‘নিয়ম’ ভেঙে নিজেদের রাঙালেন তারা

“ হিন্দু বিধবাদের সঙ্গে পশুর চেয়েও খারাপ আচরণ করে আমাদের সমাজ। বিধবা হওয়ার পর সমাজ মনে করে আমরা আর তাদের সঙ্গে বসবাসের উপযুক্ত নই। পরিবারও আমাদের বর্জন করে। আর তাই স্বামীর মৃত্যুর পর কোন উৎসবে যোগ নেয়ার সুযোগ হয়নি আমার।”

নিজের কষ্টকর অভিজ্ঞতা বর্ণনার মধ্য দিয়ে সমাজের এমন কঠিন বাস্তবতার চিত্রই তুলে ধরলেন, ভারতের বারানাসি শহরের ৬৬ বছর বয়সী বিধবা টুকনি দেবী। ২৪ বছর বয়সে বিধবা হওয়ার পর আরোপিত সামাজিক নিয়মের বেড়াজালে গেল ৬৬ বছরে কোন উৎসবে যোগ দেননি তিনি। এবার সে বেড়াজাল ভেঙে হোলি উৎসবে যোগ দিলেন টুকনি।

রংয়ের উৎসব হোলি। অথচ বছরের পর বছর ধরে সে রং থেকেই বিচ্যুত থাকেন হিন্দু বিধবারা। সামাজিক প্রচলন, প্রথা, নিয়ম-নীতি রং খেলা থেকে দূরে সরিয়ে রাখে তাদের। তবে এবার টুকনি দেবী ছাড়াও সে নিয়ম ভাঙলেন ভারতের উত্তর প্রদেশের বৃন্দাবন আর বারানাসি শহরের হিন্দু বিধবারা। একে অপরকে রং মাখানোর মধ্য দিয়ে অবশেষে নিজেদের রাঙিয়ে তোলেন তারা।

150303132329555779_8

বিধবাদের মর্মপীড়া উপলব্ধি করতে পেরে এবং তাদের মূলধারার সমাজব্যবস্থার আওতায় নিয়ে আসার লক্ষ্যের কথা জানিয়ে অন্যরকম এ হোলি উৎসবের আয়োজন করে বেসরকারি সহায়তাকারী প্রতিষ্ঠান সুলাভ ইন্টারন্যাশনাল। পাগল বাবা নামের বিধবা আশ্রমে আয়োজিত এ উৎসবে অংশ নেন ১ হাজারেরও বেশি বিধবা। তাদের জন্য রাখা হয় ১৪ শ’ কেজি গোলাপের পাঁপড়ি আর ১ হাজার কেজি রংয়ের গুঁড়া।

150303132331602885_8

উৎসবে অংশ নিতে পেরে আনন্দে আত্মহারা হয়ে ওঠেন বৃন্দাবন আশ্রমের বিধবা মানু ঘোষ। ব্যক্ত করেন নিজের আকাক্সক্ষার কথা। তিনি বলেন, “আমি চাই বাকি জীবন এভাবেই হোলি উৎসবের রংয়ে মেতে উঠতে।

উৎসবটির আয়োজক বিনিতা ভার্মা জানান, বৃন্দাবন আর বারানাসির হিন্দু বিধবারা অত্যন্ত কষ্টে দিন যাপন করছেন এমন মর্মে সুপ্রীম কোর্ট থেকে লিখিত পাওয়ার পর তারা এ উদ্যোগ নেন।

150303132329180697_8

তিনি বলেন, “সমাজের নানা নিয়মের চাপে হিন্দু বিধবারা সমাজে অবহেলিত। সাদা রংয়ের শাড়ি ছাড়া রঙিন শাড়ি পরার কিংবা সাজগোজের অধিকার নেই তাদের। আমাদের আয়োজনের উদ্দেশ্য ছিল তাদের সেসব সুযোগ দেয়ার। অবশ্য এর জন্য আমাদেরকে সমাজের রক্ষণশীলদের ক্ষোভের মুখে পড়তে হলেও আশা করছি শিগগিরই তা কাটিয়ে উঠতে পারব আমরা।”

150303132330712847_8

মূলত উত্তর প্রদেশের বিধবা শহর হিসেবেই বেশি পরিচিত বৃন্দাবন আর বারানাসি। স্বামীর মৃত্যুর পর জীবনের সব আকাঙক্ষাকে বিসর্জন দিয়ে, আবার অনেকে সামাজিক প্রথার চাপে বিভিন্ন শহর থেকে বিধবারা আশ্রয় নেন এখানকার বিভিন্ন আশ্রমে।



মন্তব্য চালু নেই