নববর্ষে নারী লাঞ্ছনার প্রতিবাদ

পুলিশের জন্য শাড়ি–চুড়ি নিয়ে থানা ঘেরাও

নববর্ষের দিনে নারীদের লাঞ্ছিত করার প্রতিবাদে গতকাল রোববার দুপুরে পুলিশের জন্য চুড়ি, শাড়ি ও ললিপপ নিয়ে শাহবাগ থানা ঘেরাও করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থীরা।

ওই লাঞ্ছনার প্রতিবাদে গতকাল পঞ্চম দিনের মতো দিনভর বিভিন্ন সংগঠন প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করে। আজ সোমবার বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলা থেকে কার্জন হল পর্যন্ত মানববন্ধনের কর্মসূচি রয়েছে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের।

গতকাল দুপুর ১২টার দিকে চারুকলা অনুষদের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা অনুষদের ফটকের বাইরে মানববন্ধন করেন। মানববন্ধনে চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিসার হোসেন, সাবেক ডিন অধ্যাপক আবুল বার্ক আলভী, অঙ্কন ও চিত্রায়ণ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শিশির কুমার ভট্টাচার্য, গ্রাফিক ডিজাইন বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ ইউনুস, প্রত্যক্ষদর্শী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি লিটন নন্দী প্রমুখ বক্তব্য দেন।

নিসার হোসেন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের একজন হিসেবে তিনি এ ঘটনার পর লজ্জিত। পুলিশ ও প্রশাসন যদি দায়িত্ব নিতে না পারে, তবে শিক্ষার্থীদের হাতে ছেড়ে দেওয়া উচিত।

মানববন্ধনে শিক্ষার্থীরা ‘ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা চাই’, ‘এই নরপশুদের শাস্তি চাই’, ‘দায়িত্বে অবহেলাকারী পুলিশের বিচার চাই’, ‘পশুত্ব ও পুরুষত্ব এক নয়’—এসব লেখা প্ল্যাকার্ড বহন করেন। ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন শেষে শিক্ষার্থীরা হাতে শাড়ি, চুড়ি ও ললিপপ নিয়ে শাহবাগ থানা ঘেরাও করেন।

মানববন্ধনের সঞ্চালক আরিফ সিদ্দিকী প্রথম আলোকে বলেন, শাড়ি-চুড়ি নিয়ে থানা ঘেরাওয়ের কর্মসূচি পূর্বপরিকল্পিত ছিল না। তাৎক্ষণিক এসব সংগ্রহ করে মিছিল করে থানার সামনে যান শিক্ষার্থীরা। তবে শেষ পর্যন্ত এগুলো পুলিশকে দেওয়া হয়নি।

বেলা দেড়টা থেকে আধ ঘণ্টার কিছু বেশি সময় থানার ফটকের সামনে অবস্থান করেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় ভেতর থেকে তালা আটকে ফটক বন্ধ করে দেওয়া হয়। পরে শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সিরাজুল ইসলামের আশ্বাসে এ কর্মসূচি শেষ হয়।

বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ‘যৌন সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার ও বিচার এবং দায়িত্বজ্ঞানহীন প্রক্টরের অপসারণের দাবিতে’ ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন। সমাবেশে বক্তব্য দেন ছাত্র ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি সৈকত মল্লিকসহ সংগঠনের নেতারা।

একই দাবিতে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের দুটি অংশ। সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন ও সমাবেশ করে সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম।

নারী লাঞ্ছনার নিন্দা জানিয়ে ও দোষীদের শাস্তি চেয়ে বিবৃতি দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের ৩৭ জন শিক্ষক। বিবৃতিতে বলা হয়, ঘটনার পর পঞ্চম দিনের মাথায়ও অপরাধীদের কেউ গ্রেপ্তার না হওয়া সমগ্র জাতির জন্য চরম লজ্জাজনক। এ ছাড়া দোষীদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে গণতান্ত্রিক বাম মোর্চা, বাংলাদেশ গ্র্যাজুয়েট প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি।

ছাত্র ইউনিয়নের নেতা-কর্মীরা আজকের কর্মসূচি সফল করতে গতকাল বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় দিনভর প্রচারণা চালিয়েছেন। আজ বেলা সাড়ে ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতিও অপরাজেয় বাংলায় সমাবেশ ও মানববন্ধনের ঘোষণা দিয়েছে।

গণজাগরণ মঞ্চের সমাবেশ, মশাল মিছিল: বিকেলে শাহবাগে বিক্ষোভ সমাবেশ করে গণজাগরণ মঞ্চ। সমাবেশে মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার বলেন, ‘পয়লা বৈশাখে উৎসবের প্রাণকেন্দ্র টিএসসির এই ঘটনার ভিডিওচিত্র থেকে স্পষ্ট, হামলাকারীরা এক ঢিলে দুই পাখি মারতে চেয়েছে।

তারা একদিকে আমাদের নারীসমাজকে গৃহবন্দী করতে চেয়েছে, অন্যদিকে বর্ষবরণের মতো বাংলা সংস্কৃতির গুরুত্বপূর্ণ উৎসবের কপালে কলঙ্কতিলক এঁকে দিতে চেয়েছে।’ তিনি বলেন, ওই ঘটনার পর থেকেই নানা ধরনের মিথ্যাচার করে যাচ্ছে হামলাকারীরা। তারা অনলাইনে পয়লা বৈশাখ বর্জনের ডাক পর্যন্ত দেওয়ার দুঃসাহস দেখাচ্ছে।

সন্ধ্যায় গণজাগরণ মঞ্চের কর্মী-সংগঠকেরা মশাল মিছিল করেন।



মন্তব্য চালু নেই