নারী শিল্প উদ্যোক্তা :
নাটোরের মেয়ে সোহানী হোসেন আমাদের গর্ব
দেশের অন্যতম নারী শিল্প উদ্যোক্তা নাটোরের মেয়ে পাবনার পুত্রবধু সোহানী হোসেন। ইতোমধ্যে নাটোরের মেয়েটি তার ব্যবসায়িক সুনাম দেশের গন্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে স্থান করে নিয়েছে। সোহানী হোসেন বর্তমানে ইউনিভার্সাল গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। তার স্বামী মরহুম আলহাজ্ব মোবারক হোসেন রত্ন ছিলেন আর্ন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন শ্যুটার, বিশিষ্ট শিল্পপতি, রোটারিয়ান ও সমাজসেবক।
১৯৬৭ সালের ২২শে জুন নাটোর জেলা সদরে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে তার জন্ম। পিতা আবু সাঈদ ভূঁইয়া ও মাতার নাম লুৎফন নাহার। সোহানী হোসেন রাজশাহী চিনিকল প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ করেন। ছোট বেলা থেকেই অন্য সবার চাইতে তিনি ছিলেন একটু ভিন্ন। তাই সহজেই নজর কারতে পারতেন সকলের। ১৯৭১ সালে জুন মাসের মাঝামাঝি । নাটোর স্টেডিয়ামে পাক বাহিনী ক্যাম্প তৈরি করে। স্টেডিয়াম সংলগ্ন সোহানী হোসেনের বাবারাবাড়ি। তখন ছিল এলাকা পুরুষশূন্য। প্রতিদিন রাতে ক্যাম্পে চলে অমানবিক নির্যাতন। কোন সময় পুরুষ কোন সময় যুবতী নারীর আর্তচিৎকার। সোহানী হোসেনের বাবা মা আদর করে ডাকতেন সোনা। ছোট কোমলমতি সোনার মনেও পাক সেনাদের বিরুদ্ধে জাগতো বিদ্রহের আগুন। একদিন সকালে হাঁটতে হাঁটতে ক্যাম্পের ভেতর ঢুকে পড়েন সোনা। দেখে রাতভর অত্যাচারিত রক্তাক্ত মানুষের করুন চেহারা। পাকিস্তানী এক অফিসার তাকে আদর করলে তখনকার ছোটমনি সোনা তখন তার দুই গালে চড় বসিয়ে দেয়। মেজর তাকে ক্ষোভে বলতে থাকে তুম মুক্তি হ্যায় মুক্তি। সেই থেকে তাকে অনেকেই ছোট মুক্তিযোদ্ধা বলে ডাকতো এখনো ডাকে। বইপড়া, ছবি আঁকা, গান শোনা, বেড়ানো ও বাগান করা তার শখ। সবুজ পাতায় হরেক রঙের ফুলে ভড়া বাগান তার খুব প্রিয়। বেড়ানোর মধ্য দিয়ে সুজলা-সুফলা শষ্য-শ্যামল নৈসর্গিক সৌন্দর্যে গড়া এই বাংলার রূপ অবলোকন করেন তিনি। ছুটে যান দুখি মানুষের দ্বারে। অবসর পেলেই বই পড়েন, ছবি আঁকেন, গান শোনেন।ছোটবেলা থেকেই তিনি বিভিন্ন শিল্প, সাংস্কৃতিক, সামাজিক ও ক্রীড়া জগতের সাথে জড়িত ছিলেন। তিনি নাটোর সরকারি বালিকা বিদ্যালয় থেকে ১৯৮৩ সালে এসএসসি, নবাব সিরাজ-উদ্-দৌলা কলেজ থেকে এইচএসসি ও নবাব সিরজ-উদ্-দৌলা ডিগ্রি কলেজ থেকে বিএ পাস করেন। পড়ালেখার পাশাপাশি বিভিন্ন সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে ছিল তাঁর ব্যাপক অংশগ্রহণ । স্কুলজীবনে তিনি কবিতা, ছোটগল্প ও নাটক রচনা করতেন যা বিভিন্ন স্মরণিকা ও পত্র-পত্রিকায় বহুবার প্রকাশ হয়েছে। তিনি