নববর্ষে কলকাতায় প্রথম মঙ্গল শোভাযাত্রা
বাংলা নববর্ষে এই প্রথম কলকাতাবাসী দেখল মঙ্গল শোভাযাত্রা। এত দিনে কলকাতায় বাংলা নববর্ষ পালনের রেওয়াজ থাকলেও এবারই প্রথম কলকাতার রাস্তায় ঢাকার আদলে বের হয় মঙ্গল শোভাযাত্রা।
শনিবার সকাল সাড়ে আটটায় দক্ষিণ কলকাতার গাঙ্গুলিবাগান থেকে শুরু হয় এই মঙ্গল শোভাযাত্রা। আর শেষ হয় যাদবপুরের বিদ্যার্থী ময়দানে। মঙ্গল শোভাযাত্রার আনুষ্ঠানিক সূচনা করেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক পবিত্র সরকার। এ সময় উপস্থিত ছিলেন চিত্রকর সমীর আইচ, লেখিকা মীরাতুন নাহার, ফাল্গুনী চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ।
কলকাতায় এই মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজন করেছে কলকাতার, ‘বাংলা নববর্ষ উদ্যাপন পরিষদ’। পরিষদের আহ্বায়ক হলেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সহ-উপাচার্য অধ্যাপক সিদ্ধার্থ দত্ত।
মঙ্গল শোভাযাত্রার কথা কলকাতার মানুষ শুনেছে ঢাকা থেকে। সেই ঢাকার অনুপ্রেরণা আর সহযোগিতায় আজ প্রথম কলকাতার রাজপথে বের হয় মঙ্গল শোভাযাত্রা। প্রথম মঙ্গল শোভাযাত্রায়ই এত ভিড় হবে, মানুষ ভাবতেই পারেনি। প্রখর রোদ উপেক্ষা করে এই মঙ্গল শোভাযাত্রা এবার কলকাতাবাসীকে চমকে দিয়েছে, আনন্দ দিয়েছে।
বাংলা নববর্ষ পালনের রেওয়াজ সুদূর অতীত হতে চলে আসছে কলকাতায়। তবে বাংলাদেশে যেভাবে ঘটা করে বাংলা নববর্ষ পালন হয়, সেভাবে কলকাতায় হতো না। এখন হচ্ছে। বাংলাদেশে যে প্রাণের ছোঁয়া আর আবেগ ভরা অনুষ্ঠান ও নববর্ষের মেলা হয়, ইলিশ-পান্তা থেকে চিড়া-মুড়ি-বাতাসা আর দই-মিষ্টি খাওয়ার রেওয়াজ। সেটি এখন কলকাতায়ও শুরু হয়েছে।
১৯৮৯ সাল থেকে ঢাকায় চলে আসছে মঙ্গল শোভাযাত্রা। মঙ্গল শোভাযাত্রা সে এক অভূতপূর্ব দৃশ্য। পয়লা বৈশাখের প্রভাতে মানুষ একাত্ম হয়ে যায়। পা মেলান মঙ্গল শোভাযাত্রায়। রাস্তায় নেমে নাচে-গানে মেতে ওঠেন। আলপনায় ভরিয়ে দেওয়া হয় মহাসড়কের পিচঢালা পথ। নাচের তালে আর গানের সুরে মানুষ একাত্ম হয়। নানা মুখোশ, আর হাতি, ঘোড়া, বাঘ, প্যাঁচা নিয়ে শুরু হয় মঙ্গল শোভাযাত্রা। আর এর আয়োজনে থাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ। এবার কলকাতায় সেই চিত্রই ফুটে উঠেছে।
মঙ্গল শোভাযাত্রাকে ঘিরে দক্ষিণ কলকাতার গাঙ্গুলিবাগান থেকে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত দীর্ঘ প্রায় তিন কিলোমিটার পথজুড়ে ছিল নানা আলপনার ছাপ। ছিল কাঠি নাচ, সাঁওতালি নাচ, রনপা নৃত্য, ঐতিহ্যের গান, লোকগীতি, ঢাকি দলের ঢাকের বাজনা আর শ্রুতি নাটক। মোটকথা জমজমাট ছিল কলকাতার এই মঙ্গল শোভাযাত্রা। শোভাযাত্রায় পা মিলিয়েছেন কলকাতার বিশিষ্টজনেরা। হাজারো মানুষের কলকাকলিতে মুখরিত ছিল এই মঙ্গল শোভাযাত্রা। মঙ্গল শোভাযাত্রায় ছিল বিষ্ণুপুরের ঘোড়া, বাঁকুড়ার প্যাঁচা, সুন্দরবনের বাঘ, ঘোড়া আর হাতির মুখোশসহ নানা ধরনের লোকজ মুখোশ। আর ব্যানার তো ছিলই।
এই মঙ্গল শোভাযাত্রাকে সুন্দর করার জন্য ঢাকা থেকে আসেন একদল চারুকলা শিল্পী। তাঁরাই দিনরাত খেটে তৈরি করেছেন মুখোশসহ নানা লোকজ প্রতীক। এসেছেন চারুকলা শিল্পী তরুণ ঘোষ, আমিনুল ইসলাম আশিক, শহীদ আহমেদ মিঠু, ওবায়দুল করিম রিক্ত, ঋভু আনন্দ, মো. আরাফত হোসেন, সিলভিয়া নাজনীন প্রমুখ। তাঁরা দিনরাত খেটে তৈরি করেছেন নানা মুখোশসহ চিরায়ত বাংলার ঐতিহ্যের নানা প্রতীক।
কলকাতার মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজক বাংলা নববর্ষ উদ্যাপন পরিষদের আহ্বায়ক অধ্যাপক সিদ্ধার্থ দত্ত প্রথম আলোকে বলেন, ‘কলকাতায় এই প্রথম অনুষ্ঠিত হয়েছে মঙ্গল শোভাযাত্রা। আমি মনে করি, এই শোভাযাত্রা কলকাতার সংস্কৃতি অঙ্গনে নতুন মাত্রা যোগ করবে।’ তিনি আরও বলেন, ভবিষ্যতে এই শোভাযাত্রা ছড়িয়ে দেওয়া হবে গোটা রাজ্যের প্রতিটি জেলায়।
মঙ্গল শোভাযাত্রা শেষে যাদবপুরের বিদ্যার্থী ময়দানে আয়োজিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করেন দুই বাংলার শিল্পীরা। ছিল কলকাতার ‘সৃষ্টি’ আর বাংলাদেশের ‘দোহার’। সঙ্গে অন্যান্য শিল্পীরা।
মন্তব্য চালু নেই