দূর্যোগ দূর্ভোগ মাথায় নিয়ে ঈদযাত্রা

নাড়ির টানে বাড়ির পানে

দূর্যোগপূর্ন আবহাওয়া পথে দুর্ভোগ ও বিড়ম্বনা উপেক্ষা করে ঢাকা ছাড়তে শুরু করেছেন ঈদে ঘরমুখো মানুষ। ঈদ এলেই ঘরের দোরগোড়ায় কড়া নাড়ে। কখন বাড়ি যাব। বুধবার সরকারি ছুটির দিন হওয়ায় ভোর থেকে টার্মিনাল ও সদড়ঘাটমুখী ছিল হাজার হাজার যাত্রী। নাড়ির টানে প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে রাজধানী ছেড়ে যাচ্ছেন তারা।

সকাল থেকে শহরের আর্ন্ত: জেলা বাস টার্মিনাল, সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল ও কমলাপুর রেল স্টেশন ঘুরে দেখা গেল ঘরে ফেরা যাত্রীদের স্বাভাবিক দিনের চেয়ে ভিড় ছিল দ্বিগুণ। দিনভর রাজধানীর বহির্গমন পথগুলো ঘরমুখো মানুষের ভিড়। বৃহস্পতিবার একদিন কার্যদিবস থাকলেও অধিকাংশই কর্মচারী কর্মকর্তারা ছুটি নিয়ে ঈদযাত্রায় শামিল হয়েছেন। এদিকে পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের স্টাফরাও জড়িয়ে পড়েছে ট্রেনের টিকিট কালোবাজারিতে।

এই অভিযোগে দু’জন বুকিং স্টাফকে বরখাস্ত করেছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। ট্রেনের শিডিউল বিপযর্য়ের ঘটনা আছেই। নির্ধারিত সময়ে কমলাপুর স্টেশানে ট্রেন আসবে শিডিউল মাথায় রেখে বাসা থেকে যাত্রা করে সময়ের আধা ঘন্টা আগে এসে স্টেশানে পৌঁছে যাত্রীরা। দীর্ঘ সময় অপেক্ষার পরও ট্রেনের দেখা মিলছে না।

তবে নৌপথে ভিড় শুরু হয়েছে ২দিন আগে থেকেই। সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালের পন্টুনে পা ফেলার জায়গা নেই। যাত্রীদের কারও কাঁধে ঈদের মার্কেটের ব্যাগ, কারও হাতে লাগেজ কিংবা সুটকেস। যেন কয়েকদিনের ছুটির প্রস্তুতি নিয়ে তারা ছুটছেন মা ও মাটির টানে। সড়ক পরিবহন ও নৌ-টার্মিনাল সরেজমিন পরিদর্শন করেছেন স্ব-স্ব মন্ত্রণালয়ের কর্তাব্যক্তিরা। স্বচোখে দেখেছেন ঘরমুখো মানুষের দুঃখ দূর্দষা।

সড়ক ও রেলপথের চেয়ে নৌপথে তুলনামূলক ভিড় ছিল বেশি। সকাল থেকে যতই বেলা বাড়তে থাকে ভিড়ও ততই বাড়তে থাকে। দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন রুটর লঞ্চযাত্রী বোঝাই হয়ে ছেড়ে গেছে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল থেকে। বরিশালের যাত্রী ফরিদ আহমেদ পাটোয়ারি জানান, গত মঙ্গলবার সকালে তার এক আত্মীয়কে লঞ্চে উঠায়ে দিতে এসেছিল। সেদিন এতো ভিড়ছিলনা। সরকারি ছুটির দিন হওয়ায় বুধবার সদড়ঘাট লঞ্চ টার্মিনালে পা রাখার তিল ধারণের ঠাই নেই। তিনি বলেন, এমন অবস্থা চলবে ঈদের আগের দিন পর্যন্ত। সেই ভিড় এড়াতে আগাম যাত্রা তার। কিন্তু সেই দূর্ভোগ থেকে রক্ষা পেলেনা না তিনি।

