প্রভাব বিস্তার করে নিম্নমানের গম খালাসের চেষ্টা

চট্টগ্রামের পর এবার মংলা বন্দরে গম খালাসের চেষ্টা করছে আমদানিকারক ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ইমপেক্স কনসালটেন্ট লিমিটেড। খাদ্য বিভাগের ওপর প্রভাব বিস্তার করে ফ্রান্স থেকে আমদানি করা খাবার অনুপযোগী ও নিম্নমানের ২১ হাজার টন গম খালাসের চেষ্টা করা হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ।

সাইপ্রাসের পতাকাবাহী এমভি পিনটেল জাহাজের স্থানীয় এজেন্ট লিডমন্ড শিপিংয়ের ম্যানেজার সৈয়দ মুরতজা আলী বাপ্পি জানান, জাহাজটিতে মোট ৫২ হাজার ৫০০ টন গম আমদানি করা হয়েছিল। চট্টগ্রাম বন্দরে ৩১ হাজার ৫০০ টন গম খালাসের পর বাকি ২১ হাজার টন গম নিয়ে জাহাজটি ১২ অক্টোবর মংলা আসে।

তিনি দাবি করেন, যে গম চট্টগ্রামে খালাস হতে পারে, সেই একই গম মংলায় খালাস হতে দোষের কি? তিনি কিছু গমের নমুনা দেখিয়ে বলেন, গমের একটু ডাস্ট বেশি, তবে খাবার অনুপযোগী নয়।

তবে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এমভি পিনটেল জাহাজটি ফ্রান্স থেকে গম নিয়ে বাংলাদেশ সীমানায় ৫/৬ মাস আগে প্রবেশ করে। ওই সময় পচা গম নিয়ে হৈচৈ শুরু হওয়ায় এবং উচ্চ আদালতের নির্দেশের কারণে জাহাজটি দীর্ঘদিন গম খালাস করতে পারেনি। কিন্তু দুই বিদেশী হত্যার পর চট্টগ্রাম থেকে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের বিদেশী বিশেষজ্ঞ দেশে ফিরে গেলে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে রফাদফার পর চট্টগ্রামে গম খালাস করে মংলা বন্দরে জাহাজটি নিয়ে আসা হয়।

এমভি পিনটেল জাহাজের স্থানীয় এজেন্ট লিডমন্ড শিপিং এজেন্টের পরিচালক আক্তার হোসেন গমবোঝাই জাহাজটি ৫/৬ মাস আগে বাংলাদেশে প্রবেশের কথা স্বীকার করেন। তিনি জানান, জাহাজের হ্যাচের মধ্যে ৫/৬ মাস ধরে গম পড়ে রয়েছে। এভাবে থাকলে তা নষ্ট হবারই কথা।

তিনি স্বীকার করেন, ২/৩ হাজার টন গমে পোকা ধরে গেছে। তবে তিনি প্রশ্ন রাখেন, চট্টগ্রাম বন্দরে যদি ওই গম খালাস হতে পারে, তা হলে মংলা বন্দরে অসুবিধা কোথাও। তিনি জানান, ৫২ হাজার ৫০০ টন গমবোঝাই করে ৫/৬ মাস ধরে সাগরে ভাসছে জাহাজটি। এতে ১৯ ক্রু রয়েছেন, যার বেশিরভাগই জর্জিয়ার নাগরিক।

তবে আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক কাজী নূরুল ইসলাম রবিবারও জোর দিয়ে জানান, নিম্নমানের গম কোনো অবস্থাতেই খুলনায় খালাস করা হবে না। ওই গম মানবদেহের জন্য উপযোগী নয়, তবে পশু বা মাছের খাদ্য হিসেবে ব্যবহার হতে পারে।