একজন ভাল অ্যাথলেট ছিলেন। স্কুল জীবনে বিভাগীয় দৌড় প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অধিকার করেছিলেন। শিক্ষাজীবন শেষ করার আগেই তিনি ১৯৮৯ সালে পাবনার বিশিষ্ট শিল্পপতি এবং আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন শ্যুটার আলহাজ মোবারক হোসেন রত্নর সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন।
সংসার জীবনে তিনি একজন সফল মাতা। বাচ্চাদের স্কুলের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ সার্বিক দায়িত্ব পালন করেন তিনি। অপরদিকে স্বামীর সামাজিক কর্মকান্ডে সহযোগিতা করতে গিয়ে পাবনার বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাথে জড়িয়ে পড়েন।
পরে স্বামী দীর্ঘদিন দুরারোগ্য ক্যান্সারে অসুস্থ থাকায় তার দেয়া দায়িত্ব পেয়ে তাকে ব্যবসার হাল ধরতে হয়। স্বামীর মৃত্যুর পরে তিনি সফলভাবে স্বামীর দেয়া দায়িত্ব পালন করেন এবং মহিলা শিল্প উদ্যোক্তা হিসাবে দেশে ও বিদেশে ব্যাপক সুনাম অর্জন করেছেন। বর্তমানে তিনি পাবনার ইউনিভার্সাল গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব পালন করছেন। গবেষণা করছেন মাশরুম নিয়ে। মাশরুম ক্যান্সার প্রতিরোধ করে জেনে তিনি এর প্রচার ও প্রসারে ব্যাপক ভূমিকা রাখছেন। নিজের উদ্যোগে তৈরি করেছেন মাশরুমের খামার। তিনি একজন সফল রোটারিয়ান ও মেজর ডোনার। নিজে গান শিখতেন গান গাইতেন। স্কুল-কলেজ পর্যায়ে সক্রিয় অংশগ্রহণ করতেন বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে। বর্তমানে তিনি পাবনা ও পাবনার বাইরের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক দলকে পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে এবং সরাসরি অংশগ্রহণ করে এগিয়ে নিয়ে যেতে ভূমিকা রাখছেন। তিনি চ্যানেল আই সেরাকণ্ঠ ও ক্ষুদে গানরাজ ফাইনালে অংশ নেয়া শিল্পীদেরকে আরও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছেন। সামাজিক দায়বদ্ধতা ও মনোযন্ত্রণার আপন তাগিদে শাহীনার সাভারে ভবনধসে নিহত শাহীনার শিশুপুত্রের ভরণপোষণের দায়িত্বনিয়েছেন পাবনার সোহানী হোসেন । এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় কুষ্টিয়ার এক মেধাবী দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীর উচ্চশিক্ষার সার্বিক দায়িত্ব নিয়েছেন বিশিষ্ট নারী শিল্প উদ্যোক্তা পাবনার ইউনিভার্সেল গ্রুপে ব্যবস্থাপনা পরিচালক কবি সোহানী হোসেন। ব্যবসার পাশাপাশি তিনি পাবনা ও নাটোরসহ দেশের বিভিন্ন বাইরে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক, সামাজিক, ধর্মীয়ও ক্রীড়া সংগঠনকে পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে এবং সরাসরি অংশগ্রহণের