ণ এমনকি লিঙ্গের ভেদাভেদ মানে না।
মীরা আরও বলেন, আমাদের দুজনের চিন্তাভাবনা, ধ্যান-ধারণার মিল খুবই কম ছিল। কিন্তু অবাক ব্যাপার, আমি বুঝতেই পারিনি কখন সে আমার অনুভূতিগুলো বুঝতে শুরু করেছিল। একসময় আমাদের বন্ধন খুব গভীর পর্যায়ে চলে যায়। আত্মার আত্মীয় হয়ে উঠি আমরা। একটা সময় মনে হলো, মৃত্যু ছাড়া আমাদেরকে কেউ আলাদা করতে পারবে না। এদিকে রিজওয়ানের জন্য মেয়ে দেখা শুরু করে ওর মা। তখন মনে হয়েছিল, দুজনের কারও আত্মহত্যাই সম্পর্ককে বিচ্ছিন্ন করতে পারে। পরে ইন্টারনেটের মাধ্যমেই প্রথম লিঙ্গ পরিবর্তনের ধারণা পাই। যাতে আমাদের দুজনেরই ইচ্ছা ছিল। রিজওয়ানের সঙ্গে মীরার প্রথম দেখা হয় গত বছরের মার্চ মাসে।
মীরা তখন ডা. মিথিলেশ মিত্রের শরণাপন্ন হয়। ডা. মিত্র মীরাকে ছয় মাস কাউন্সিলিং করায়। এরপরই শুরু হয় মীরার হরমোন থেরাপি।
মীরার পরিবার লিঙ্গ পরিবর্তনের এই সিদ্ধান্তে তীব্র আপত্তি জানায়। বিশেষ করে তার অভিনেত্রী বোন অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার জন্য মীরাকে অনুরোধ করে। কিন্তু মীরা তার সিদ্ধান্তে অটল থাকে।
গত বছরের আগস্ট, সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে তার তিনবার অস্ত্রোপচার করা হয়।মীরা কবি রুমির একটি কবিতার লাইন আবৃত্তি করে বলেন, ভালোবাসার কাছে কোনো বাধাই বড় হয়ে দাঁড়াতে পারে না।
মীরা বলেন, আমার ভবিষ্যৎ নিয়ে আমার কিছু বন্ধুর খুব উৎকণ্ঠা ছিল। তাদের ভয়ের মূল কারণ ছিল, রিজওয়ান যদি প্রতারণা করে তখন আমার কী হবে?
মীরা বলেন, সৃষ্টিকর্তার প্রতি আমার সবসময়ই বিশ্বাস আছে। আমি জানি, অপ্রত্যাশিত এমন কিছু যদি ঘটেও, সেটা হবে আমার ভালোর জন্যই।
মন্তব্য চালু নেই