ধ্বংসস্তূপে মানুষ কতদিন বাঁচে?
ভূমিকম্পের পাঁচ দিন পরে বৃহস্পতিবার কাঠমান্ডুতে একটি ভবনের ধ্বংসস্তূপ থেকে ১৫ বছর বয়সি এক তরুণকে জীবিত উদ্ধার করা হয়। এদিন এক নারীকেও উদ্ধার করা হয়। নেপালে ভূমিকম্পে পর সবশেষ এ দুজনকে উদ্ধার করা হয়েছে। দুর্যোগের পর কত সময় মানুষ ধ্বংসস্তূপে বেঁচে থাকতে পারে, দেখে নেওয়া যাক কয়েকটি ঘটনা।
একটি দুর্যোগ ঘটে যাওয়ার সাধারণত পাঁচ থেকে সাত দিনের মধ্যে অনুসন্ধান ও উদ্ধারাভিযান সমাপ্ত ঘোষণা করে জাতিসংঘ। দুর্ঘটনার এক থেকে দুদিনের মধ্যে ধ্বংসস্তূপে সাধারণত কারো বেঁচে থাকার কথা নয়। কিন্তু এই অবস্থায় মানুষের অনেক দিন বেঁচে থাকার নজিরও রয়েছে।
২০১৩ সালের মে মাসে বাংলাদেশে রানা প্লাজার ধ্বংসস্তূপ থেকে ১৭ দিন পরে এক নারীকে জীবিত উদ্ধার করা হয়। ‘আমাকে বাঁচাও’ বলে কাঁদতে শুনে অডিও এবং ভিডিও যন্ত্র ব্যবহার করে তার সঠিক অবস্থান নির্ণয় করা হয়। পরে তাকে জীবিত উদ্ধার করা হয়। বিষয়টি বিশ্বজুড়ে সাড়া ফেলে।
২০১০ সালে হাইতিতে ভূমিকম্পের ফলে একটি দোকানের ভেতরে আটকা পড়ার ১২ দিন পর উদ্ধার করা হয় এক ব্যক্তিকে। ওই দোকান কয়েক বার লুট হয়। কিন্তু কেউ তার আর্তনাদ শুনতে পায়নি। অবশেষে উদ্ধারকারী দল তার সন্ধান পায়। ওই ভূমিকম্পে কমপক্ষে ২ লাখ মানুষের প্রাণহানি হয়।
২০০৫ সালে আরো একটি ব্যতিক্রমী ঘটনা ঘটে পাকিস্তান শাসিত কাশ্মীরে। ওই অঞ্চলে ভূমিকম্পের ফলে নিজের রান্নাঘরে আটকা পড়েন চল্লিশোর্ধ্ব এক নারী। দুই মাসেরও বেশি সময় পরে উদ্ধার হন তিনি। চিকিৎসকরা বলেছিন, এটি নিঃসন্দেহে এক আজব ঘটনা। নিজে ঠিকমতো নড়তে পারে না, এমন একটি স্থানে ৬০ দিনের বেশি সময় বেঁচে ছিলেন ওই নারী। তার নাম নকশা বিবি।
অক্সিজেন
লন্ডনভিত্তিক আন্তর্জাতিক উদ্ধার কমিটির (আইআরসি) কো-অর্ডিনেটর জুলি রায়ান বলেন, ভূমিকম্পে কারো বেঁচে থাকা নির্ভর করে প্রথম ঝাঁকুনির সময় কার ভাগ্যে কী ঘটছে, তার ওপর।
‘সুবিধাজনক অবস্থা হলো- কেউ আটকা পড়েছে এবং প্রাণ নিয়ে সমাধিস্থ হয়েছে কিন্তু বাইরে থেকে অক্সিজেন আসার পর্যাপ্ত সুযোগ রয়েছে। তিনি আঘাত পাননি এবং তার আশপাশে কিছু পানি পাওয়ার সুযোগ রয়েছে।’
‘যেখানে কেউ আটকা পড়েছে, সে স্থানের চারপাশে কিছুটা জায়গা করে নেওয়ার সুযোগ আছে এবং এতে তিনি আহত হবেন না’- এমন অবস্থা থাকা জরুরি।
জুলি রায়ান জানান, ২০০৫ সালে পাকিস্তানে ভূমিকম্পে একটি স্কুলের ধ্বংসস্তূপে আটকা পড়া তিন শিশুকে পাঁচ দিন পরে আইআরসির উদ্ধারকারী দল জীবিত উদ্ধার করে।
বিবিসির পর্যবেক্ষণ মতে, দুযোর্গের মুহূর্তে কোনো ধ্বংসস্তূপে আটকা পড়েও দীর্ঘদিন বেঁচে থাকা সম্ভব, যদি তিনি অক্সিজেন, কিছু পানি পান এবং আহত না হন। এভাবে খুব আটসাঁট জায়গায়ও বেশ কিছু দিন বেঁচে সম্ভব। যদি তার পাশে লাশও পড়ে থাকে, তবু তিনি বেঁচে যেতে পারেন।
তথ্যসূত্র : বিবিসি অনলাইন।
মন্তব্য চালু নেই