প্রধানমন্ত্রীর কাছে একটাই অনুরোধ, একদিন মালিবাগ হয়ে সচিবালয়ে যাবেন…

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনাকে বলছি। আপনি দেশের প্রধান। আমাদের সেবক। জনমানুষের প্রতিনিধি। দেশের উন্নয়নে আপনার অনেক ভূমিকা রয়েছে। আপনি আমাদের সেবা দেন। কিন্তু আমরা যে সেবা পাচ্ছি তা আপনি হয়তো সহ্য করতে পারবেন না। না পারলেও আপনাকে একবার বলছি। অন্তত পক্ষে আপনার অফিসে (গণভবন থেকে সচিবালয়) যাওয়ার রুটটা একবার পরিবর্তন করে মগবাজার-মালিবাগ-শান্তিনগর পথ দিয়ে আসুন। দেখে যান আমরা কী সেবা পাচ্ছি। আর সে সেবা কতো যে যন্ত্রণার!

তীব্র ক্ষোভ, হতাশা আর অভিমান করেই এমন কথাগুলো বলেন মগবাজার-মালিবাগ ফ্লাইওভারের নিচে কাদামাটিতে আটকে পড়া বৃদ্ধ রিকসাচালক আনোয়ার মিয়া। জামা-কাপড় গুটিয়ে পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়া অপর এক পথচারী হেসে উঠে বলেন, ‘এসব বলে লাভ নেই। উনারা এমন অবস্থার কথা ঠিকই জানেন। তাইতো এ পথ দিয়ে আসবেন না। আসলে সাদা কাপড়ে কাদামাটি লেগে যাবে। যারা জনগণের টাকায় নিয়মিত বিলাশিতা করেন তারা কাদামাটির যন্ত্রণা বুঝবেন কীভাবে?’

শুধু আনোয়ার মিয়া আর অভিমানী এই পথচারী নয়, তাদের মতো এমন ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে রাজধানীর অতিগুরুত্বপূর্ণ এ পথের যাত্রী সাধারণ, চালক ও স্থানীয় বাসিন্দাদের মাঝে। এখন আর এখানে বৃষ্টি হতে হয় না, সবসময়ই পানি ঠেলে চলতে হয় এ রাস্তা ধরে। একটু বৃষ্টি হলে তো কথাই নেই। অচল হয়ে পড়ে রাজধানীর অতিব্যস্ততম এলাকা মগবাজার, মৌচাক, মালিবাগ, চৌধুরীপাড়া, রাজারবাগ, শান্তিনগরের রাস্তাটি।

যানজট নিরসনে এ রাস্তাটির উপর দিয়ে হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে দীর্ঘ ৮ দশমিক ২৩ কিলোমিটার ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হচ্ছে। কিন্তু প্রকল্পটি বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠানের অবহেলার কারণে তীব্র যানজট ও দুর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে এ প্রকল্প এলাকার বাসিন্দাদের। রাস্তায় চলাচলকারী যানবাহনগুলো বিভিন্ন স্থানে খানাখন্দকে আটকে পড়ার ফলে তৈরি হয় ভয়াবহ জট।

বর্ষা মৌসুমে এ এলাকায় চলাচলকারীদের ভোগান্তি নতুন না হলেও ফ্লাইওভারটি নির্মাণের কারণে এটি বেড়েছে বহুগুণ। ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকার পরও গন্তব্যে পৌঁছতে না পেরে বাধ্য হয়ে জামা-কাপড় গুটিয়ে জুতা হাতে নিয়ে হাঁটুপানি ও কাদামাটি পারি দিতে হয় অনেককেই। তীব্র যানজটের কবলে পড়তে হয় এখানকার যাত্রীদের। অপরিকল্পতভাবে খানাখন্দক, যত্রতত্র মাটি রাখা ও নিয়মিত রাস্ত পরিষ্কার না করার কারণেই রাস্তায় হাঁটু পরিমাণ পানি আর কাদামাটির সৃষ্টি হয়।

তবে রাস্তাগুলোকে যানবাহন চলাচলের উপযোগী করে রাখতে সংশ্লিষ্টদেরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। রাজধানীর এ গুরুত্বপূর্ণ স্থানটিতে চলমান ফ্লাইওভার নির্মাণের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা মেরামতেরও নির্দেশ দিয়েছেন যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। সে কারণে অবশ্য রাতের দিকে রাস্তা আটকিয়ে কয়েকজন শ্রমিক রাস্তার উপর হাত ‘নাড়িয়ে’ চলে যায়। কিন্তু রাস্তা যেমন ছিল তেমনই থাকে।

ফ্লাইওভার নির্মাণকাজের ব্যবস্থাপনায় অনিয়মের কারণেই দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে রাজধানীবাসী। এমন মন্তব্যই ভুক্তভোগীদের। একই সঙ্গে ঢাকা ওয়াটার অ্যান্ড সুয়ারেজ অথরিটি (ওয়াসা) ও রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) গাফিলতির অভিযোগও রয়েছে। ভোগান্তি দূর করতে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দৃষ্টি আকর্ষণও করা হয়েছে বেশ কয়েকবার। কিন্তু তারা যে সরকারি কর্মকর্তা! -বাংলামেইল



মন্তব্য চালু নেই