প্রকাশ্যে লন্ডনের রাস্তায় অপদস্থ হলেন মুসলিম নারী

লন্ডনের রাস্তায় হিজাব পরার কারণে অপদস্থ হলেন এক মুসলিম নারী। দুই শ্বেতাঙ্গ বুধবার রাত সাড়ে আটটার দিকে তার ওপর হামলা চালায়। তারা তার হিজাব খুলে নেয়ার চেষ্টা করে। এ সময় তাকে তারা মাটিতে ফেলে দেয়। হিজাব ধরে মাটিতে টানতে থাকে।

এ ঘটনাকে লন্ডনের অনলাইন দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইসলামবিরোধী ভয়াবহ আক্রমণ হিসেবে উল্লেখ করেছে। ঘটনাটি ঘটেছে লন্ডনের চিংফোর্ডের ওল্ড চার্চ রোডে একটি তুর্কি রেস্তরাঁর বাইরে। প্রকাশ্য স্থানে। ওই সময় ওই নারী হিজাব পরে সেখানকার জনপ্রিয় ও ব্যস্ত শপিং এলাকার রাস্তা দিয়ে হাঁটছিলেন। মেট্রোপলিটন পুলিশ বলেছে, এ সময় কোনো প্ররোচনা ছাড়াই দুই শ্বেতাঙ্গ টিনেজার তার ওপর হামলা চালায়। তারা ওই নারীর হিজাব খুলে নেয়ার চেষ্টা করে।

এরপর তাকে রাস্তায় ফেলে দেয়। টানতে থাকে হিজাব ধরে। এভাবে কতক্ষণ তাকে অপদস্থ করার পর তারা ঘটনাস্থল থেকে পালায়। পার্শ্ববর্তী একটি তুর্কি রেস্তরাঁর এক ওয়েটার বলেছেন, তাদের রেস্তরাঁর বাইরে একটি চেয়ারে বসার চেষ্টা করছিলেন ওই নারী। এ সময় তিনি কাঁপছিলেন। চেয়ারে বসার জন্যও যেন শক্তি ছিল না তার। তিনি অনেক চেষ্টা করে বসার চেষ্টা করলেন। ওই ওয়েটার বলেছেন, আমরা ভেবেছিলাম তিনি আমাদের একজন কাস্টমার। তাই আমরা বাইরে গিয়ে তার কাছে জানতে চাই, তার কিছু লাগবে কিনা। কিন্তু দেখতে পাই তিনি থর থর করে কাঁপছেন। আর কাঁদছেন।

এ সময় তিনি তার ওপর চালানো হামলার বর্ণনা দেন। এ সময় তাকে ভীষণ হতাশ দেখা যাচ্ছিল। তিনি আমাদের রেস্তরাঁর ভেতর বসে জরুরি নম্বর ৯৯৯ এ কল করে অপেক্ষা করছিলেন পুলিশি সাড়ার জন্য। ওই ওয়েটার আরো বলেন, আমাদের এ এলাকায় এর আগে কখনো এমন হামলার কথা শুনিনি। এই নারীর ওপর যারাই হামলা চালিয়েছে তাদের অন্য মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক আছে। তবে তারা কারা তা আমরা জানি না। এ অবস্থায় লন্ডন এম্বুলেন্স সার্ভিসের প্যারামেডিকদের ডাকা হয়। তারা তার ক্ষতের চিকিৎসা দিয়ে নিয়ে যান হাসপাতালে।

উল্লেখ্য, ২৩শে জুন বৃটেন ইউরোপীয় ইউনিয়ন ছাড়ার পক্ষে ব্রেক্সিট গণভোটের পর বৃটেনজুড়ে ঘৃণাপ্রসূত বিদ্বেষ বা হেট ক্রাইম বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানাচ্ছেন পর্যবেক্ষকরা। এমন হামলা চলানো হচ্ছে মুসলিম, ইহুদি, অভিবাসী ও এলজিবিটি সম্প্রদায়ের মতো সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে। ন্যাশনাল পুলিশ চিপস কাউন্সিলের তথ্যমতে, ব্রেক্সিট ভোটের পরের সপ্তাহে এ জাতীয় অপরাধ বৃদ্ধি পেয়েছে শতকরা ৫৮ ভাগ। তারপর থেকে এখনো এ জাতীয় অপরাধের প্রবণতা একই রকম আছে। ইসলামবিরোধী এমন কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে একটি গ্রুপ রয়েছে। তাদেরকে বলা হয় ‘টেল মামা’।

তারা সর্বশেষ এ ঘটনাকে ভয়াবহ হিসেবে উল্লেখ করেছে। তাদের মতে, এ হামলায় যে নারী বৈষম্যহীনভাবে অপমানের শিকার হয়েছেন তা মুসলিমদের ওপর হামলা। এ সংগঠনের মুখপাত্র বলেছেন, কয়েক বছর ধরে আমাদের সংগ্রহ করা ডাটা বা তথ্য থেকে দেখা যাচ্ছে যে, রাস্তায় দৃশ্যমান মুসলিম নারীরাই বেশি হারে মুসলিমবিরোধীদের সবচেয়ে বেশি টার্গেটে পরিণত হচ্ছেন। যারা এমন হামলা চালাচ্ছে তাদের বেশির ভাগই পুরুষ। এদের বয়স ১৩ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে। রাজপথে এভাবে মুসলিমবিরোধী বিদ্বেষকে দেখা উচিত নারীদের ওপর পুরুষের নির্যাতন হিসেবে।

মেট্রোপলিটন পুলিশের এক মুখপাত্র বলেছেন, তারা যেকোনো ধরনের হেট ক্রাইম মোকাবিলা করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তারা টেল মামার সঙ্গে কাজ করছেন। একই সঙ্গে তারা কাজ করছেন জিউশ কমিউনিটি সিকিউরিটি ট্রাস্টের সঙ্গেও। সব রকম হেট ক্রাইমের অভিযোগ তদন্ত করতে ইতিবাচক পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। নির্যাতিত ও তাদের পরিবারকে সহযোগিতা দেয়া হচ্ছে। অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনার পদক্ষেপও নেয়া হয়েছে। এমজমিন



মন্তব্য চালু নেই