নাম নয়, পরামর্শ চাইবে সার্চ কমিটি

নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে নাম চাইলেও বিশিষ্ট নাগরিকদের কাছে নাম চাইবে না সার্চ কমিটি। তারা বরং নাম সুপারিশ প্রস্তুতে করণীয় বিষয়ে তাদের পরামর্শ চাইবেন বলে জানা গেছে।

তবে বিশিষ্ট নাগরিকরা এই পরামর্শ চাওয়াকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন। যে ১২ জন বিশিষ্ট নাগরিকের পরামর্শ চাওয়া হয়েছে, তারা কমিটিকে সহযোগিতা করতে চান। কমিটির চিঠি পাওয়ার কথা নিশ্চিত করলেও বৈঠকের আলোচ্যসূচি নিয়ে বিশিষ্টজনরা আনুষ্ঠানিকভাবে কথা বলতে রাজি হননি। কমিটিকে পরামর্শ দিতে তাদের কেউ কেউ হোমওয়ার্কও সম্পন্ন করছেন, আবার কেউ কেউ ইতিমধ্যে গণমাধ্যমে এ বিষয়ে বলা কথাগুলো গুছিয়ে নিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন।

অনুরূপভাবে কমিটির সদস্যরাও এ ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক কোনো কথা বলতে রাজি হননি। তবে জানা গেছে, বিশিষ্টজনদের কাছে সুনির্দিষ্ট কোনো নাম জানতে চাইবে না কমিটি। তারা বরং কোন কোন পেশাজীবী থেকে প্রতিনিধি নিলে সর্বোচ্চ নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করা যাবে এবং সেইসঙ্গে বিতর্ক এড়ানো বা হ্রাস করা যাবে, এসব বিষয়ে পরামর্শ চাইবেন বলে জানা গেছে। তাছাড়া প্রসঙ্গক্রমে পেশাজীবীর বাইরের কোনো ব্যক্তিকে নিয়েও আলোচনা উঠতে পারে বৈঠকে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও কমিশনারের নাম সুপারিশ করার ক্ষেত্রেও আলাদাভাবে পরামর্শ চাইবে কমিটি।

বিশিষ্ট নাগরিকদের সঙ্গে বৈঠক বিষয়ে সার্চ কমিটির একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, অনেক রকমের প্রশ্নই তো থাকে। একজন জ্যেষ্ঠ নাগরিকের নির্দেশনা থাকলে কাজ ভালো হয়। এটা আমরা করেছি আমাদের ট্রান্সপ্যারেন্সির জন্য। কারণ ট্রান্সপ্যারেন্সি সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। আমরা চাই সবকিছুরই সমালোচনা হোক, আবার স্বচ্ছতার বিষয়টি যেন তাতে নিশ্চিত হয়। এতে হয় কি, ভালো কাজের একটা গন্তব্য দাঁড়িয়ে যায়।

কমিটির সাচিবিক দায়িত্বে নিয়োজিত মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম জানান, ১২ জন বিশিষ্ট নাগরিকের মতামত জানতে আজ সোমবার (৩০ জানুয়ারি) তাদের সঙ্গে বৈঠক হবে। তারা হলেন- বিচারপতি মো. আবদুর রশিদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এ কে আজাদ চৌধুরী ও অধ্যাপক এস এম এ ফায়েজ, মানবাধিকার কর্মী সুলতানা কামাল, সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ টি এম শামসুল হুদা, দুই সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন ও ছহুল হোসাইন, স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ তোফায়েল আহমেদ, সুশাসনের জন্য নাগরিক- সুজনের সাধারণ সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের এমিরেটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী ও বাংলা বিভাগের অধ্যাপক আবুল কাশেম ফজলুল হক এবং পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) নুরুল হুদা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যাপক এ কে আজাদ চৌধুরী বলেন, নির্বাচন কমিশন গঠনে সার্চ কমিটির সঙ্গে সুশীল সমাজের আলোচনার উদ্যোগটা খুব ভালো। আলোচনা যত বেশি করা যায় তত ভালো একটা কমিশন গঠিত হবে। এখানে একতরফা কোনো আলোচনা হবে না। নতুন কমিশন গঠনে সার্চ কমিটিকে ভালো পরামর্শ দিতে পারবে সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা- এ আশাও প্রকাশ করেন তিনি। নিজের পরামর্শ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বৈঠকে না বসার আগে কিছু বলতে পারব না। তবে সবার সঙ্গে বসার এ উদ্যোগটাকে আমি স্বাগত জানাচ্ছি।

