নতুন সৌদি বাদশার হুমকি আল-কায়দা, আইএস
আব্দুল্লাহ বিন আব্দুল আজিজ মারা যাওয়ার পর তার সৎ ভাই সালমান সৌদি আরবের বাদশাহ হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন। শুক্রবার সকালে এক বিবৃতিতে রাজপরিবারের পক্ষ থেকে তার মৃত্যু এবং নতুন বাদশাহ’র দায়িত্ব গ্রহণের কথা জানানো হয়েছে।
ফুসফুসের প্রদাহে আক্রান্ত হয়ে কয়েক সপ্তাহ ধরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন আব্দুল্লাহ বিন আব্দুল আজিজ। ২০০৫ সালে সিংহাসনে বসেছিলেন তিনি।
গত ১০ বছরে দায়িত্ব পালনকালে সৌদি আরবে একজন সংস্কারবাদী শাসক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করেছিলেন আব্দুল আজিজ। সৌদি আরবের মতো রক্ষণশীল সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থায় তার সেই সব উদ্যোগ বেশ প্রশংসা পায়।
এক সময় সৌদি রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে কথা বলা নিষিদ্ধই ছিল। কিন্তু সেখান থেকে বেরিয়ে আসেন আব্দুল আজিজ। তার আমলেই মিডিয়া সরকারের বিরুদ্ধে মুখ খোলতে শুরু করে। সরকারের মৃদু সমালোচনা হাসি মুখেই মেনে নিতেন তিনি। রক্ষণশীল সৌদি সমাজে নারীদের ওপর নানা বিধিনিষেধ জারি রয়েছে। তিনি কর্মক্ষেত্রে নারীদের আরো বেশি অংশগ্রহণের পক্ষে ছিলেন। ধর্মীয়গুরুদের বিরুদ্ধেও তার সময়ে কেউ কেউ মুখ খুলেছেন।
আব্দুল আজিজের মতো সালমানকেও একজন মধ্যপন্থি শাসক বলা হয়ে থাকে সৌদি আরবে। ন্যায় পরায়ণতা হিসেবে তার যথেষ্ট সুনাম রয়েছে। কঠোর পরিশ্রমী, নিয়মানুবর্তী হিসেবেও খ্যাতি রয়েছে তার। একজন কূটনীতিক এনডিটিভিকে জানিয়েছেন, বয়সের ভার সত্ত্বেও তিনি খুব কর্মক্ষম। প্রতিদিন সকাল ৭টায় নিয়ম করে অফিসে যান তিনি। সপ্তাহে তিনটি আদালতও বসান।
খবরে বলা হয়েছে, কূটনীতির ক্ষেত্রেও নতুন বাদশাহ বেশ এগিয়ে রয়েছেন। দেশটির ব্যবসা-বাণিজ্য বিনিয়োগে বিদেশি অংশীদারদের সঙ্গেও তার ভালো সম্পর্ক। সম্ভবত: পশ্চিমাদের কাছে পছন্দের তিনি। আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানকেই প্রাধান্য দেন বাদশাহ সালমান। এজন্য তাকে ‘ম্যান অব ডায়ালগ’ বলা হয়ে থাকে। অভ্যন্তরীণ ও বিদেশনীতিও আধুনিক করার পক্ষে তিনি। রাজপরিবারের সদস্যরা তাকে সম্মানের চোখে দেখে থাকেন।
তবে দায়িত্ব পালনকালে দেশটির ‘নিরাপত্তা পরিস্থিতি’ নিয়ে নতুন বাদশাহকে বিপাকে পড়তে হতে পারে। দেশটির নিরাপত্তার ক্ষেত্রে অন্যতম হুমকি হচ্ছে ইসলামি বিচ্ছিন্নবাদীরা। ১০ বছর আগে এমন এক বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন কঠোর হস্তে মোকাবেলা করেন বাদশাহ আব্দুল আজিজ। কিন্তু হুমকি এখনো রয়েই গেছে। দেশটির দক্ষিণে ইয়েমেন। সেখানকার আল-কায়দার একটা বড় হুমকির মুখে রয়েছে রাজপরিবার। আর উত্তরে ইরাক ও সিরিয়ার অংশ বিশেষ দখল করে নেয়া আইএস’র হুমকিও মোকাবেলা করতে হচ্ছে দেশটিকে। দু’টি গ্রুপের অনেক অনুসারীও রয়েছে দেশটিতে।
তবে সংবাদমাধ্যমে বিশ্লেষণে বলা হচ্ছে, নতুন বাদশাহ রক্ষণশীল দেশটিতে খুব একটা পরিবর্তন আনবেন তেমন কেউ আশা করেছেন না। কেননা, জেদ্দায় সাম্প্রতিক বৈঠকগুলোতে নানা বিষয়েই তাকে খুব সতর্ক দেখা গেছে।
নতুন বাদশাহ সালমান জন্মগ্রহণ করেন ১৯৩৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর। বাদশাহ হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার আগে তিনি ১৯৫৫-১৯৬০ এবং ১৯৬৩ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত রিয়াদের গভর্নর ছিলেন। প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। সৌদি আরবের বেশকিছু মিডিয়ার মালিকও সালমান।
মন্তব্য চালু নেই