নোঙ্গরে বাঁধা জীবন

গত ১৮ বছর ধরে রাজহংসীর মত সাগরে ভেসে বেড়াচ্ছেন ফ্লোরিডার বর্ষীয়ান নারী লি ওয়াচস্টেলার। ঘর নেই- বাড়ি নেই, জলই তার একমাত্র ঠিকানা। ক্যান্সারে ভুগে ভুগে স্বামী মারা গিয়েছিলেন সেই ১৯৯৭ সালে। এরপর পাঁচ বেডরুমের ফ্লাটটি বিক্রি করে দেন ৮৬ বছরের এই বৃদ্ধা পাকাপাকি ওঠে আসেন যাত্রীবাহী জাহাজের এক বিলাসবহুল কেবিনে। এখন এটাই তার একমাত্র ঠিকানা। ডাঙ্গায় পা রাখেন কদাচিৎ। গত সাত বছর ধরে তিনি আছেন ক্রিস্টাল সেরেনিটি নামের এক প্রমোদ তরীতে।

এর আগে স্বামীর সঙ্গেও বহুবার জাহাজ ভ্রমণ করেছেন ওয়াচস্টেলার। তখন তারা থাকতেন হল্যান্ড-আমেরিকা লাইন শিপে। এখানে যে ডান্স পার্টি হত তাতে তারা ছিলেনে এর নিয়মিত দর্শক। গত সাত বছর ধরে ভেসে বেড়াচ্ছেন ক্রিস্টাল সেরেনিটিতে। এর আগে ২শয়ের বেশি জাহাজে চড়া হয়ে গেছে তার। এগুলোতে করে ১৫ বার বিশ্ব ভ্রমনও করেছেন তিনি। পাশাপাশি একশর বেশি দেশ ঘোরা হয়ে গেছে তার।

বর্ষীয়ান নারী লি ওয়াচস্টেলারজাহাজের নাবিকদের কাছে তিনি ‘মামা লি’ হিসেবে পরিচিত। এখন এটিই তার নাম। ‘আমার নামের শেষ অংশটি কেউই উচ্চারণ করতে পারে না। তাই ওরা আমায় এই নামেই ডাকে। আমারও শুনতে বেশ লাগে।’ -বলছিলেন ৮৬ বছরের লি ওয়াচটস্টেলার।

তবে মাটিতে পা না রাখলেও ছেলে এবং স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ ঠিকই আছে তার। ডাঙ্গার লোকজনের সঙ্গে যোগাযোগ করেন কম্পিউটারের মাধ্যমে। জাহাজ মিয়ামির ডকে আসলে ছেলেদের সঙ্গে দেখা করে যান। তিন ছেলে আর সাত নাতি নাতনিদের কথা খুব মনে পরে। কিন্তু এ নিয়ে তার তেমন কোনো দুর্ভাবনা নেই। তিনি জানেন, বৌ আর ছেলেমেয়েদের নিয়ে ওরা সুখেই আছে।

স্বামী মারা যাওয়ার একদিন আগে তাকে বলেছিলেন, ‘বেড়ানো বন্ধ করোনা।’ তিনি তার কথা অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছেন। মনের আনন্দে রাজহংসীর মত ভেসে বেড়াচ্ছেন জলের ওপর। তার ভাষায়, ‘আমার কোনো দুশ্চিন্তা বা পিছুটান নেই। আমি তো রুপকথার রাজকন্যাদের মত জীবন যাপন করছি।’

নাচতে খুব ভালোবাসেন ওয়াচস্টেলার। জাহাজে এসেও তার সেই শখ রয়ে গেছে। তার স্বামী নাচ জানতেন না। তবে তার নাচ পছন্দ করতেন। এজন্য রাতে খাওয়া-দাওয়া শেষে দুজন মিলে খুব নাচতেন। এখনো সে অভ্যাস যায়নি। এখনো জাহাজের প্রায় সব অনুষ্ঠানেই তিনি অংশ নেন এবং অতিথিদের সঙ্গে মিলে নাচেন।

এ বছরটিও তিনি সেরেনিটি জাহাজে কাটাবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এখানে কেবিনভাড়া, খাওয়া-দাওয়া, বিভিন্ন নাচের অনুষ্ঠানে অংশ নেয়া, বিনোদন, ছবি দেখা, ক্যাপ্টেনের সঙ্গে ককটেল পার্টিতে গিয়ে স্ফুর্তি করা সবমিলিয়ে তাকে ব্যয় করতে হবে ১ লাখ ৬৪ হাজার ডলার।

মে মাসে ৮৭তম বছরে পা রাখতে যাচ্ছেন মিসেস ওয়াচস্টেলার। তাই বলে ভাববেন না নিজের জন্মদিন পালন করতে ডাঙায় ফিরে যাচ্ছেন তিনি। আর কখনো পুরনো জগতে ফিরতে পারবেন কিনা সেবিষয়ে তিনি নিজেই নিশ্চিত নন। কেননা সাগরে ঘুরতে ঘুরতে তার রুচি গেছে ‘নষ্ট’ হয়ে। নোনা জল, নোনা হওয়া, বিশাল জাহাজ আর সেখানকার নাবিকদের নিয়ে আনন্দেই আছেন এই মার্কিন বৃদ্ধা। এদের ছেড়ে তিনি আর কোথাও যেতে চান না।



মন্তব্য চালু নেই