স্থানীয় নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী নিয়ে আরেক দ্বন্দ্ব ইসিতে

প্রথমবার দলীয়ভিত্তিতে স্থানীয় নির্বাচন করার আগে নানা জটিলতার মধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থী নিয়েও সমস্যায় পড়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

সংসদ নির্বাচনের সঙ্গে সমন্বয় রেখে স্থানীয় সরকারেও দলীয় প্রতীকে নির্বাচনের ক্ষেত্রে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের জন্য ১ শতাংশ ভোটারের তালিকা দেওয়ার বিধান রাখা হবে কি না, তা নিয়ে এই দ্বন্দ্ব।

একজন নির্বাচন কমিশনার এই বিধান স্থানীয় নির্বাচনেও রাখার পক্ষে মত দিয়েছেন।

তবে ইসি কর্মকর্তারা বলছেন, স্থানীয় নির্বাচনে অনেক পদ হওয়ায় স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে পারে লাখের বেশি। তাদের সমর্থনসূচক তালিকা যাচাই করা হবে খুবই কঠিন।

স্থানীয় সরকার নির্বাচন দলীয় ভিত্তিতে করতে আইন সংশোধনের প্রস্তাব গত সোমবার মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত হয়। পৌরসভা নির্বাচন কাছাকাছি বলে অধ্যাদেশ জারি করে সংশোধিত আইন কার্যকর করার কথা বলা হয়েছে।

আগামী ডিসেম্বরে পৌরসভা নির্বাচন করতে অধ্যাদেশের গেজেট পাওয়ার পর বিধিমালা সংস্কারে হাত দেওয়ার কথা জানালেও বিভিন্ন বিষয়ে আগাম করণীয় ঠিক করতে ইসিতে চলছে ব্যস্ততা।

জাতীয় সংসদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে হলে নির্বাচনী এলাকার ১ শতাংশ ভোটারের লিখিত সমর্থন নিয়ে তা ইসিতে জমা দিতে হয়।

নির্বাচন কর্মকর্তারা বলছেন, সংসদ নির্বাচনে মাত্র ৩০০ আসনে দলীয় প্রার্থীর বাইরে স্বতন্ত্র প্রার্থী থাকে শ’ দেড়েক। কিন্তু স্থানীয় নির্বাচনে তিনটি পদে নির্বাচন হয় প্রতিটি ইউনিটে। সংসদের দেড়শ’ গুণ পদে ভোট করতে হবে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেই। এক্ষেত্রে হাজার হাজার স্বতন্ত্র প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের আগে সমর্থনসূচক তালিকা যাচাই করা বেশ কঠিন হবে।

স্থানীয় সরকারে পৌরসভা রয়েছে ৩২৩টি ও ইউনিয়ন পরিষদ রয়েছে ৪ হাজার ৫৫৩টি। এতে গড়ে অন্তত ৯টি ওয়ার্ড বিবেচনায় নিলে প্রায় অর্ধ লক্ষ পদে (মেয়র/চেয়ারম্যান, সাধারণ ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর/সদস্য) ভোট হবে। যেখানে প্রায় ৫ হাজার পদ পৌরসভায়, বাকি ৪৫ হাজার পদ থাকবে ইউপিতে।

“এতে অন্তত ২ জন করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হলেও লাখের উপরে প্রার্থী হবে। এত জনের সমর্থনের তালিকা যাচাই করা খুবই কঠিন হবে,” বলেন এক কর্মকর্তা।

স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকদের ভোটার নম্বর, ঠিকানা, মোবাইল, ভোটারের স্বাক্ষর ও টিপ সই দিতে হয়। তালিকা থেকে দ্বৈবচয়নের ভিত্তিতে ১০ জনকে চিহ্নিত করে যাচাই করা হয়। কোনো ধরনের গরমিল পেলে বাতিল হয় প্রার্থীর মনোনয়নপত্র।

স্থানীয় নির্বাচনেও এই বিধান রাখতে কোনো সমস্যা দেখছেন না জ্যেষ্ঠ নির্বাচন কমিশনার আবদুল মোবারক।

তিনি বলেন,“স্থানীয় সরকারে আগে তো দলীয় প্রার্থী ছিল না। এখন দলীয় প্রতীক থাকবে, তাহলে স্বতন্ত্রের জন্যও শর্ত রাখতে হবে।

“তবে সব কিছু নির্ভর করবে অধ্যাদেশ হলে। আইন হাতে পাওয়ার পর সে আলোকে বিধি করতে ও নির্বাচন পরিচালনায় কোনো অসুবিধা নেই।”

জোটগতভাবে নির্বাচন করতে সংসদের মতো রাজনৈতিক দলগুলো তাদের প্রতীক ব্যবহারে অন্যদের সুযোগ দিলে প্রার্থী সংখ্যাও কম হবে বলে মনে করেন এ নির্বাচন কমিশনার।

তবে মাঠ কর্মকর্তারা স্বতন্ত্র প্রার্থিতায় ১ শতাংশ সমর্থন রাখার বিপক্ষে।

রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ইসির উপ সচিব পর্যায়ের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, বাছাইয়ের নির্ধারিত দিনে দলীয় প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র দ্রুত শেষ করা যায়। কিন্তু স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থন যাচাই ও মনোনয়নপত্র বাছাই অনেক কঠিন কাজ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন নির্বাচন কর্মকর্তা বলেন, সংসদে স্বল্প মনোনয়নপত্র নিয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তাকে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও নির্বাচন কর্মকর্তারা এ কাজে সহায়তা করে।

“কিন্তু স্থানীয় নির্বাচনে উপজেলা-থানা পর্যায়ে শ’ শ’ মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই করার লোক পাওয়া মুশকিল হবে। একজন নির্বাচন কর্মকর্তার সঙ্গে উপজেলার বিভিন্ন কর্মকর্তাকে যুক্ত করলে এ কাজ আরও জটিল হয়ে পড়বে।”

নির্বাচন কর্মকর্তাদের অনেকেই বলেন, স্বতন্ত্র প্রার্থীর জন্য সংসদ নির্বাচনের মতো কোনো বিধান না রাখাই ভালো হবে। বিডিনিউজ২৪



মন্তব্য চালু নেই