মাধ্যমে এগিয়ে নিতে জোরালো ভূমিকা পালন করেছেন। ব্যক্তিগতভাবেও হাত বাড়িয়েছেন বহু মানুষের সহযোগিতায়। তাঁর সহযোগিতায় বেশ কয়েকজন অদম্য মেধাবী শিক্ষার আলোয় আলোকিত হচ্ছেন। যুবসমাজকে সময়-উপযোগী করে গড়ে তুলতে তিনি বহু প্রতিষ্ঠানে কম্পিউটারসহ আধুনিক যন্ত্রপাতি দিয়েছেন। কারো দুঃখ, কষ্ট, দুর্দশা দেখলেই তিনি সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছেন। বন্যা, খরা, শীতে অসহায় মানুষের পাশে থাকছেন। খাদ্য, বস্ত্র নিয়ে ছুটে গেছেন তাদের কাছে। পঙ্গু, অসহায়দের অসহায়ত্ব দূর করতে হুইল চেয়ার, রিকশা-ভ্যান কিনে দিয়েছেন। রোদ বৃষ্টিতে ভিজে পাবনা নার্সিং ইনস্টিটিটিউটের শিক্ষার্থীরা হাসপাতালে আসতো। তাদের চলাচলের সুবিধার্থে তৈরি করে দিয়েছেন ফুট ছাউনি। মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের স্মরণে একটি স্মৃতি স্তম্ভ তৈরিতে তিনি প্রধান পৃষ্ঠপোষকের ভূমিকা পালন করেছেন। পাবনা জেলা কারাগারে শিশু ও নারীদের উন্নয়নে সহযোগিতা করছেন নিয়মিত। এছাড়া বহু মসজিদ, মন্দির, এতিমখানা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের উন্নয়নের জন্য সহযোগিতা করে যাচ্ছেন। শোভা নামে একটি মেয়ে এক সময় মাদকাসক্ত ছিল। মাদক বেচাকেনা ও সেবন ছিল তার নিত্য দিনের কাজ। একপর্যায়ে মেয়েটি ধরা পড়ে জেলহাজতে যায়। জেল পরিদর্শনে গিয়ে সোহানী হোসেনের সঙ্গে তার পরিচয় হয় । তিনি মেয়েটির দুঃখ-দুর্দশার কথা শুনে সহযোগিতার হাত বাড়ান। মাদকাসক্ত ভয়াল জীবন থেকে ফিরিয়ে আনেন স্বাভাবিক জীবনে। কর্মস্থানের ব্যবস্থা করে দেন। শোভাকে নতুন জীবন দিয়েছেন।সর্বোপরি সোহানী হোসেন মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছেন। নিজেকে সঁপেছেন মানুষের মাঝে।
তিনি বলেছেন- নিজের অর্জন দিয়ে দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখা তাঁর আগামী দিনের সংকল্প।
স্কুল জীবন থাকাকালীন সময় থেকেই তিনি কবিতা, ছোটগল্প ও নাটক রচনা করতেন। বিভিন্ন স্মরণিকা ও পত্র-পত্রিকায় তার লেখা নাটক, ছোট গল্প ও কবিতা ছাপা হয়েছে বহুবার।তিনি কবিতা, গান, গল্প লিখে, ছবি এঁকে জয় করতে চেয়েছেন মানুষের মন। অভাবনীয় সাড়াও পেয়েছেন তাতে। তিনি কবিতা, গান, গল্প লিখে, ছবি এঁকে জয় করতে চেয়েছেন মানুষের মন। অভাবনীয় সাড়াও পেয়েছেন তাতে। তাঁর লেখা কবিতার বই সমুদ্র , সমুদ্র তরঙ্গ ও তৃতীয় একজন ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে পাঠক সমাজে। লেখা কবিতা নিয়ে দেশের নন্দিত শিল্পী বাপ্পা মজুমদারের সুরে এবং জনপ্রিয় আবৃত্তিকার শিমুল মুস্তাফা ও ঈশিকা আজিজের কণ্ঠে তৈরি হয়েছে আবৃত্তির সিডি তৃতীয় একজন। তাঁর আঁকা ছবি নিয়ে প্রকাশিত