বদিউল আলম মজুমদার বলেন, এটি একটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া। আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে যে কোনো কাজ করলে ভালো হয়। আশা করি আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে এবারো ভালো কিছু হবে।

তোফায়েল আহমেদ বলেন, সার্চ কমিটি ১২ জনকে ডেকেছে, সেখানে আমিও আছি। তাই আলোচনা করতে যাব। যেটা ভালো হয়, সংক্ষেপে সেটা বলব। ইতিমধ্যে আমি বিভিন্ন গণমাধ্যমে এ বিষয় কিছু কথা বলেছি। সে কথাগুলো বৈঠকে ভালোভাবে বলব।

তিনি বলেন, নাগরিকদের কেউ খুব একটা গুরুত্ব দিয়ে কথা বলে না। প্রথমবারের মতো এবার নাগরিকদের মতামত শোনার উদ্যোগ নিয়েছে সেটা অবশ্যই অভিনন্দনযোগ্য। একজন নাগরিক হিসেবে এ বিষয়ে কথা বলতে দেয়ার সুযোগের জন্য আমি গর্বিত। আমি একটু হোমওয়ার্ক করে এ বিষয়ে কথা বলব। তারপর তারা তাদের সিদ্ধান্ত নেবেন।

প্রসঙ্গত, গত শনিবার প্রথমবারের মতো আনুষ্ঠানিক বৈঠক করে সার্চ কমিটি। বৈঠকের পর মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের জানান, যে ৩১টি দল সম্প্রতি রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপে অংশ নিয়েছে, তাদের আগামীকাল মঙ্গলবার বেলা ১১টার মধ্যে পাঁচটি করে নাম প্রস্তাব করতে বলা হয়েছে। এছাড়া কমিশন গঠনে মতামত নেয়ার জন্য আজ সোমবার বিকেল ৪টায় সুপ্রিম কোর্টের জাজেস লাউঞ্জেই বিশিষ্ট নাগরিকদের সঙ্গে কমিটি বসবে।

সচিব জানান, ওইদিন সার্চ কমিটির কর্মপদ্ধতি কী হবে তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আগামীকাল মঙ্গলবার সকাল ১১টার মধ্যে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব বরাবরে রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে নামগুলো জমা দিতে বলা হয়েছে। বৈঠকে কমিটির ছয় সদস্যের সবাই উপস্থিত ছিলেন বলেও জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।

সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে সার্চ কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসান, সরকারি কর্মকমিশনের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাদিক, বাংলাদেশের মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক (সিএজি) মাসুদ আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য শিরীন আখতার।

নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে গত ১৮ ডিসেম্বর থেকে ১৮ জানুয়ারি পর্যন্ত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ মোট ৩১টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে রাষ্ট্রপতি আলোচনা করেন। রাজনৈতিক দলগুলোর দেয়া প্রস্তাব যাচাই-বাছাই করার পর রাষ্ট্রপতি নাম সুপারিশ করার জন্য সার্চ কমিটি করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেন।

সংবিধানের সপ্তম ভাগের ১১৮ থেকে ১২৬ অনুচ্ছেদ পর্যন্ত নির্বাচন-সম্পর্কিত দিকনির্দেশনা দেয়া আছে। এতে নির্বাচন কমিশন গঠনে আইন প্রণয়ণের কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু গত ৪৫ বছরে এ-সংক্রান্ত কোনো আইন প্রণয়ন করা হয়নি। এর আগে সর্বশেষ ২০১২ সালের ২৩ জানুয়ারি তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান আপিল বিভাগের বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনকে প্রধান করেই চারজনের সার্চ কমিটি গঠন করেছিলেন। এবারো একই পদ্ধতি অনুসরণ করে গত ২৫ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ছয় সদস্যের সার্চ কমিটি গঠন করেছেন। দশ কার্যদিবসের মধ্যে তাদের অন্তত দুজন নারীসহ মোট দশজনের নাম সুপারিশ করতে বলা হয়েছে।



মন্তব্য চালু নেই