প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে মামলা করতে আদালতে আর্জি
প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার বিরুদ্ধে মানহানি মামলা করতে খুলনার আদালতে আর্জি দিয়েছেন আইনজীবী এম এম তৌহিদুজ্জামান।
বিচারক ফারুক ইকবালের এজলাসে বুধবার সকালে আর্জি দাখিল করা হয়। আদালত এদিন বিকেল ৩টায় শুনানির সময় নির্ধারণ করেন। কিন্তু ওই সময় আদালত না বসায় আর্জির ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
বাদী এবং তার পক্ষের একদল আইনজীবী বিকেলে ৩টা থেকে ৫টা পর্যন্ত আদালতে অপেক্ষা করে ফিরে যান।
মামলার আর্জিতে বাদী অভিযোগ করেন, ১৭ মে (রবিবার) কয়েকটি পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয় যে, হিউম্যান রাইটস এ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ নামক একটি এনজিও কর্তৃক আয়োজিত সেমিনারে শত শত ইলেক্ট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিক, সুধীজনসহ উক্ত সংগঠনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপস্থিতিতে সুরেন্দ্র কুমার সিনহা প্রধান অতিথি হিসেবে মন্তব্য করেন যে, ‘শুধুমাত্র আইনজীবীর ক্রটির কারণে ৬০-৭০ ভাগ মামলায় বিচারপ্রার্থীরা হেরে যান।’ এ ছাড়াও প্রধান বিচারপতি দেশের সমগ্র আইনজীবীকে নিয়ে বিভিন্ন নেতিবাচক মন্তব্য করেন।
আর্জিতে বাদী আরও উল্লেখ করেন, ‘গত ৮-১০ বছর ধরে কিছু স্বার্থান্বেষী মহল দেশ ও বিদেশের বিভিন্ন স্থানে বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থাকে হেয়প্রতিপন্ন ও ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে বিচার ব্যবস্থা সম্পর্কে নেতিবাচক প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। এর ধারাবাহিকতায় প্রধান বিচারপতি সজ্ঞানে সম্পূর্ণ ইচ্ছাকৃতভাবে পূর্বপ্রস্তুতি নিয়ে সেমিনারে বক্তব্য রেখে স্বার্থান্বেষী মহলের পারপাস সার্ভ করার জন্য আইনজীবী সম্প্রদায় ও বিচার ব্যবস্থা সম্পর্কে চরম নেতিবাচক মন্তব্য করে উক্ত স্বার্থান্বেষী জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রকারীদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে মন্তব্য করেছেন, যা দেশের বিচার ব্যবস্থা ধ্বংস করে দেওয়ার জাতীয় ও আন্তর্জাতিক যড়যন্ত্রের অংশবিশেষ। আইনজীবীদের কাজ বিচারকার্য পরিচালনা ও সঠিক সিদ্ধান্তে উপনীত হতে বিজ্ঞ আদালতকে সহয়তা করা। আর বিচারকের কাজ হচ্ছে সঠিক সিদ্ধান্ত বা রায় প্রদান করা। সে জন্য তর্কের খাতিরে যদি ধরে নেওয়া হয়, ৭০ ভাগ মামলায় যে ভুল সিদ্ধান্ত হয় এর জন্য আইনজীবীরা কোনোভাবে দায়ী নহে। আইনজীবীগণ সরকারি কোনো সাহায্য-সহযোগিতা, অনুদান বা বেতন ভাতা ছাড়াই দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখছেন।’
বাদী তার তিন পৃষ্ঠার আর্জির শেষ প্যারায় বলেন, “গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলদেশের সংবিধানের পার্ট-৬ চ্যাপ্টর-১ আর্টিকেল ১১৬ [এ]-এ বলা হয়েছে, ‘বিচারকগণ বিচারকার্য পালনের ক্ষেত্রে স্বাধীন।’ কিন্তু সংবিধানের কোথাও বিচারকগণ ব্যক্তিগত কোনো অপরাধ করলে বিচার হবে না— এমন কিছু বাংলাদেশের সংবিধানের কোথাও উল্লেখ নেই। অতএব বাদীর এই নালিশি আবেদনটি গ্রহণ করে আসামির বিরুদ্ধে ৫০০ ধারায় সমন ইস্যু করতে মর্জি হয়।”
আর্জিতে বাদীসহ আরও পাঁচজনকে সাক্ষী দেখানো হয়েছে। বিবাদীর ঠিকানায় প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা, পিতা : ললিত মোহন সিনহা, স্থায়ী ঠিকানা : তিলকপুর, থানা : কমলগঞ্জ, জেলা : মৌলভীবাজার উল্লেখ করা হয়েছে।
বাদী এম এম তৌহিদুজ্জামান দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘আর্জি দিয়েছি। শুনানি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আদালত না বসায় শুনানি হয়নি। আমরা এখন আদালতের পরবর্তী সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছি।’
খুলনা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) কাজী শাহীন এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘আদালতে একজন আইনজীবী প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে আর্জি দিয়েছেন। যে কেউ ক্ষুব্ধ হয়ে আর্জি দাখিল করতে পারেন। তবে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার আদালতের।’
আদালতের প্রশাসনিক কর্মকর্তা কাজী শামিম বলেন, ‘আর্জি দাখিলের কথা শুনেছি। আদালতের আদেশ না পাওয়া পর্যন্ত এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করা সমীচীন হবে না।’
মন্তব্য চালু নেই