প্যারাগুয়ের সংসদ ভবন পুড়িয়ে দিল ক্ষুব্ধ জনতা

দুর্নীতি বন্ধ করতে না পারা ও ক্ষমতা ধরে রাখতে সংবিধান সংশোধনের উদ্যোগ নেয়ার প্রতিবাদ করেছে দেশটির সাধারণ জনগণ। এক পর্যায়ে প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে ক্ষুব্ধ জনগণ দেশটির পার্লামেন্ট ভবন পুড়িয়ে দিয়েছে।

ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ চলছিল লাতিন দেশ প্যারাগুয়েতে। এক পর্যায়ে বিক্ষোভ সহিংস রূপ নেয়। আগুন দেয়া হয় দেশটির পার্লামেন্ট বা ন্যাশনাল কংগ্রেস ভবনে। স্থানীয় সময় শুক্রবার (৩১ মার্চ) রাতে এ ঘটনা ঘটে।

ক্ষুব্ধ জনতা চলে যাওয়ার পরে দমকল বাহিনীর সদস্যরা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। দেশটিতে দীর্ঘ ৩৫ বছরের একনায়কতন্ত্র শাসনের অবসান হয় ১৯৮৯ সালে। পরে ১৯৯২ সালে দেশটিতে সংবিধান প্রণীত হয়। এতে প্রেসিডেন্টের মেয়াদকাল ৫ বছর ধার্য করা হয়। বলা হয়, এক মেয়াদের বেশি কেউ শাসন ক্ষমতায় থাকতে পারবেন না। একনায়কতন্ত্রের অভিশাপ থেকে মুক্ত হতেই এই সিদ্ধান্ত নেয় দেশটির জনগণ।

কিন্তু বর্তমান প্রেসিডেন্ট হোরাসিও কার্তেস সংবিধান সংশোধন করে এ নিয়ম তুলে দিতে চান। পুণরায় নির্বাচনে করতে সংশোধনী আনতে চান তিনি। ৩১ মার্চ সেই সংশোধনী প্রস্তাব তোলা হয় কংগ্রেসে। এর পরেই ক্ষুব্ধ জনতা ভবনমুখি হয়। ভবনে আগুন দেয়া হয়, জানালার গ্লাস ভেঙে ফেলে, লোহার গেট দুমড়িয়ে-মুচড়িয়ে ফেলে।

টেলিভিশনে দেয়া সাক্ষাৎকারে বিক্ষোভকারীরা বলেছেন, দেশটিতে দুর্নীতি হচ্ছে। তা বন্ধ করতে পারছে না সরকার। আবার ক্ষমতায় থাকার জন্য সংবিধান সংশোধন করছে…তা আমরা মানি না। এজন্য এই ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া।

শুক্রবার রাতেই এ বিল পাসে গোপন ভোট অনুষ্ঠিত হয়। দেশটির বিরোধী রাজনীতিকরা ‘গণতন্ত্রকে দুর্বল করবে’ বলে এ ভোটের তীব্র বিরোধিতা করেন। রাজপথে নেমে বিরোধিতা করেন দেশটির সাধারণ মানুষ। কংগ্রেস ভবনের সামনে জড়ো হয়ে হাজারো মানুষ বিক্ষোভে অংশ নেন। শুক্রবার দিনব্যাপী চলে বিক্ষোভ-প্রতিবাদ। রাতে গোপন ভোটের খবরে বিক্ষোভ সহিংস হয়ে ওঠে।

পুলিশের মতে, বিক্ষোভকারীরা ভাঙচুর শুরু করলে দাঙ্গা পুলিশের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ হয়। এক পর্যায়ে তারা নিরাপত্তা বেষ্টনী ভেঙে ভবনের ভেতরে ঢুকে পড়েন। কংগ্রেস ভবনের জানালা ও আসবাবপত্র ভাঙচুর করেন, আগুন লাগিয়ে দেন।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত ছবিতে ভবনের ভেতরে ও বাইরে আগুন জ্বলতে দেখা যায়। প্রায় ২ ঘণ্টাব্যাপী চলা সহিংস বিক্ষোভ দমনে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ও রাবার বুলেট ব্যবহার করে। সংঘর্ষে রাজনীতিক, পুলিশ ও বিক্ষোভকারী মিলিয়ে ঠিক কত জন আহত হয়েছেন তার পরিসংখ্যান কেউ দিতে পরছে না।

সংঘর্ষের পরে এক টুইটার বার্তায় প্রেসিডেন্ট কার্তেস এ ঘটনাকে ‘অভ্যুত্থান চেষ্টা’ বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, গণতন্ত্র সহিংসতাকে সমর্থন করে না। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ও গণতন্ত্র সমুন্নত রাখতে বর্তমান সরকার প্রয়োজনীয় সবকিছু করবে।

প্রসঙ্গত, প্যারাগুয়ের বর্তমান প্রেসিডেন্ট কার্তেস এর বয়স ৬০ বছর। ২০১৩ সালের ১৫ আগস্ট প্যারাগুয়ের প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন। তিনি দেশটির কলোরাডো দলের নেতা। ২০১৮ সালের আগস্টে তার মেয়াদ শেষ হবে। পুণরায় নির্বাচনে অংশ নেয়ার জন্য তিনি সংবিধান সংশোধন করার উদ্যোগ নিয়েছেন।



মন্তব্য চালু নেই