নগর ভবনের সামনেই জলাবদ্ধতা!

সোমবার বেলা ১টা। টিপ টিপ বৃষ্টি পড়ছে। সকাল থেকেই থেমে থেমে এই বৃষ্টি। আর এই হালকা বৃষ্টির পানিতেই সড়কের অনেকটা জুড়ে পানি জমে গেছে। শুধু পানিই নয় সঙ্গে আছে ময়লা-আবর্জনা। আছে খানাখন্দও। দুর্ঘটনা লেগেই আছে। রাজধানী ঢাকার প্রাণ কেন্দ্র ও নগরীর জলাবদ্ধতা দূর করার দায়িত্ব যাদের কাঁধে সেই ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নগর ভবনের সামনের রাস্তাটির কথা বলছিলাম।

সড়কের জলাবন্ধতা নিয়ে ত্যাক্ত-বিরক্ত ঐ সড়ক দিয়ে চলাচলকারী সাধারণ মানুষ ও ফুটপাতের ব্যবসায়ীরা।

ফয়জুল হক সিদ্দিকী নামে এক পথচারি সড়কটির পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন, আর বলছেন- ঢাকার নাগরিক সমস্যা কে সমাধান করবে। কোটি কোটি মানুষের সমস্যা সমাধানের দায়িত্ব যাদের কাঁধে তাদেরই এই হাল!
সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে কথা বলতে চাইলে সফেদ দাড়িওয়ালা লোকটি ক্ষোভের সুরেই বললেন-‘ভাই লিখে আর কি হবে। লেখাতো কাম হয় না। কিন্তু সমাধান তো হয় না। সবাই শুধু যার যার আখের গোছায়। কেউ নাগরিকদের কথা ভাবে না।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাস্তার পাশেই এক টং দোকানি জানালেন, ‘আমরা খুবই কষ্টে এখানে ব্যবসা করি। বৃষ্টি নামলেই দোকান পাঠ নিয়ে ছুটতে হয় অন্যত্র। এই জায়গার পানি সহজে সরে না। দীর্ঘ সময় জমা হয়ে যাকে।

না সরার কারণ কী জানতে চাইলে ওই দোকানি বলেন, পানি সরানোর কোনো উদ্যোগই চোখে পড়ে না। আমরা কিছু বলতেও পারি না। কারণ আমাদের সমস্যা আছে। কিছু বললেই এখানে আর দোকান করতে দেবে না। আমরা তো ‘ম্যানেজ’ করে দোকান করি।

রতন নামে এক টেম্পু চালক বলেন, এই রাস্তায় গাড়ি চালাতেও সমস্যা হয়। একটু বৃষ্টি হলেই রাস্তার দুই পাশে পানি জমে যায়। অনেক সময় এজন্য গাড়ি অ্যাকসিডেন্টও হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকার রাস্তাগুলোর জলাবদ্ধতা নিরসনে দুইটি সংস্থা কাজ করে। রাস্তাগুলোর সারফেস ড্রেইন ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে ঢাকা সিটি করপোরেশন। আর ডিপ ড্রেইন ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে রয়েছে ওয়াসা। এই দুই সংস্থার সমন্বয়হীনতার কারণে রাস্তাগুলোতে পানি জমে থাকে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের এক পদস্থ কর্মকর্তা বলেন, ‘কোনো এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হলে ওয়াসা বলে এটা সিটি করপোরেশন দেখবে। আর সিটি করপোরেশন বলে এটা ওয়াসা দেখবে। দুই পক্ষের টানাটানিতে সমস্যা আরও জটিল আকার ধারণ করে। অথচ যার যার কার্যপ্রণালী আলাদা করা আছে।’

এই দুই সংস্থার মধ্যে সমন্বয়ের জন্য কি করণীয় জানতে চাইলে ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘নতুন মেয়রদ্বয় দুই সংস্থার মধ্যে সমন্বয় করার উদ্যোগ নিয়েছেন। আশা করছি সামনে এই ধরনের সমস্যা অনেকটা কমে আসবে।’

জানতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন রকিব উদ্দিন বলেন, ‘আমরা জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা ইতোমধ্যে গ্রহণ করেছি। আমাদের কাজ হচ্ছে সারফেস ড্রেইন ব্যবস্থাপনা করা। সেটি আমরা দেখছি। আর ডিপ ড্রেইন ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে ওয়াসা।’

নগর ভবনের সামনেই বৃষ্টির পানিতে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়। এটা নিরসনে উদ্যোগ নেই কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এই সড়কের লাইনে একটু সমস্যা। বিষয়টি দেখা হচ্ছে।’

অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের সমস্যা অনেক। অধিকাংশ সড়কের লাইনে সমস্যা। পানিগুলো আমরা সরিয়ে কোথায় নেবে? খালগুলো ভরাট হয়ে গেছে। অনেক জায়গায় বাড়ি উঠেছে। এসব কারণে পানি সরানো একটা বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে।



মন্তব্য চালু নেই