পুলিশের নজরে ‘বড়ভাই’, সন্ধান মিলেছে
ইতালির নাগরিক তাভেল্লা সিজার হত্যাকাণ্ডে তিন খুনিসহ চারজনকে আটকের পর সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বক্তব্যে জানিয়েছেন, আটককৃতরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে একজন কথিত ‘বড় ভাইয়ের’ নির্দেশে এ খুন করা হয়েছে এমন কথা স্বীকার করেছেন। তারা (আটককৃতরা) বড় ভাইয়ের নামও বলেছেন। তদন্ত করে এ ব্যাপারে নিশ্চিতও হওয়া গেছে।
রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা আছে কি না সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘অকাট্য প্রমাণ, বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ না পেয়ে বলতে পারছি না। নিশ্চিত হয়েই রাজনৈতিক দলের সম্পৃক্ততার কথা বলা হবে। তবে যারা দেশকে অস্থিতিশীল করতে চান, জানুয়ারি থেকে ৯২ দিন যারা অবরোধ ডেকে মানুষ পুড়িয়ে মেরেছেন তাদের এর সঙ্গে যোগসূত্র আছে কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’
এদিকে তাভেল্লা সিজার খুনের সঙ্গে বাড্ডার বিএনপি নেতা সাবেক ওয়ার্ড কমিশনার আবদুল কাইয়ুম জড়িত থাকার তথ্য পাওয়ার পরপরই তার ছোট ভাই আবদুল মতিনকে আটক করা হয়েছে বলেও জাতীয় দৈনিকে খবর প্রকাশ করা হয়েছে। খবরে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সূত্রের বরাত দিয়ে আরো বলা হয়েছে, ‘বাড্ডার বিএনপি নেতা কাইয়ুম দীর্ঘ ১০ মাসেরও বেশি সময় ধরে মালয়েশিয়ায় পালিয়ে আছেন। মূলত সেখানেই বিদেশি নাগরিক হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। উদ্দেশ্য ছিল এ ধরনের হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে সরকারের প্রতি ভেতরে ভেতরে ক্ষুব্ধ প্রভাবশালী দেশগুলোকে আরও বিক্ষুব্ধ করে তোলা। একইসঙ্গে দেশের মধ্যেও সরকারকে বেকায়দায় ফেলে দেয়া।’
মঙ্গলবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘সরকার কোনো কিছু আড়াল করছে না। জজমিয়া নাটক হবে না। আসামি নজরদারিতে, বিদেশে থাকলে ইন্টারপোলের মাধ্যমে দেশে আনা হবে।’
দুই বিদেশি হত্যা পৃথক লোকজন করলেও মোটিভ একই উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘গোয়েন্দারা হত্যাকাণ্ডের রহস্যের নানা দিক উদঘাটন করেছেন। এখন সব মিলিয়ে দেখার জন্য বিলম্ব হচ্ছে। দু-একদিনের মধ্যে বিস্তারিত জানানো হবে।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘দেশকে সন্ত্রাসী রাষ্ট্রে পরিণত করার জন্য দেশি-বিদেশি চক্র ষড়যন্ত্র করছে। এই ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে এই দুই বিদেশি নাগরিককে খুন করা হয়েছে। এ হত্যাকাণ্ডে শুধু বড়ভাই নয়, রাজনীতির সঙ্গে জড়িত এমন অনেকেই সম্পৃক্ত রয়েছে। ইতিমধ্যে চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্যদেরও শিগগিরই গ্রেপ্তার করা হবে।’
গতকাল সংবাদ সম্মেলনে আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, ‘খুনিদের টার্গেট তাভেল্লা সিজার ছিলেন না। যে কোনো হোয়াইট বা ফরেনারকে হত্যা করাই ছিল তাদের উদ্দেশ্য। আর এ নির্দেশ দিয়েছেন একজন কথিত ‘বড়ভাই’। নির্দিষ্ট টাকায় তারা ভাড়াটে হিসেবে খুন করেন। অর্ধেক টাকা তারা পেয়েছেন, বাকি অর্ধেক তারা এখনো পাননি। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটককৃতরা এমন কথা স্বীকার করেছেন। তদন্ত করেও এ ব্যাপারে সুনিশ্চিত হওয়া গেছে।’
এক প্রশ্নের জবাবে ডিএমপি কমিশনার আরো বলেন, ‘আমরা অনুমান নির্ভর হয়ে বলছি না। তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে এবং প্রযুক্তি ব্যবহার করে সুনিশ্চিত হয়েছি। এখন এই কথিত ‘বড়ভাইকে’ গ্রেপ্তারের চেষ্টা চালাচ্ছি। এই ‘বড়ভাই’কে গ্রেপ্তার করতে পারলে আরো ঊর্ধ্বতন পর্যায়ে কারা আছেন তা জানা যাবে।’
আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, ‘আমরা যাদেরকে ধরেছি, তারা বলেছে কথিত ওই বড়ভাই নির্দেশ দিয়েছে একজন বিদেশিকে মারতে হবে। ওরা বলেছে কেন? সেই বড়ভাই বলেছে, সরকারকে চাপে রাখার জন্য যেকোনো বিদেশিকে হত্যা করতে হবে।’
কথিত বড় ভাইকে শনাক্ত করা গেছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘কথিত বড়ভাইকে শনাক্ত করতে পারিনি তা নয়, আমরা তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছি।’
জাতীয় দৈনিকের তথ্য সব ঠিক থাকলে পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়ার বক্তব্যের সঙ্গে মিলিয়ে নিলে ‘তাভেল্লা সিজার’ খুনের মূলেহোতা কথিত ‘বড়ভাই’ আবদুল কাইয়ুমই। আবার কেউ কেউ মনে করছেন ‘বড়ভাই’ আবদুল কাইয়ুমের ভাই আবদুল মতিন। মূলত আবদুল কাইয়ুমের পরিকল্পনায় আবদুল মতিন সন্ত্রীদের দিয়ে তাভেল্লাকে হত্যা করিয়েছেন।
মন্তব্য চালু নেই