দৈনিক ১৬০০ টন বর্জ্য থাকছে নগরীতে
চলতি বছরকে পরিচ্ছন্ন ঢাকা হিসেবে ঘোষণা করা হলেও কোনো অগ্রগতি নেই ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে (ডিএসসিসি)। উৎপাদিতে বর্জ্যের দুই-তৃতীয়াংশই থেকে যাচ্ছে। এসব বর্জ্য বৃষ্টির পানি ও স্যুয়ারেজ লাইন দিয়ে বিভিন্ন ডোবা-খাল ও নদীতে গিয়ে পড়ে। তাছাড়া নগরীর বিভিন্ন সড়ক মোড়ে থাকা বড় বড় বর্জ্যবাহী কনটেইনার ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। চাহিদা দিয়েও পাওয়া যাচ্ছে না বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উপকরণ সামগ্রী। ফলে নগরী থেকে সঠিকভাবে বর্জ্য সংগ্রহ না।
চলতি বছর ডিএনসিসির বর্জ্য ব্যবস্থার পরিসংখ্যান পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, সংস্থাটির আওতায় দৈনিক আবর্জনা উৎপন্ন হয় প্রায় ৩ হাজার ৫০০ টন। এর মধ্যে দৈনিক অপসারণ করা হচ্ছে ১ হাজার ৯০০ টন। বাকি ১ হাজার ৬০০ টন বর্জ্য থেকে যায় নগরীতে। যত্রতত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা এসব আবর্জনা ডিএসসিসি এলাকার বিভিন্ন ডোবা-নালা এবং নদী-খালে গিয়ে ভরাট হচ্ছে। একই সঙ্গে এসব আবর্জনা ডিএসসিসি এলাকার পরিবেশও মারাত্মকভাবে দূষিত করছে। এ চিত্রই বলে দিচ্ছে বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সংস্থাটির কোনো সফলতা নেই।
বিভিন্ন গবেষণায় বলা হয়েছে, বসবাসের অনুপোযোগী শহরগুলোর মধ্যে রাজধানী ঢাকা অন্যতম। ঢাকাকে বাসযোগ্য হিসেবে গড়ে তোলার জন্য দুই মেয়র বিভিন্ন প্রকল্প ঘোষণা দিয়েছেন। এর মধ্যে দক্ষিণের মেয়র সাঈদ খোকন চলতি বছরকে ‘ক্লিন ঢাকা’ হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন। কিন্তু বছর শেষে ফলাফল দেখা গেছে শূন্য।
দীর্ঘদিন ধরে রাজধানীর আবর্জনা ব্যবস্থাপনায় বেহাল দশা বিরাজ করছে। সংস্থার প্রথম মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন নির্বাচিত হওয়ার পর নগরীকে একটি পরিচ্ছন্ন ও সবুজ হিসেবে গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দেন। চলতি বছরকে ক্লিন ঢাকা হিসেবওে ঘোষণা দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু তার কোনো ঘোষণারই সুফল দেখতে পায়নি নগরবাসী।
মেয়র খোকন মনে করেন, শুধু কাজে নয়, এজন্য নগরবাসীর সচেতনতাও দায়ী। তাই নগরবাসীকে সচেতন করে তুলতে বিভিন্ন সময়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বিশিষ্ট ব্যক্তিদের বর্জ্য অপসারণের কাজে সম্পৃক্ত করাসহ নানা কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। কিন্তু তাতেও কোনো সফলতা আসেনি।
এ প্রসঙ্গে ডিএসসিসির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ডিএসসিসি এলাকায় দৈনিক প্রায় সাড়ে ৩ হাজার টন বর্জ্য উৎপন্ন হয়। এর মধ্যে প্রায় ২ হাজার টন বর্জ্য ডিএসসিসি অপসারণ করতে পারছে। বাকি বর্জ্যে কিছু টোকাই সংগ্রহ করে নিচ্ছে এবং অবশিষ্ট বর্জ্য রাজধানীর বিভিন্ন নিচু এলাকা হয়ে ডোবা-নালা এবং নদীতে গিয়ে পড়ে।
