নাটোরে গম সংগ্রহ অভিযান কৃষকের কার্ডে সরবরাহ করে লাভবান হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা

নাটোর প্রতিনিধি: নাটোরে গম সংগ্রহ অভিযানে কৃষকদের নামে সরবরাহ করে ব্যবসায়ীরাই লাভবান হচ্ছেন। জেলার সাত উপজেলার ছয় খাদ্য গুদামে এবারে গম সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১০ হাজার ৮৯৪ মেট্রিক টন। ইতোমধ্যেই সংগ্রহ করা হয়েছে সাত হাজার ৭৮২ মেট্রিক টন যা লক্ষ্যমাত্রার শতকরা প্রায় ৮০ ভাগ।

এরমধ্যে গুরুদাসপুর এবং সিংড়া উপজেলার খাদ্য গুদামে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী সব গম কেনা হয়ে গেছে। বড়াইগ্রামের বনপাড়া খাদ্য গুদামে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক গম কেনা হয়েছে। সংগ্রহের সরকারী নীতিমালা অনুযায়ী কৃষি কার্ডধারী কৃষকদের কাছ থেকে ২৩ টাকা কেজি দরে গম কেনার কথা।

গমের বাজার দর কম থাকায় ব্যবসায়ীরা ১৭ থেকে ১৮ টাকা কেজি দরে গম কিনে তা এখন বেশী দামে সরকারের কাছে সরবরাহ করছেন। এতে করে ব্যবসায়ীরা টন প্রতি পাঁচ থেকে সড়ে পাঁচ হাজার টাকা লাভ করছেন। এমনকি নাটোর জেলার বাহিরে থেকে কম দামে কিনে মজুদ করে রাখা গমও ব্যবসায়ীরা খাদ্য গুদামে সরবরাহ করছেন।

এভাবে নাটোর জেলায় সরকারিভাবে বিভিন্ন খাদ্য গুদামে ব্যবসায়ীরা কৃষক না হয়েও কৃষকদের কার্ড ব্যবহার করে গম সরবরাহ করছেন। এসব ক্ষেত্রে গম ব্যবসায়ীরা তাদের নিজস্ব গুদাম থেকে ট্রাক বোঝাই গম বের করে খাদ্য গুদামের কাছাকাছি কোথাও ওই ট্রাক থেকে নামিয়ে পাওয়ার ট্রিলারে করে গুদামে সরবরাহ করছেন। এসময় অবশ্য সরকারী নীতিমালা অনুযায়ী ব্যবসায়ীরা তাদের পরিচিত কোন একজন কৃষি কার্ডধারী কৃষককের নামেই গম সংগ্রহ করছেন।

এক্ষেত্রে ব্যবসায়ীরা প্রয়োজনে কিছু টাকার বিনিময়ে কার্ডধারী কৃষকদের কাছ থেকে কার্ড সংগ্রহ করে গুদামে গম সরবরাহ করছেন। জেলার সদর খাদ্য গুদামে গম সংগ্রহে বেশ কিছু অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। ভেজা গম না নেয়ার ব্যাপারে খাদ্য বিভাগের কঠোর নির্দেশনা থাকার পরেও এই গুদামে ভেজা গম কেনা হয়েছে। এমনকি একদিন গম সংগ্রহ বন্ধ রেখে ভেজা গম পরিবর্তন করাও হয়েছে।

কৃষক প্রতি ১০ মণ থেকে শুরু করে তিন মেট্রিক টন গম গুদামে সরবরাহ করার কথা থাকলেও বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই সে নিয়ম মেনে চলা হয়নি। নাটোর জেলার সবক’টি খাদ্য গুদামে গম সরবরাহকারীদের সংখ্যা থেকে পাওয়া যায় তার প্রমাণ। খাদ্য বিভাগের হিসাব অনুযায়ী প্রায় প্রত্যেক কৃষকই তিন টন করে গম সরবরাহ করেছেন অর্থাৎ সরবরাহের নীতমালা মেনে কৃষিকার্ডধারীর নামে খাদ্য গুদামে গম সরবরাহ করা হলেও প্রায় সবার নামেই তিন মেট্রিক টন করে গম সরবরাহ দেখানো হয়েছে।

কোন প্রান্তিক চাষী ১০ মণ বা ১৫ মণ গম সরবরাহ করেছেন এমন সংখ্যা একদমই নেই বল্লে চলে। এসব ব্যাপারে নাটোর সদর খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ নুরুজ্জামান জানান, তার গুদামে গম সংগ্রহে কোন অনিয়ম হচ্ছেনা এবং সরকারের বেঁধে দেয়া নীতিমালা মেনেই গম সংগ্রহ করা হচ্ছে। তার ওখানে কোন ব্যবসায়ী গম সরবরাহ করতে পারছেনা তবে কেউ যদি কৃষি কার্ডধারী কৃষককে ম্যানেজ করে তার কার্ডে গম সরবরাহ করেন তাহলে তিনি তা নিতেও বাধ্য।

জেলা খাদ্য নিযন্ত্রক মোঃ মনিরুল ইসলাম বলেন, তিনি সব সময় জেলার সব খাদ্য গুদামের দায়িত্বে থাকা ভারপ্রাপ্ত কমকর্তার সাথে যোগযোগ রাখছেন এবং প্রয়োজনে পরিদর্শনও করছেন। নাটোর সদরের খাদ্য গুদামে সামান্য কিছু ভেজা গম কেনার খবর পেয়ে তিনি তাৎক্ষণিক নির্দেশ দিয়ে সেই গম বদল করিয়ে শুকনা গম নিয়েছেন।

তিনি জানান, কোথায় ব্যবসায়ীরা ট্রাক থেকে গম নামিয়ে পাওয়ার ট্রিলারে করে এনে খাদ্য গুদামে সরবরাহ করছেন সেটা তার জানা নেই আর তাছাড়া তার খাদ্য গুদামে সরবরাহকারীরা সবাই কৃষি কার্ডধারী কৃষক। সরবরাহ করা গমের দাম সরাসরি কৃষিকার্ডধারী কৃষকের ব্যংক হিসাবেই জমা করা হবে। তিনি রাজনৈতিক চাপ উপেক্ষা করেও ভেজা গম এবং ব্যবসায়ীদের গম না কেনার ব্যাপার খুব শক্ত অবস্থানে রয়েছেন বলে দাবী করেন।



মন্তব্য চালু নেই