পুরুষেরা সাবধানঃ যৌন ব্ল্যাকমেলের শিকার হতে পারেন যেভাবে!
বিশ্বে অনলাইন অপরাধের মাত্রা বেড়েই চলেছে এবং এর ধরনও বদলাচ্ছে। মানসিকভাবে বিপর্যয় সৃষ্টি করে এমন এক নতুন অপরাধে এখন বিশ্বের নানা দেশে প্রতি বছর টার্গেট হচ্ছে হাজার হাজার পুরুষ।
সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে পুরুষদের যৌনতার লোভ দেখিয়ে এই ব্ল্যাকমেল যাকে বলা হচ্ছে সেক্সটরশান সেই ব্যবসা জমে উঠেছে ফিলিপাইনসে। অনলাইনে ব্ল্যাকমেল করে দিনে শত শত ডলার রোজগার করছে অপরাধীরা। ফিলিপাইনসে ম্যানিলার অনেক বস্তি ও গলিঘুঁজি এখন নতুন এই অপরাধের আখড়া। ফিলিপাইনসে ইন্টারনেট সেবা সহজলভ্য এবং সস্তা- কাজেই নতুন অপরাধ একটা নতুন শিল্পের মতো গজিয়ে উঠেছে দেশটিতে।
এই অপরাধীদের ধরতে শহর জুড়ে পুলিশি তৎপরতাও বেড়েছে কয়েকগুণ। কিন্তু অপরাধী চক্রকে ধরতে সাইবার পুলিশ হানা দিয়ে কম্প্যুটার সরঞ্জাম, ব্ল্যাকমেলের নানা তথ্যপ্রমাণ উদ্ধার করলেও সন্দেহভাজন অপরাধীদের অনেকেই এখনও নাগালের বাইরে রয়ে গেছে।
ব্ল্যাকমেল করার জন্য অপরাধীরা যেসব মেয়েদের ব্যবহার করে তাদের একজন- রোসা যিনি একসময় এই কাজের সঙ্গে জড়িত ছিলেন বলছেন এই চক্রগুলো বিদেশি পুরুষদের খদ্দের হিসাবে ধরার চেষ্টা করে।
অপরাধীরা ভুয়া ছবির সঙ্গে এই মেয়েদের কণ্ঠ ব্যবহার করে কৌশলে পুরুষদের আকৃষ্ট করছে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোয় ওয়েবক্যামেরায় চ্যাট করার জন্য। এই চ্যাটে খোলামেলা খুবই ঘনিষ্ঠ যৌনআলাপে জড়িয়ে পড়ে এই অপরাধচক্রের ফাঁদে ধরা দিচ্ছেন পৃথিবীরা নানা দেশের হাজার হাজার পুরুষ।
অপরাধীরা এই চ্যাট রেকর্ড করে নিচ্ছে এবং তারপরই শুরু হচ্ছে ব্ল্যাকেমলের পর্ব। বিশেষজ্ঞ পুলিশ দলের একজন কর্মকর্তা বলেছেন এই রেকর্ডিং ফাঁস করে দেয়ার হুমকি দিয়ে চক্রগুলো বিপুল অঙ্কের অর্থ আদায় করছে।
গত বছর এই বিশেষ ইউনিট তিনটি বড়ধরনের অভিযান চালিয়েছে – শতশত কম্প্যুটার জব্দ করেছে- এবং বহু লোককে গ্রেফতার করেছে। তাদের ডেরায় পাওয়া গেছে বড় বড় বাক্সভর্তি স্তুপাকৃতি রসিদের খাম- আন্তর্জাতিকভাবে অর্থ লেনদেনের প্রতিষ্ঠান ওয়েস্টার্ন ইউনিয়নের মাধ্যমে অর্থ পাঠানোর রসিদ। যাদের যৌন ব্ল্যাকমেলের লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে- তাদের কাছ থেকে এসেছে এসব অর্থ।
পুলিশ হানা দিয়ে ম্যানিলায় কিছু কল সেন্টার পেয়েছে যেখানে তরুণ তরুণীরা যৌন ব্ল্যাকমেলিং-এ বিভিন্ন শিফটে কাজ করছে। এমনকী মোটা অঙ্কের অর্থ এনে দিতে পারলে তাদের বোনাসেরও ব্যবস্থা রয়েছে সেখানে।
সুন্দরী মেয়ের ছবি দিয়ে এরা বন্ধু হওয়ার রিকোয়েস্ট পাঠাচ্ছে অনলাইনে। আবেদনময়ী নারী ওয়েবক্যামেরায় ঘনিষ্ঠ যৌনআলাপের আমন্ত্রণ পাঠাচ্ছে। আর এই ফাঁদে পা দিয়ে রীতিমত পস্তাতে হচ্ছে অনেক পুরুষকে। অর্থের দাবি মেটাতে না পেরে পুরুষদের আত্মহত্যার ঘটনাও ঘটছে।
যারা এই ফাঁদে পা দিচ্ছে তারা জানছে না ক্যামেরায় যৌন আবেদনময়ী যে সুন্দরী মেয়ের ছবি সে দেখছে সেই মেয়ে বাস্তবের কোনো নারী নয়- তার কন্ঠ আগে থেকে রেকর্ড করা – কম্প্যুটারে প্রোগ্রাম করা- বোতামের চাপে তার কথা – তার চাহনি- তার অঙ্গভঙ্গি – ফুটে উঠছে কম্প্যুটারের পর্দায়।
চক্রের শিকার বহু পুরুষ লজ্জায় সামনে আসছেন না- অভিযোগ জানাচ্ছেন না লোকলজ্জা ও পরিবারের কাছে লজ্জার কারণে। ফলে পুলিশের নজর এড়িয়ে ম্যানিলার আনাচে কানাচে যৌন ব্ল্যাকমেলিং-এর ব্যবসাচক্র ক্রমেই ফুলে ফেঁপে উঠছে।
-বিবিসি
মন্তব্য চালু নেই