পাকিস্তানে রাজনৈতিক সংকট
পাক সেনাবাহিনীর প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকা
পাকিস্তানের সাম্প্রতিক উত্তপ্ত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সেনাবাহিনীর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। প্রথমদিকে রাজনৈতিক সংকটে নিরপেক্ষ চেহারায় হাজির হলেও ধীরে ধীরে ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক ই ইনসাফ (পিটিআই) ও পাকিস্তান আওয়ামি তেহরিকের (প্যাট) প্রতি পাক সেনাবাহিনীর নমনীয়তা দৃশ্যমান হয়ে উঠছে। এ পর্যন্ত এই সরকার বিরোধী এই আন্দোলনকে কেন্দ্র করে কমপক্ষে তিন জন নিহত এবং তিন শতাধিক মানুষ আহত হয়েছে।
দল দুটি গত ১৪ আগস্ট থেকে ২০১৩ সালে দেশটির নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ এনে প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন শুরু করে। প্রথমদিকে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে নিরপেক্ষ থাকার কথা বলা হলেও সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গেই সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে একের পর এক নির্দেশনা আসার শুরু হয়। গত ৩১শে আগস্ট চলমান সংকট নিয়ে উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাদের নিয়ে আলোচনাতেও বসেন সেনাপ্রধান রাহেল শরিফ।
প্রথমে সেনাবাহিনীর বিবৃতিতে বলা হয়েছিল, রাজনীতিতে সেনাবাহিনী নাক গলাবে না। সেনাবাহিনীর সেই বিবৃতিতে নিরপেক্ষতার আভাস থাকলেও সর্বশেষ বিবৃতিতে সেনা কর্তৃপক্ষ পারত পক্ষে ইমরানের পিটিআই ও কাদরির প্যাটের প্রতি সমর্থন প্রকাশ পেয়েছে।
সাম্প্রতিক দৃশ্যপট বিশ্লেষণ করলে আমরা দেখতে পাবো প্রথমদিকে সেনাবাহিনীর আবির্ভাব ঘটে পিটিআই ও প্যাটের সঙ্গে সরকারের আলোচনার বিষয়টি নিয়ে। সেনাপ্রধান পিটিআই ও প্যাটের সঙ্গে সরকারের আলোচনার জন্য মধ্যস্থতার উদ্যোগ নেন। শেষ পর্যন্ত সেই উদ্যোগ ব্যর্থ হয়।
এদিকে নিজেদের সর্বশেষ বিবৃতিতে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে রেড জোনে আন্দোলনরত পিটিআই ও প্যাটকর্মীদের আঘাত না করার নির্দেশ দেয়া হয়। যদিও ওই আন্দোলনরত বিক্ষোভকারীদের অনেকবারই সহিংস হতে দেখা গেছে। তারপরেও স্পর্শকাতর এলাকায় সহিংস্ব বিক্ষোভকারীদের প্রতি সেনাবাহিনীর এই সহমর্মিতা তাদের অবস্থানকে কিছুটা ঘোলাটে করে তুলেছে। কেননা সরকারি সব অফিস ঘিরে রাখার কারণে দেশটির কার্যক্রমও থমকে পড়েছে।
2 {focus_keyword} পাক সেনাবাহিনীর প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকা 24গত কয়েক দিনের ঘটনাতে বিষয়টি আরো পরিস্কার হয়েছে। রেড জোন হিসেবে পরিচিত ইসলামবাদের সংরক্ষিত ওই এলাকার সরকারি ভবনগুলোতে বেশ কয়েকবার প্রবেশের চেষ্টা করেছিল বিক্ষোভকারীরা। এ সময় তাদের বাধা দিতে গিয়ে সহিংস্ব পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। এজন্যে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে সরকারি বাহিনীকেই দায়ী করা হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত বিক্ষোভকারীদের দমাতে দেশটির সংবিধানের ২৪৫ নম্বর অনুচ্ছেদ বলে সেনাবাহিনীকে আদেশ দেয় সেনাবাহিনী। সেক্ষেত্রে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার বদলে ঘটনার কারণ ব্যাখ্যা করা হয় সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে।
1 {focus_keyword} পাক সেনাবাহিনীর প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকা 19
রেড জোনে অবস্থানরত বিক্ষোবকারীদের সঙ্গে হাসিমুখে সেনাদের হাত মেলাতেও দেখা গেছে। ইসলামাবাদের রেড জোনের মতো সংরক্ষিত এলাকায় ফুল নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষদেরও নিরাপত্তারক্ষীরা খুব বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে দেয়ার কথা না। সেখানে বিক্ষোভকারীদেরকে বেশ খাতিরের সঙ্গেই অবস্থান করার সুযোগ দিচ্ছে সেনাবাহিনী। ফলে প্রশ্ন উঠছে আদৌ কি সেনাবাহিনী নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করছে নাকি একটি পক্ষের পেছনে রয়েছে সেনাবাহিনী।
এদিকে পিটিআই প্রেসিডেন্ট জাভেদ হাশমির বক্তব্যকে ঘিরেও পরিস্থিতি আরো ঘোলাটে হয়ে উঠছে। হাশমির বক্তব্য অনুযায়ী সেনাবাহিনীর ইঙ্গিতেই নাচছেন পিটিআই প্রধান ইমরান খান। অতীতের মতো আবারো কি একটি সেনা শাসক উপহার দেবে পিটিআই ও প্যাটের আন্দোলন নাকি বাংলাদেশের ১/১১ এর মতো একটি সরকার প্রতিষ্ঠা পাবে পাকিস্তানে। কিছুই বলা যাচ্ছে না, কারণ পাকিস্তান তাদের ৬৮ বছরের স্বাধীনতার ইতিহাসে অর্ধেক সময় সেনাবাহিনী দ্বারা শাসিত হয়েছে।
ডন অবলম্বনে
মন্তব্য চালু নেই