হয়েছে ছবি গ্রন্থ “কষ্টগুলো আটকে থাকে দুই মলাটের ভাজে”। গীতিকার ও গল্পকার হিসাবেও তিনি নিজেকে তুলে ধরেছেন মানুষদের মাঝে। তার লেখা বেশ কয়েকটি গান এখন জনপ্রিয়তার শীর্ষে অবস্থান করছে। তার মা গল্প থেকে তৈরি হচ্ছে চলচ্চিত্র সত্ত্বা। তার লেখা বেশ কয়েকটি গান এখন জনপ্রিয়তার শীর্ষে অবস্থান করছে। ২০১৪ সালে জনপ্রিয় শিল্পী ও কম্পোজার বাপ্পার কম্পোজিশনে কবি সোহানী হোসেনের কবিতা নিয়ে প্রকাশ হল আবৃত্তির অডিও আ্যালবাম তৃতীয় একজন। কবি সোহানীর কবিতায় কন্ঠ দিয়েছেন বিখ্যাত আবৃতি শিল্পী শিমুল মোস্তফা ও বাংলা ভিশনের নিউজ রিডার ইশিকা আজিজ ।
স্কুল জীবনে বিভাগীয় দৌড়ে ১ম স্থান অধিকার করেন। স্বামীর জীবদ্দশায় বহুবার তার সাথে ও পরে ব্যবসায়িক প্রয়োজনে আমেরিকাসহ বিশ্বের অনেক দেশ তিনি ভ্রমণ করেছেন। বই পড়া, ছবি আঁঁকা, গান শোনা ও বেড়ানো তার পছন্দের। তিনি বেড়ানোর মধ্য দিয়ে সুজলা সুফলা শস্য শ্যামলা নৈসর্গিক সৌন্দর্যে ভরা এই বাংলার রূপ অবলোকন করেন এবং ছুটে যান দুখি মানুষের দাড়ে।
বর্তমানে তিনি, পাবনা রোটারী ক্লাবের নির্বাচিত সভাপতি, পাবনা রাইফেল ক্লাবের আজীবন সদস্য, পাবনা বনমালী ইনস্টিটিউটের আজীবন সদস্য ও কার্যকরী কমিটির সদস্য, পাবনা মহিলা ক্রীড়া সংস্থার সহ-সভানেত্রী, পাবনা কারাগারের বেসরকারি কারা পরিদর্শক, পাবনা সরকারি শিশু পরিবার পরিচালনা কমিটির সদস্য, পাবনা মহিলা ক্লাবের কার্যকরী সদস্য, পাবনা সদর উপজেলা খাসজমি বন্দোবস্ত কমিটির সদস্য, পাবনা লাগসই প্রযুক্তি জাদুঘরের সদস্য সচিব, আজীবন সদস্য ও কার্যকরী সদস্য পাবনা আঞ্জুমান মফিদুল ইসলাম পাবনা শাখা, আজীবন সদস্য ও কার্যকরী সদস্য বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি পাবনা শাখা, সদস্য পাবনা সদর উপজেলা আইন-শৃংখলা কমিটি, বিদ্যুতসাহী সদস্য পরিচালনা কমিটি, আদর্শ মহিলা কলেজ, পাবনা, বিদ্যুতসাহী সদস্য পরিচালনা কমিটি, শহীদ রফিক আহম্মেদ বালিকা বিদ্যালয়, পাবনা, সদস্য জেলা সমাজকল্যাণ পরিষদ, পাবনাসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনে সক্রিয় সদস্য হিসাবে জড়িত থেকে এসব প্রতিষ্ঠানকে বিভিন্ন পরামর্শ ও আর্থিক সহযোগিতার মাধ্যমে সামাজিক উন্নয়নে অবদান রাখছেন। তিনি ইউনিভার্সাল ফার্মাসিউটিক্যালস লিঃ, ইউনিভার্সাল ফার্মাসিউটিক্যাল¯ (ইউনানী), ইউনিভার্সাল ফুড লিঃ, ইউনিভার্সাল ওয়েল মিল, গ্রিনার রাইস মিল, গ্রিনার মসলা মিল, অনন্ত সিনেমা লিঃ, রূপকথা সিনেমা, প্রেরণা সিনেমার ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তার আগামীর স্বপ্ন নিজের অর্জন দিয়ে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের মাধ্যমে দেশের সঠিক উন্নয়নে ভূমিকা।
মন্তব্য চালু নেই