উখিয়ায় ইয়াবা ও মাদক ব্যবসা জমজমাট

প্রশাসনের রহস্যজনক ভুমিকার কারণে প্রকৃত ব্যবসায়ীরা ধরাছোঁয়ার বাইরে

কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার সর্বত্রে চলছে ইয়াবা ও মাদক ব্যবসা। এ ব্যবসা করে অনেকেই গাড়ি-বাড়ি ও কোটি টাকার মালিক হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। গত কয়েক বছর ধরে প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে ইয়াবা ব্যবসা করে আসছে উখিয়া উপজেলার কিছু ইয়াবা ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে এ ব্যবসায় চালিয়ে যাচ্ছে।

এ ব্যবসা করে রাতারাতি কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছে তারা। ইয়াবা এখন হাত বাড়ালেই পাওয়া যাচ্ছে পাড়ার দোকান থেকে শুরু করে মোবাইলের মাধ্যমে জায়গায় গিয়ে পৌঁছে দিচ্ছে খুচরা ব্যবসায়ীরা। ফলে দিন দিন আসক্ত হয়ে বিপথগামী হচ্ছে উঠতি ছাত্র ও যুব সমাজের তরুণ ছেলেরা। বিশেষ করে যে এলাকা দিয়ে ইয়াবা চালান আসে তাদের মধ্যে নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের তুমব্র“, বালূখালী, থাইংখালী, পালংখালীর আনজুমানপাড়া, চিংড়ি ঘের এলাকা, হাতিমোরা, টাইপালং, লাহরিরছড়া, রেজু আমতলী, পাট্টারাজিরিসহ অসংখ্যক সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে বাংলাদেশে ঢুকছে ইয়াবা ও বিভিন্ন প্রকার মাদকদ্রব্য।

এসব মাদক ব্যবসায়ীরা উখিয়া উপজেলা উল্লেখিত এলাকা সমূহে সিন্ডিকেট সদস্যদের গোপনীয় আস্তানায় মজুদ রাখার পর পরবর্তীতে চট্টগ্রাম ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে পাচার ছাড়াও স্থানীয় ভাবে উখিয়া উপজেলার ঘিলাতলী, ফলিয়াপাড়া, মৌলভীপাড়া, মহিলা কলেজ, হিজলিয়া, মালভিটাপাড়া, সিকদারবিল, ফরেষ্ট অফিস, হাজিরপাড়া, হাতিমোরা, টাইপালং, দরগাহবিল, টিএন্ডটি, কুতুপালং, কেন্দ্রীক একটি ইয়াবা চোরাচালানীর সিন্ডিকেট বেপরোয়া ভাবে খোলা বাজারে ইয়াবা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। বলতে গেলে এখন উখিয়া উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে ছদ্মা বেশে মুখোশধারী চিহ্নিত কিছু তরুণ যুবকরা ইয়াবা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। এখন ঘরে ঘরে পাওয়া যাচ্ছে ইয়াবা ট্যাবলেট। ইয়াবার এ সহজলভ্যতার কারণে ছাত্র ও যুবসমাজকে নিয়ে প্রায় উদ্বিগ্ন তাদের পরিবারের অভিভাবকরা। কারণ যে কোন মুহুর্তে তাদের ছেলেদের মাঝে ইয়াবার সংক্রমক নামক এ বিষে আক্রান্ত হওয়ার ভয়ে এলাকার সাধারন মানুষ রয়েছে চরম আতংকে।

স্থানীয় মাদক প্রতিরোধ কমিটির একাধিক সদস্যরা জানান, সীমান্তের ইয়াবা তৈরীর কারখানা গুলো থেকে উৎপাদন বন্ধ না হলে এবং দু’দেশের সীমান্ত প্রহরীদের ফাঁকি দিয়ে ইয়াবা প্রবেশ বন্ধ না হলে কোন দিনও এ কালো থাবা থেকে সমাজে তরুণ যুবকরা রক্ষা পাবে না। দেশে সুশিক্ষিত ও আদর্শ জাতি গঠনে মাদক নির্মুল করা সরকার সংশ্লিষ্টদের অত্যবশ্যকীয় জরুরী হয়ে পড়েছে।

