প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনায় ফ্রান্সে হত্যাযজ্ঞ
জাতীয় দিবসে ফ্রান্সের নিস শহরের কাছে সমুদ্র সৈকতে জড়ো হয়েছিলেন বিদেশি পর্যটকসহ উৎসুক হাজারো মানুষ। বৃহস্পতিবার (১৪ জুলাই) রাতের এ উৎসব আয়োজনে উপস্থিত হাজারো মানুষ উপভোগ করছিলেন জমকালো আতশবাজি।
আকস্মিক চারদিকে হুড়োহুড়ি, দৌড়াচ্ছেন লোকজন এদিক-ওদিক। বিকট শব্দ করে বৃহদাকায় যন্ত্রদানবের মতো কিছু একটা এগিয়ে আসছিল জনসমাগমের দিকে, প্রথমে বোঝা যাচ্ছিল না আওয়াজ করা বস্তুটা কী। পরে দেখা গেল, ওটি একটি ভারী ট্রাক। সঙ্গে গুলির শব্দ। সন্ত্রস্ত মানুষ আশ্রয়ের খোঁজে অনুষ্ঠান থেকে পালাচ্ছেন ঊর্ধ্বশ্বাসে আর চিৎকার করছেন।
দৌড়ে আনেকে আশপাশের হোটেল, রেস্তোঁরায় কোনোমতে ঠাঁই নিতে পেরেছেন, অনেকে গুলিবিদ্ধ হয়ে ছটফট করছেন, হেলফ হেলফ বলে চেঁচাচ্ছেনও অনেকে। ভারী ওই যন্ত্রদানবের চাকায় পিষ্ট হয়ে নিষ্প্রভ হয়ে গেছেন অনেকে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনায় হামলাস্থলের অবস্থা ছিল মর্মস্পর্শী। আশপাশের হোটেলের ব্যালকনি, রেস্তোঁরা থেকে তারা ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞের এ দৃশ্য দেখেছেন এবং সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন। মার্কিন টেলিভিশন সিএনএন প্রতিনিধিদের বর্ণনায় কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শীর কথা শুনিয়েছে।
রাতের ওই হামলায় প্রাণ হারান ৮৪ জন, আহত শতাধিক।
ডমিনিক মলিনা ও তার স্বামী টনি পাশের হোটেলে ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে ছিলেন। সঙ্গে ছিল এ দম্পতির ১৪ বছরের কিশোর ছেলেও।
হঠাৎ আওয়াজ শুনে তাকালেন সামনে, দেখলেন ভারী একটি ট্রাক উৎসবস্থলের দিকে এগোচ্ছে। ‘আমি ছেলেকে সজোরে জড়িয়ে ধরলাম এবং তার চোখে হাত রাখছিলাম, যেন সে ওই বর্বরতা দেখতে না পায়।’ ওই অবস্থা দেখে ছেলে সত্যি ভয় পেয়েছে বলে জানালেন ডমিনিক মলিনা। যোগ করলেন, এ ধরনের বিভৎসতা মানুষকে যেন দেখতে না হয়।
‘ট্রাকের বিকট শব্দ শুনছিলাম এবং দেখতে দেখতে বিশালকায় ট্রাকটি হাজারো মানুষকে চাপা দিয়ে সামনে এগোচ্ছিল। মানুষের চিৎকারে সঙ্গে গুলি ও ট্রাকের শব্দে নারকীয় এ পরিবেশ সৃষ্টি হয় সেখানটায়। এ সময় চারদিকে গোলাগুলির শব্দ। কিছুক্ষণের মধ্যে সব মিয়িয়ে গেল। এরপর সন্ত্রস্ত মানুষের কান্না, আহতদের গোঙানি, চিৎকার শোনা যাচ্ছিল চারদিকে।’
ডমিনিক মলিনার স্বামী টনি জানান, অন্তত ১০ মরদেহ নাস্তায় পড়ে থাকতে দেখা গেছে। স্বজনেরা মরদেহ জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কাঁদছিল। উদ্ধারকর্মীরা এসে মরদেহ কাপড় দিয়ে দেয় এবং সরিয়ে নিতে শুরু করে।
পল দেলানি জাতীয় দিবসের জমকালো আয়োজনে আতশবাজি উপভোগ করতে সঙ্গীকে নিয়ে গিয়েছিলেন সমুদ্রপাড়ে। সঙ্গীর হাতে হাত রেখে অন্যদের অনুসরণ করে হাঁটছিলেন দুজন। তাদের মনোযোগের কেন্দ্রে ছিল জমকালো আতশবাজি। গানের শব্দ এত উচ্চস্বরে ছিল যে, বুঝতে পারেননি পাশে কী ঘটছিল।
জনসমাগমস্থলের দিকে ধেয়ে আসতে থাকা ভারী ট্রাকের অস্তিত্ব পল দেলানি দেখতে না পেলেও তার সঙ্গী দেখেছেন। তার নজরেও এসেছে বিষয়টি। এ সময় তারা দেখতে পান যে, উপস্থিত অনেকে ঊর্ধ্বশ্বাসে দৌড়াচ্ছেন এদিক-ওদিক। চিৎকার, চেচাঁমেচি করছেন এবং কাঁদছেন। অনেকে শিশুদের কোলে, কাঁধে নিয়ে দৌড়াচ্ছেন আশ্রয়ের খোঁজে। এ দৃশ্য ছিল ‘অবিশ্বাস্য’, জানান দেলানি।
মন্তব্য চালু নেই