ডিএসসিসি থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, ২০১৫ সালের ডিএসসিসি মোট আবর্জনা অপসারণ করে ৬ লাখ ৪৩ হাজার ৯৮৪ টন। সেই হিসেবে দৈনিক আবর্জনা অপসারণের গড় ১ হাজার ৮০০ টন। আর ২০১৬ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ডিএসসিসি মোট আবর্জনা অপসারণ করেছে ৫ লাখ ৪৩ হাজার ৫২৩ টন। সেই হিসাবে দৈনিক আবর্জনা অপসারণের গড় ১ হাজার ৯০০ টনের কিছু বেশি। বিগত এক বছরে ডিএসসিসির আবর্জনা অপসারণ বিভাগের সক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে ১০০ টনের কিছু বেশি।
নগরীকে পরিচ্ছন্ন রাখতে চলতি বছর ৫ হাজার ৭০০টি মিনি ডাস্টবিন স্থাপন করেছে ডিএসসিসি। কিন্তু তাতেও সফলতা নেই। নির্মাণের কিছু দিন যেতে না যেতেই অধিকাংশ বিন ভেঙে ও চুরি হয়ে যায়। এসব মিনি ডাস্টবিন নষ্ট হওয়ার পর পুনঃস্থাপন করা হচ্ছে না। এ কার্যক্রম থেকে সরে এসেছে ডিএসসিসি।
সরেজমিনে রাজধানীর কাকরাইল, শান্তিনগর, মুগদা, বাসাবো, মানিকনগর, মালিবাগ, যাত্রাবাড়ী, মগবাজার, পান্থপথ, নিউমার্কেট, আজিমপুর, গুলিস্তান, শাহবাগ, পল্টন, সায়েদাবাদ, টিকাটুলি, দয়াগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে অধিকাংশ বিনই ভাঙা। আবার অনেক এলাকার বিনগুলোতে ময়লা জমে আছে। কিছু কিছু বিন চুরিও হয়ে গেছে।
নগরবাসীর অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে এসব বিনে ময়লা জমে থাকলেও কেউ পরিষ্কার করে না। তাই অনেক জায়গায় এসব বিন উল্টা করে বেঁধে রেখেছেন তারা।
ডিএসসিসির স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য মতে, এলাকাবাসী ডিএসসিসির আওতাভুক্ত ডোবা-নালায় ময়লা-আবর্জনা ফেলায় তাদের সেসব পরিষ্কার করতে হচ্ছে। এজন্য বার্ষিক বহু টাকা খরচ করতে হচ্ছে। চলতি অর্থবছর ডিএসসিসির অঞ্চল-২ এলাকার ৩১২ বিঘা জলাশয়, ডোবা-নালা পরিষ্কার করেছে। অঞ্চল-৩ এলাকার প্রায় ৩২ বিঘা আর অঞ্চল-৫ এলাকার ১৪৪ বিঘা ৯ কাঠা ডোবা-জলাশয়ের ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার করেছে। নগরবাসীর বর্জ্যের কিছু অংশ এসব স্থানে পড়ায় প্রতি বছর এ গ্লানি টানতে হচ্ছে সিটি কর্পোরেশনকে।
অপরদিকে ডিএসসিসির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের এক জরিপে দেখা গেছে, সংস্থাটি বর্জ্য সংরক্ষণ ও পরিবহনে মোট ৩২১টি কন্টেইনার ব্যবহার করছে। এর মধ্যে ১৫৭টি কন্টেইনার ভাঙা। ১৫৭টি কন্টেইনারের মধ্যে ৩৫টি কন্টেইনার মেরামত যোগ্য এবং ৮২টি একেবারেই মেরামতের অনুপযোগী। আর চলতি বছর ১০৪টি নতুন কন্টেইনারের চাহিদাও দিয়েছে ডিএনসিসির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ।
এসব বিষয়ে ডিএসসিসির অতিরিক্ত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা খন্দকার মিল্লাতুল ইসলাম বলেন, আমাদের কিছু কিছু বিন ও কন্টেইনার ভেঙে গেছে। নতুন বছরে আমরা শতাধিক কন্টেইনারের চাহিদা দিয়েছি। এগুলো পেলে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কাজে আরো অগ্রগতি আসবে।
তিনি জানান, নগরী পরিষ্কার ও পরিচ্ছন্ন রাখতে নগরবাসীকেও সচেতন হতে হবে। সবাই সচেতন হলে অপরিচ্ছন্নতা থাকবে না। আমরা যদি এ নগরীকে নিজের মতো মনে করি তাহলে স্বপ্নের ঢাকা হবে আমাদের ঢাকা।
মন্তব্য চালু নেই