উখিয়ার সচেতন নাগরিকদের মতে, এলাকায় চোরাচালানীরা নীরবে পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে অনেকটা ভালো মানুষ সেজে বর্তমানে ঘরে ঘরে ইয়াবার মজুদ বৃদ্ধি করছে। আবার সুযোগ বুঝে সেগুলো জেলা সদর থেকে শুরু করে দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করে দিয়ে থাকে। যার ফলে ইয়াবার করাল গ্রাসে তলিয়ে যাচ্ছে উখিয়ার যুব ও ছাত্রসমাজ। একটি সূত্রে যাদের নাম পাওয়া গেছে তাদের মধ্যে মহিলা কলেজের মৃত মোঃ আলীর ছেলে খোরশেদ আলম, ঘিলাতলী গ্রামের পান বিয়ারী মোঃ আলী ছেলে আব্বু, মৌলভীপাড়ার ছৈয়দ আকবরের ছেলে মোঃ আব্বু, হাজিরপাড়ার ছৈয়দ আহমদের ছেলে জামাল, কালা জসিম, কামাল, পুতু ওরফে পুতিয়া, হিজলিয়া গ্রামের ঠান্ডু মিয়ার ছেলে সাইফুল ইসলাম, নূরুল আলম ওরফে গাঁজা নুরু, সিকদার বিল এলাকার জয়নাল, ফলিয়াপাড়া এলাকার মোঃ আলী, ফরেষ্ট অফিস এলাকার গফুর, টাইপালং এলাকার আশু আলীর ছেলে শহিদ, সিকদার বিল এলাকার জায়নাল, ও একাধিক যুবকেরা মরণ নেশা ইয়াবা ব্যবসায় জড়িত রয়েছে বলে একটি সূত্রে জানা গেছে।

উখিয়ার কিছু অসাধু ব্যবসায়ীরা এখন কৌশল পাল্টিয়ে ঘরে ঘরে ইয়াবার মজুদ গড়ে তুলেছে। যা পাচারের অপেক্ষায় রয়েছে বলে এলাকাবাসীর অভিযোগে জানা গেছে। এছাড়াও এসব চোরাচালানীর সাথে থানা পুলিশের সাথে অলিখিত চুক্তি রয়েছে বলেও স্থানীয় কিছু গন্যমান্য ব্যক্তিরা মনে করেন।

উখিয়া বাজার ব্যবসায়ী জসিম উদ্দিন ও আব্দুর রহমান বলেন, ইয়াবার প্রচলন দীর্ঘদিনের হলেও সাম্প্রতিক সময়ে এলাকার চিহ্নিত ব্যবসায়ীরা কোটিপতি হওয়ার আশায় ঘরে ঘরে এ ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। আবার অনেকেই কোটিপতিও বনে গেছে।

এব্যাপারে জানতে চাইলে, উখিয়া থানার ওসি জহিরুল ইসলাম খান বলেন, পুলিশ মাদক প্রতিরোধে তৎপরতা আগের চেয়ে বৃদ্ধি করেছে। প্রতিনিয়ত কোথাও না কোথাও ইয়াবাসহ খুচরা ব্যবসায়ীরা আইন শৃংখলা বাহিনীর হাতে আটক হলেও প্রকৃত ব্যবসায়ীরা প্রশাসনের চোখকে ফাঁকি দিয়ে পুরোদমে ইয়াবা ব্যবসা চালিয়ে আসলেও প্রমান না থাকায় তাদেরকে আটক করা সম্ভব হচ্ছে না বলে তিনি জানান। তবে উখিয়া উপজেলাকে মাদক মুক্ত উপজেলায় পরিণত করার তার একার পক্ষের সম্ভব নয়, তবে উখিয়া উপজেলা সাধারণ মানুষরা যদি প্রশাসনকে সহযোগিতা করে তাহলে উপজেলা জুড়ে মাদক মুক্ত সমাজ গড়ে তুলা সম্ভব বলে তিনি মনে করেন।



মন্তব্য চালু নেই