কলকাতায় ঠোঁটে ঠোঁট রেখে ব্যারিকেড
প্রকাশ্য চুমুর জয়গান গাইলেন তসলিমা
ভারতে ‘ঠোঁটে ঠোঁট ব্যারিকেড’ আন্দোলন চলছে। তরুণ-তরুণীদের প্রকাশ্য চুমু এবং জনসমক্ষে ঘনিষ্ট হওয়ার অধিকার দাবিতে এ আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছে কেরালা থেকে কলকাতা। গতকাল বৃহস্পতিবার কলকাতার রাস্তায় শত শত তরুণ-তরুণী চুমু খেয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছে। এখন প্রতিবাদ সমাবেশ থেকে পুলিশ বেশক’জন আটক করেছে বলেও খবর পাওয়া গেছে।
এই ঘটনার পর এই আন্দোলনের সমর্থনে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন বাংলাদেশের বহিষ্কৃত নারীবাদী লেখিকা তসলিমা নাসরিন। ভারতীয় মূল্যবোধকে বুড়ো আঙ্গুল দেখানো এ প্রকাশ্য চুমু আন্দোলনের জয়গান গেয়েছেন তিনি।
চুমুর মতো চমৎকার জিনিস আর হয় না. দিন দুপুরে চুমু খাব, প্রকাশ্যে খাব, একশ লোককে দেখিয়ে চুমু খাব — এরকম একটি আন্দোলন চলছে এখন ভারতে. কেরালা থেকে কলকাতায়, ছেলে মেয়েদের রাস্তায়-নদীর পাড়ে-পার্কে ঘনিষ্ঠ হয়ে বসতে দেখলেই পুলিশ এসে ঝামেলা করে. প্রেম করা যেন অন্যায়. ভালবাসা টালবাসা চলবে না. প্রেম, চুমু, হাত ধরে হাঁটা–এসব নাকি অশ্লীল. যৌনতা অশ্লীল. ভায়োলেন্স কি অশ্লীল? আমার মনে হয় না কেউ বলবে ভায়োলেন্স অশ্লীল.
রাস্তা ঘাটে মানুষকে অসম্মান কর, অকথ্য ভাষায় গালি দাও, যৌন হেনস্থা কর, মারো, গরিব পকেটমারকে সবাই মিলে মারতে মারতে মেরেই ফেল, কিছুই অশ্লীল নয়, অশ্লীল সেই দৃশ্য যখন তুমি ভালোবেসে কারো হাত স্পর্শ করবে, ভালোবেসে কারো ঠোঁটে চুমু খাবে,ভালবাসা অপরাধ, চারদিকে ঘৃণার জয়জয়কার।
কলকাতায় ঠোঁটে ঠোঁট রেখে ব্যারিকেড
তথাকথিত নীতি নৈতিকতাকে বুড়ো আঙ্গুল দেখালো কলকাতার উঠতি বয়সী ছেলে-মেয়েরা। প্রকাশ্য রাজপথে ঠোঁটে ঠোঁট রেখে অভিনব প্রতিবাদ জানালো তারা। এ প্রতিবাদ ছড়িয়ে পড়ে কোচি থেকে কলকাতা। কফিহাউস থেকে এইট-বি বাস স্ট্যান্ডের মোড় পর্যন্ত যগলরা ঠোঁটে ঠোঁট রেখে ব্যারিকেড রচনা করলো।
কেরলের আহ্বানে স্বতঃস্ফূর্ত সাড়া দেয় মাইকেল মধূসুদন দত্তের গুরু ক্ষণজন্মা অকাল প্রয়াত দার্শনিক সাহিত্যিক ডিরোজিওর শহর কলকাতা। হেনরি লুই ভিভিয়ান ডিরোজিও (জন্ম: ১৮ এপ্রিল, ১৮০৯ – মৃত্যু: ২৬ ডিসেম্বর, ১৮৩১) ছিলেন ইউরেশীয় কবি। যুক্তিবাদী চিন্তাবিদ ও শিক্ষক তরুণ ডিরোজিও মাত্র সতেরো বছর বয়সে কলকাতা হিন্দু কলেজের শিক্ষক নিযুক্ত হন।
বুধবার দুপুর ২টায় কলেজ স্ট্রিট কফি হাউসের সামনে প্রতিবাদ সভার উদ্যোক্তা ছিলেন প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের সদ্য সাবেক শিক্ষার্থী দেবজিৎ ঠাকুর। প্রেসিডেন্সি ছাড়াও শহরের সব কলেজের ছাত্রছাত্রীরা এতে অংশ নেয়। কলেজ স্ট্রিট থেকে হাঁটা শুরু করে প্রতিবাদীরা পৌঁছান স্টার থিয়েটারের সামনে। তাদের অধরবন্ধনীতে সোচ্চার হয়ে ওঠে প্রতিরোধের শপথ।
ঘটনার সূত্রপাত গত রোববার। কোচির এক রেস্তোরাঁয় দুই যুবক-যুবতীর চুমু খাওয়ার ভিডিও কেরলের এক টিভি চ্যানেলে সম্প্রচার হয়। এর জেরে বিজেপির স্বেচ্ছাসেবকরা সেখানে ভাঙচুর চালায়। সমাজ সংস্কারের নামে নীতি-পুলিশের এই তাণ্ডবের প্রতিবাদে মুখর হয় কোচির তরুণরা। ব্যক্তি স্বাধীনতায় অনধিকার হস্তক্ষেপের সমালোচনায় সোচ্চার হয় তারা। কোচির সমুদ্র সৈকতে ‘কিস অব লাভ’ আন্দোলনের ডাক দেয় একটি সংগঠন। সেই জমায়েতে লাঠিচার্জ করে পুলিশ। গ্রেপ্তার করা হয় উদ্যোক্তাদের।
এদিকে সামাজিক মাধ্যমের কল্যাণে এই চুমু আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছে ভারতজুড়ে। অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তিও এর পক্ষে কথা বলছেন। এক প্রকাশন সংস্থার কর্ণধার জুবান বুতালিয়া এ প্রসঙ্গে মন্তব্য পোস্ট করেন, ‘প্রকাশ্যে চুমু খাওয়া নিন্দনীয়, অথচ প্রস্রাব করা অনুমোদিত। এর কারণ কি ভারতীয় সংস্কৃতিতে জনসমক্ষে অণ্ডকোষ উন্মুক্ত করা দোষণীয় নয় বলে?’
মন্তব্য চালু নেই