পানির জন্য বিয়ে

নারীদের পরিশ্রম করার সক্ষমতা নিয়ে পশ্চিমে বেশ ভালো প্রবাদই চালু আছে। পাশ্চাত্যের ধারনা অনুযায়ী নারীরা সেনাবাহিনী থেকে শুরু করে রান্না ঘর পর্যন্ত সমান দক্ষ এবং অধিক পরিশ্রমী। কিন্তু যারা এই বিশ্বাসে বিশ্বাসী নন তারা অন্তত পনেরো মিনিট টানা ময়দা দলাই মলাই করার পর বুঝতে পারবেন ঘটনাটি আসলেই সত্যি না মিথ্যে। তবে যাই হোক ময়দা ময়ানের বাইরেও বর্তমান পৃথিবীতে নারী-পুরুষকে সমানভাবে কাধে কাধ মিলিয়ে কাজ করতে হচ্ছে। যে দেশে নারী-পুরুষ উভয়েই সমান দক্ষতায় কাজ করছে, সেই দেশগুলোই আজ উন্নতির শিখরে পৌছে গেছে।

তবে কিছু দেশ আছে যেখানে নারীদের পরিশ্রম করার ক্ষমতাকে এগিয়ে রাখা হয়। যেমন ধরা যাক যুক্তরাষ্ট্রে নার্স বা সেবিকা হিসেবে কর্মরত নারীদের কথা। দেশটির হাসাতালগুলোতে নার্স হিসেবে কর্মরত পুরুষদের তুলনায় নারীদের সংখ্যা বেশি। কারণ সপ্তাহে যে পরিমান কাজ করতে হয় হাসপাতালগুলোতে তা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মার্কিন পুরুষদের পক্ষে সম্ভব হয় না। আফ্রিকার অনেক দেশ থেকে শুরু করে প্রাচ্যের মঙ্গোলিয়ার অনেক ঘরই পানির জন্য নির্ভর করে নারীদের উপর। ২০১১ সালের জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, ভারতের কিছু অঞ্চলের নারীদের পানি আনার জন্য মাইলের পর মাইল হেটে যেতে হয়। ওই অঞ্চলগুলোতে নারীদের স্রেফ ‘শ্রমিক’ হিসেবেই দেখা হয়। এমনকি সেই অঞ্চলের পুরুষরাও নারীদের পানি টানার শ্রমিক হিসেবেই দেখেন।

ভারতের মহারাষ্ট্রের প্রত্যন্ত অঞ্চলের একটি গ্রাম দেঙ্গামাল। এই গ্রামের পুরুষদের কাছে নারীরা হলো ‘পানি স্ত্রী’, যাদের কাজ হলো শুধু পানি আনা। কথা হয় ওই অঞ্চলের বাসিন্দা শাখারাম ভগতের সঙ্গে। তিনি জানান, ‘আমাকে এমন একজন নিয়ে আসতে হবে যে আমাদের পানি এনে দেবে। তাই এক্ষেত্রে আবারও বিয়ে করাই আমার একমাত্র উপায়।’ শাখারামের প্রথম স্ত্রী গত হওয়ার পর তিনি দ্বিতীয় বিয়ে করেছিলেন, পরবর্তীতে পানি আনার জন্য তাকে আরও একটি বিয়ে করতে হয়।

এক পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০১৪ সালে মহারাষ্ট্রের প্রায় ১৯ হাজার গ্রাম পানিশূণ্য হয়ে গেছে। ওই অঞ্চলে পানিশূণ্যতা খুবই সাধারণ বিষয়, কিন্তু বর্তমানে এই পানিশূণ্যতা মানুষের প্রাণ কেড়ে নেয়ায় উদ্বিগ্ন ভারতবাসী। গত সপ্তাহেই ভারতে পানিশূণ্যতায় পাঁচ শতাধিক মানুষ মারা গেছে। এরকম পরিস্থিতিতে ভারতে বহুবিবাহ আইনে নিষিদ্ধ হলেও বাস্তব অবস্থার প্রেক্ষাপটে অজ্ঞ জনগোষ্ঠি একের অধিক বিয়ে দিকে ঝুকছে যাতে সেই স্ত্রীদের পানি আনানোর কাজ করানো যায়।



মন্তব্য চালু নেই