এদিকে সকাল থেকে একের পর এক ছেড়ে যাচ্ছে ভোলা, বরগুনা, বরিশাল, চাঁদপুর, শরিয়তপুরসহ কাছাকাছি দূরত্বের লঞ্চগুলো। বরিশাল অঞ্চলের তুলনায় অপেক্ষাকৃত ছোট এসব লঞ্চের ছাদে যাত্রীদের ভ্রমণ করতে দেখা গেছে। যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ছোট লঞ্চগুলোর জন্য আগাম টিকিট লাগে না। ঘাটে এসেই টিকিট পাওয়া যায়। অনেক ক্ষেত্রে লঞ্চেই ভাড়া নেওয়া হয়। ফলে যাত্রীদের নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন। এবার পুরো বর্ষায় ঈদ হওয়ায় দুশ্চিন্তাও বেশি। তবে কোনো লঞ্চ যেন অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে টার্মিনাল ছাড়তে না পারে সে জন্য পদক্ষেপ নিয়েছে বিআইডব্লিউটিএ। সংস্থাটির কর্মকর্তারা জানান, ঈদ উপলক্ষে অতিরিক্ত লঞ্চের পাশাপাশি বাড়তি জনবলও নিয়োগ করা হয়েছে। অতিরিক্ত যাত্রীবোঝাই হয়ে যেন কোনো লঞ্চ ঘাট থেকে ছেড়ে যেতে না পারে তা মনিটর করা হচ্ছে। সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ভ্রাম্যমাণ আদালতের একাধিক টিম কাজ করছে সদড়ঘাটে।

ঈদ ঘনিয়ে আসায় বুধবার সকাল থেকে রাজধানীর প্রতিটি বাস টার্মিনালে ভোর থেকে ছিল যাত্রীতে ঠাসাঠাসি। যাত্রীরা সাহ্রী খাওয়ার পর থেকে যাত্রী বোঝাই বাস ছেড়ে যায় গাবতলী, সায়েদাবাদ ও মহাখালী আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল থেকে। সকালে গাবতলী বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা গেছে, মঙ্গলবারের চেয়ে বুধবার যাত্রীর চাপ অনেক বেশি। অপেক্ষমাণ যাত্রীরা জানান, ঈদের কয়েকদিন আগেই তারা বাড়ি যাচ্ছেন শুধু ভয়াবহ ভিড় আর যানজট থেকে রক্ষা পেতে। বাস-ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের কার্যনির্বাহী কমিটির সংশ্লিষ্ট সদস্যরা এফএনএসকে বলেন, ঈদে যানজট স্বাভাবিক ঘটনা।

বৃহস্পতি ও শুক্রবারের মধ্যে ঢাকা ছাড়বে অধিকাংশ মানুষ। গত দু’একদিনের তুলনায় বুধবার যাত্রীর চাপ অনেক বেড়েছে। বাস মালিকরা জানিয়েছেন, ঈদের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে মহাসড়কে যানজট ততোই বাড়ছে। এ জন্য নির্ধারিত সময়ে বাস ছাড়তে পারছে না।

শিডিউল বিপর্যয়ের মধ্য দিয়ে ট্রেনের আগাম টিকিট নেওয়া যাত্রীদের ঈদযাত্রা শুরু হয়েছে মঙ্গলবার থেকে। ঈদ যাত্রার প্রথম দিনে ব্যাপক ভিড় দেখা গেলেও দ্বিতীয় দিনে তার দ্বিগুণ ভিড় দেখা গেছে কমলাপুর রেলস্টেশনে। সকাল ৮টায় কমলাপুর থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়া মহানগর প্রভাতী ট্রেনের টিকেট না মিলায় অতিরিক্ত যাত্রীরা প্রতিটি বগিতে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ঈদ যাত্রায় শামিল হতে দেখা যায়। একইভাবে সিলেটের উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়া উপবন ও পারাবতে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে অনেক যাত্রীকে ভ্রমণ করতে দেখা গেছে। এ ছাড়া কয়েকটি রুটে ট্রেনে চলতি টিকিটে কয়েক’শ যাত্রীর দ্বিগুণ বুধবার ছেড়ে যাচ্ছে বলে এফএনএসকে জানিয়েছেন স্টেশন মাস্টার।

তিনি বলেন, কমলাপুর থেকে ছেড়ে যাওয়ার সময় ট্রেনের ছাদে যাত্রী না উঠলেও, রাজধানীর উপকণ্ঠ টঙ্গী ও জয়দেবপুর স্টেশন থেকে কয়েক’শ যাত্রী ছাদে উঠে। কমলাপুর রেলস্টেশনের ম্যানেজার সীতাংশু চক্রবর্তী বলেন, মঙ্গলবার থেকে মনিটরিং সেলের সদস্যরা ট্রেনে অতিরিক্ত যাত্রী রোধ করার বিষয়টি তদারকি করবেন।

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম জানান, ট্রেনের টিকিট কালোবাজারির সাথে রেলের কিছুসংখ্যক কর্মচারীও জড়িয়ে পড়েছেন। এই অভিযোগে ব্রাহ্মণবাড়িয়া স্টেশনের বুকিং সহকারী আবদুর রহিম ও সাইফুল ইসলামকে বরখাস্ত করেছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।
অভিযোগ রয়েছে, রেলস্টেশনে কালোবাজারির নেতৃত্ব দিয়েছে রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর এক শ্রেণী অসাধু সদস্য।



মন্তব্য চালু নেই