নেতাদের জন্য নিষিদ্ধ যে সেতু
দীর্ঘ ৪০ বছর সরকারগুলোর মুখ চেয়ে বসেছিলেন হরিয়ানার সির্সা জেলার বাসিন্দারা। শেষে তিতি বিরক্ত হয়ে চাঁদা তুলে নিজেদের উদ্যোগেই নির্মাণ করতে শুরু করেন প্রয়োজনীয় স্থাপনাটি। এখন তারা ঘোষণা করেছেন, নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত ওই সেতুটি তারা কোনো রাজনৈতিক নেতাকে ব্যবহার করতে দেবেন না।
সির্সার বাসিন্দাদের দীর্ঘ দিনের স্বপ্ন সফল হতে চলেছে। ঘাগড়া নদীর ওপর ২১৪ ফুট দীর্ঘ আর ১৬ ফুট চওড়া স্টিলের সেতুটি এখন যেন লক্ষ আশার বাস্তবতা। অথচ স্থানীয় রাজনৈতিক নেতারা এ নিয়ে তাদের চার দশক ধরে ঘুরিয়েছেন। সেতুটি চালু হলে সির্সার লোকজন মাত্র ১০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে পাঞ্জাব যেতে পারবেন। আগে ওই রাজ্যে যেতে তাদের ৪০ কিলোমিটার ঘুরতে হত।
স্থানীয় বাসিন্দা রাজবীর আক্ষেপ করে বলে,‘আমাদের ছেলেমেয়েদের স্কুলে যেতে খুব কষ্ট হত। কেউ আমাদের সাহায্য করেনি। এমনকি যখন আমরা এটি বানাতে শুরু করলাম তখনও এগিয়ে আসেনি কেউ।’
হরিয়ানার সাবেক মুখ্যমন্ত্রী দেবী লালের সময় থেকে প্রতীক্ষা শুরু। বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মনোহর লাল খাত্তারের যুগে এসেও শেষ হচ্ছিল না তাদের প্রহর গোণা। তারা দফায় দফায় সরকারের মন্ত্রী আর সচিবদের সঙ্গে দেখা করেছেন, বৈঠক করেছেন। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি।
এ সম্পর্কে সেতু নির্মাণ কমিটির সচিব মেজর সিং বলেন,‘সরকার এসেছে সরকার গিয়েছে। তারা কেবল প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। আমরা বহু মুখ্যমন্ত্রী, মন্ত্রী, সংসদ সদস্য এবং নেতাদের সঙ্গে দেখা করেছি। কংগ্রেস, বিজেপি আইএনএলডি কোনো দলকেই বাদ রাখিনি। কিন্ত তারা কেবল আশ্বাসই দিয়েছেন- এগিয়ে আসেননি।’
পরে ওই জেলার নয়টি গ্রামের পাঁচ হাজার মানুষ মিলে সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেন এবং চাঁদা তুলতে শুরু করেন। তরুণ থেকে শুরু করে বৃদ্ধ এমনকি বিধবারাও এই মহতী উদ্যোগে শরীক হন। সবমিলিয়ে এক কোটি রুপি চাঁদা ওঠে। গতবছর এপ্রিলে কাজ শুরু হয়। এটি নির্মাণ এখন শেষের পথে। সেতু নির্মাণে এ পর্যন্ত ৯০ লাখ রুপি খরচ হয়েছে।
সম্প্রতি ক্ষুব্ধ গ্রামবাসীরা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, কোনো নেতা কিংবা কোনো ভিআইপি’কে তারা এটি ব্যবহার করতে দেবেন না। একই সঙ্গে তারা আগামীতে কোনো নির্বাচনে ভোট দেবেন না বলেও মনস্থির করেছেন। এই সেতুটি কেবল এলাকার সাধারণ মানুষ ব্যবহার করবে।
আব্রাহিম লিঙ্কনের বিখ্যাত উক্তি ধার করে বলা যায়-এটি হবে ভারতের একমাত্র ‘অব দা পিপল-বাই দা পিপল-ফর দা পিপল’ সেতু।
মন্তব্য চালু নেই