পাঠ্যপুস্তকের সাম্প্রদায়িকীকরণ বন্ধে নাগরিক কমিশনের ১২ দফা দাবি

পাঠ্যপুস্তকের সাম্প্রদায়িকীকরণ বন্ধে সরকারের কাছে ১২ দফা দাবি তুলে ধরেছে জাতীয় নাগরিক কমিশন।

শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর ধানমন্ডির ডব্লিউভিএ মিলনায়তনে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি আয়োজিত পাঠ্যপুস্তকের সাম্প্রদায়িকীকরণ তদন্তে জাতীয় নাগরিক কমিশনের প্রতিবেদন প্রকাশ এবং আলোচনা সভায়ে এ দাবি তুলে ধরা হয়।

বিচারপতি মোহাম্মদ গোলাম রব্বানীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আলোচনা করেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও ইতিহাসবিদ অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন, সাবেক আইন মন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ, অধ্যাপক অনুপম সেন, শিক্ষাবিদ রাশেদা কে চৌধুরি, শহীদ জায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী প্রমুখ।

হেফাজতের দাবির কারণে পাঠ্যপুস্তকের সাম্প্রদায়িকীকরণ করা হচ্ছে উল্লেখ করে অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন বলেন: হেফাজত তাদের রাজনীতি পাঠ্য বইয়ে চাপিয়ে দিচ্ছে। এর মাধ্যমে শিশুর মনে সাম্প্রদায়িকতার ছাপ পড়বে। তাই এর দায় সরকারকেই নিতে হবে।

বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেন: হেফাজতের দাবি সংবিধান ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী।

একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির বলেন, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকার ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় পাঠ্যসূচিতে সাম্প্রদায়িকীকরণ দুঃখজনক। পাঠ্যপুস্তকের সাম্প্রদায়িকীকরণ বিরুদ্ধে হাইকোর্ট একটি রিট হয়েছে। আদালত রুল জারি করেছেন। আমি আশা করি ওই রুলটি অ্যাবসুলেট হবে।

পাঠ্যপুস্তকের হেফাজতিকরণ বন্ধে ১২ দফা সুপারিশ:

১. হেফাজতের দাবির কারণে স্কুলের পাঠ্যসূচিতে যে সাম্প্রদায়িকীকরণ হয়েছে তা থেকে সরে আসার ঘোষণা সরকারকে দিতে হবে।

২. ক্রমান্বয়ে একমুখী শিক্ষার দিকে অগ্রসর হতে হবে এবং এ বিষয়ে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।

৩. মাদ্রাসা শিক্ষার আমূল পরিবর্তন করতে হবে। এই ব্যবস্থায় বাংলার বদলে যেভাবে উর্দুকে প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে তা রদ করতে হবে। শুধু তাই নয়, প্রাথমিক স্তরে (ইবেতাদায়ি) একই ধরনের পাঠ্যক্রম থাকতে হবে।

৪. শিক্ষামন্ত্রণালয়কে কয়েকটি ভাগ করে শিক্ষার বিভিন্ন সেক্টরে মনিটরিং ও শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে হবে।

৫. এনসিটিবির সিন্ডিকেট ভাঙতে হবে। যিনি যে বিষয়ে দক্ষ তাকেই পদায়ন করা বাঞ্ছনীয়। যাদের জন্য পাঠ্য তাদের কোন প্রতিনিধিত্ব থাকবে না তা অবাস্তব।

৬. শুধু বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষককে দিয়ে বই লেখার প্রবণতা বাদ দিয়ে যারা প্রাঞ্জল ভাষায় বই লিখতে পারেন তাদের দিয়ে স্কুল পাঠ্যপুস্তকে লেখানোর প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে।

৭ শিক্ষাক্ষেত্রের সব বিষয়ে বর্ণবাদ, মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা পরিহার করার প্রয়োজনে প্রশাসনের দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।

৮. কবীর চৌধুরী শিক্ষা কমিশন অবিলম্বে শুধু বাস্তবায়ন নয় শিক্ষা আইন পাশ করতে হবে।

৯. প্রতি বছর বইয়ে বানান ভুল থাকা গ্রহণযোগ্য নয়। ভুলের দায়িত্ব বোর্ডের বিশেষজ্ঞের। যারা এ ভুল করছেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

১০. সকল ধারার শিক্ষা ব্যবস্থায় মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস এবং বাঙালি জাতির ইতিহাস পাঠ বাধ্যতামূলক করতে হবে।

১১. যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয় না এবং জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া হয় না সেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদকে সংবিধান লংঘনের অভিযোগে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে।

১২. হেফাজতে ইসলাম ও জামায়াতে ইসলামীর মতো সকল মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসী সংগঠন অবিলম্বে নিষিদ্ধ করতে হবে। একই সঙ্গে শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ প্রশাসনের রন্ধ্রে রন্ধ্রে অবস্থানকারী জামায়াত-হেফাজতিদের অপসারণ করতে হবে।



মন্তব্য চালু নেই