রবিবার খুলনা সিএসডি খাদ্যগুদামের কেমিস্ট একরামুলের অফিসে গিয়ে দেখা গেছে, তার কক্ষ তালাবদ্ধ। তিনি ম্যানেজারের কক্ষে গেছেন। সেখানে গিয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তিনি খাদ্য চলাচল ও সংরক্ষণ কর্মকর্তার কক্ষে আছেন। ওই অফিসে গিয়ে কেমিস্টের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ হয়। তিনি জানান, তিনি খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রয়েছেন। একটু পরে অফিসে আসবেন। অফিস টাইমে অফিস বন্ধ করে বাইরে থাকার বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি ‘চুপ’ থাকেন।

গম খালাসের বিষয়ে তদারকি কমিটির সদস্য সিএসডি গোডাউনের ম্যানেজার মো. মান্নান তালুকদার জানান, কমিটির আহ্বায়ক কাজী নূরুল ইসলামের কথাই তাদের কথা। আর তাদের সরাসরি মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলতে নিষেধ করা হয়েছে।

তবে ম্যানেজারের কক্ষে থাকা কয়েকজন জানান, ওই জাহাজের গম পশু বা মাছের খাদ্য হিসেবে ব্যবহার হতে পারে। নমুনাতে দেখা গেছে বেশিরভাগ গমই নষ্ট ও পোকাযুক্ত।

তদারকি কমিটির আহ্বায়ক খুলনার আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক কাজী নূরুল ইসলাম শনিবার জানান, নিম্নমানের হওয়ায় গম গ্রহণ করা হবে না। সরেজমিনে নমুনা সংগ্রহ করে দেখা গেছে, আমদানি করা গম নিম্নমানের ও খাবার অনুপযোগী। এ কারণে তা গ্রহণে অস্বীকৃতি জানানো হয়েছে।

তিনি জানান, গমের মান পরীক্ষার ছয় সদস্যের কমিটি ১৩ অক্টোবর জাহাজে গিয়ে গম সরেজমিনে দেখে ও নমুনা সংগ্রহ করে। পরে তা পরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়।

তিনি আরও জানান, মংলায় আনা ওই গমের মূল্য প্রায় ৪৪ কোটি টাকা। ফ্রান্স থেকে আমদানি করা গম নিয়ে জাহাজটি ১২ অক্টোবর দুপুরে মংলা বন্দরে প্রবেশ করে।

প্রসঙ্গত, গমের মান পরীক্ষার ছয় সদস্যের কমিটি ১৩ অক্টোবর জাহাজে গিয়ে গম সরেজমিনে দেখে ও নমুনা সংগ্রহ করে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রভাবশালী মহলের চাপ রয়েছে পচা ও নিম্নমানের ওই গম খালাস করতে। কিন্তু গমে দৃশ্যমান ক্রটি থাকায় মংলার গম খালাস তদারকি কমিটি তা খালাস করতে অনীহা প্রকাশ করে। কিন্তু প্রভাবশালী মহলের চাপে গম পরীক্ষার জন্য ঢাকায় প্রেরণ করা হয়েছে।

ওই সূত্রের দাবি, আমদানিকারক ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ইমপেক্স কনসালটেন্ট লি. খাদ্য বিভাগের ওপর প্রভাব বিস্তার করে গম খালাসের তৎপরতা চালাচ্ছে। খুলনায় ওই প্রতিষ্ঠানের কোনো অফিস না থাকায় এবং স্থানীয় শিপিং এজেন্ট কোনো নম্বর সরবরাহ না করায় তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে মতামত গ্রহণ করা যায়নি।

এদিকে, শনিবার কয়েকটি গণমাধ্যমে মংলা বন্দরে পচা ও নিম্নমানের গমবোঝাই জাহাজ আসার খবরে স্থানীয় মহলে হৈ-চৈ শুরু হয়েছে। অনেকেই বিষয়টি জানতে স্থানীয় সাংবাদিকদের কাছে খোঁজ নিতে শুরু করেন। তাদের দাবি, মংলা বন্দরে কোনোভাবেই যেন এই গম খালাস না হয়। একই সঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দরে কিভাবে ওই গম খালাস হলে, তা তদন্ত করে দেখারও দাবি জানান তারা। দ্য রিপোর্ট



মন্তব্য চালু নেই