দেশে ঢোকার অপেক্ষায় একশ জঙ্গি

নিষিদ্ধ ঘোষিত জামায়াত-উল-মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি) আবারো বাংলাদেশে নতুনভাবে একটি ঘাঁটি গড়তে তৎপর রয়েছে। এ জন্য আসামে বসে প্রায় একশ প্রশিক্ষিত ক্যাডার নিয়ে ছক আটছিলো ‘ডাক্তার’ বলে খ্যাত শাহনূর আলম। বাংলাদেশি এই জঙ্গি সর্দার শুক্রবার আসামে ধরা পড়ার পর ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এনআইএর কর্মকর্তাদের কাছে একথা স্বীকার করেছে।

কলকাতায় এনআইএর এক কর্মকর্তা জানান, বর্ধমান বিষ্ফোরণের মূল হোতা এই শাহনূর আলম। আসাম পুলিশ তাকে চিহ্নিত করেছে ওই রাজ্যে জিহাদী সন্ত্রাসবাদের প্রধান নেতা ও অর্থদাতা হিসেবে।

আসাম পুলিশের একজন কর্মকর্তার বরাত দিয়ে এনআইএর ওই কর্মকর্তা আরো বলেন,‘শেখ হাসিনাকে হত্যার মাধ্যমে সরকারকে অস্থিরতার মধ্যে ফেলার লক্ষ্যেই জেএমবি আগের মতই সক্রিয় রয়েছে। এ জন্য পূর্ব-ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে তারা গোপন আস্তানা গড়ছে। আর সেখান থেকেই বাংলাদেশে সন্ত্রাসী তৎপরতা অব্যাহত রাখার কৌশল নিয়েছে জেএমবি।

এদিকে ভারতের প্রভাবশালী দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকা জানিয়েছে, পশ্চিমবঙ্গকে একটি হাব হিসেবে ব্যবহার করে জেএমবি অন্তত ১০০ ক্যাডারের একটি শক্ত জঙ্গি ঘাঁটি গড়ে তোলে। যাদের নিয়ে বাংলাদেশে হামলার পরিকল্পনা ছিল শাহনূরের। কিন্তু বর্ধমানের গোপন আস্তানায় বোমা বানাতে গিয়ে বিষ্ফোরণ ও তাতে দুই জঙ্গি নিহত হওয়ার পর বিপাকে পড়ে বাংলাদেশে নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠনটি।

আনন্দবাজার পত্রিকার খবরে আরো বলা হয়েছে, বাংলাদেশের জঙ্গিরা পশ্চিমবঙ্গ ও আসামে তাদের ঘাঁটি শক্ত করছে এই প্রত্যাশায় যে, এখান থেকে পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি নিয়ে অপারেশনের নকশা সাজিয়ে নিজেদের দেশে হামলা চালাবে। আসাম পুলিশের মহাপরিচালক খাগেন শর্মার উদ্বৃতি দিয়ে এমন খবর প্রচার করে দৈনিকটি।

ভারতের জাতীয় তদন্ত সংস্থা (এনআইএ) ঝাড়খণ্ড, অন্ধ্রপ্রদেশ, পশ্চিমবঙ্গ এবং আসামে জেএমবি জঙ্গিদের অবস্থান ও কর্মকাণ্ড জানতে পেরে ব্যাপক তদন্ত চালাচ্ছে। তার মনে করছেন, আসামের বারাক উপত্যাকা ও নিম্নাঞ্চলে জিহাদী গ্রুপের আনাগোনা বেশি। এসব এলাকায় আস্তানা গড়তে জিহাদীরা স্থানীয় মেয়েদের বিয়ে করছে।

শাহনূর আলম সীমান্ত এলাকায় জঙ্গিদের পরিচালনার দায়িত্বেই কেবল ছিলেন তা নয়, স্থানীয় যুবকদের দলে ভেড়ানোও ছিলো তার একটি অন্যতম কাজ। এ জন্য মাসখানেক আগে শাহনূরকে আটক করতে ৫ লাখ রুপি পুরস্কার ঘোষণাও করে এনআইএ। এর আগে গত ৬ নভেম্বর শাহনূর আলমের স্ত্রী সুজানা বেগমকে গৌহাটি থেকে আটক করে এনআইএ। সুজানাও জঙ্গি দলের এক সক্রিয় সদস্য।

গত ২ অক্টোবর বর্ধমান বিষ্ফোরণের দিনও শাহনূর আলম বর্ধমানেই ছিলেন, তবে পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে পালিয়ে যায় সে। তখন থেকে সীমান্ত এলাকায় ছদ্মবেশে ঘুরে বেড়াচ্ছিলো শাহনূর । গ্রেফতার এড়াতে আসাম ও মেঘালয়ে বার বার অবস্থান পাল্টিয়েছে সে। অবশেষে শুক্রবার ধরা পড়েন নলবাড়ি জেলার লারকুচি গ্রাম থেকে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ তাকে ১৪ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে।

এনআইএ আরো দাবি করেছে, বর্ধমান বিস্ফোরণ কাণ্ডের সময়ে সেখানে উপস্থিত ছিলো শাহনূর আলম। ধরা পড়ার পর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার ষড়যন্ত্রের কথাও স্বীকার করেছেন সে। পাশাপাশি অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ‘বৃহত্তর ইসলামিক বাংলাদেশ’ গড়ার ষড়যন্ত্র করছিল জেএমবি। রোববার টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে এমনটা দাবি করা হয়েছে।



মন্তব্য চালু নেই