দেশের জন্যই তসলিমা নাসরিনকে ফিরিয়ে আনতে হবে
মিলন আহমেদ: ১৯৬২ সালের ২৫ আগস্ট ময়মনসিংহ শহরে জন্ম গ্রহণ করেছিলেন তসলিমা নাসরিন। সেদিন কেউ ভাবতে পারেনি এই তসলিমা নাসরিনই একদিন হয়ে উঠবে বিশ্বের আলোচিত একজন নারী। তবে এখন ভাববার সময় এসেছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ তাকে মূল্যায়ন করলেও নিজ দেশে এখনো ঠাঁই হয়নি বিতর্কিত এই লেখকের। তাকে অবজ্ঞা করে বার বার আমাদের চিন্তার অসাড়তার পরিচয় দিয়েছি।
তসলিমা নাসরিনের প্রতি দুর্ব্যবহারের কারণ যত তাড়াতাড়ি আমরা উপলদ্ধি করতে পারব ততই জাতির জন্য মঙ্গল হবে। ব্যক্তিগত কোনো স্বার্থের কারণে তসলিমা নাসরিনকে কিন্তু দেশ ছাড়তে হয়নি। নারী-পুরুষের সমঅধিকার আর বৈষম্য নিয়ে কথা বলতে গিয়েই তিনি বিপদে পড়েছেন। পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থার বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ায় তাকে আক্রান্ত হতে হয়েছে। ধর্ম-বৈষম্য এবং লিঙ্গ-বৈষম্যের বিপক্ষে লিখতে গিয়ে তার মাথার মূল্য ঘোষিত হয়েছে, জীবনের সর্বোচ্চ ঝুঁকি নিয়ে চলতে হয়েছে, বিতাড়িত হতে হয়েছে প্রিয় মাতৃভূমি থেকেও।
দেশের জন্যই তসলিমা নাসরিনকে ফিরিয়ে আনতে হবে
সম্প্রতি একাত্তর টিভিতে পাঁচ দিন ব্যাপী তসলিমা নাসরিনের সাক্ষাৎকার প্রচারিত হয়েছে। তসলিমা সম্পর্কে এদেশের মানুষের বিভ্রান্তি দূর করতে সাক্ষাৎকারটি বেশ গুরুত্ব বহন করে, যা আরও আগেই প্রচার হওয়া দরকার ছিল।
মনে রাখা দরকার, পুরুষতন্ত্রের বিরুদ্ধে তসলিমা নাসরিন কলম ধরেছিলেন বলেই এদেশের নারীদের অগ্রগতির ধারাবাহিকতা এখনো বজায় রয়েছে। এজন্য পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের সকল ক্ষেত্রে অবজ্ঞা সইতে হয়েছে তাকে। তবে এ কথা স্বীকার করতেই হবে তসলিমার লেখা ও যুক্তিগুলো ছিল সব সময় গ্রহণযোগ্য। প্রকাশ্যে তসলিমাকে মেনে না-নিলেও তার কথাগুলো অনেকেই উপলদ্ধি করতে পারেন। তাই নারী নির্যাতন দমনের জন্য আইন হয়েছে, নারী শিক্ষার হার বেড়েছে, প্রতিবেশি দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়নের গতিও কিছুটা তরান্বিত হয়েছে। কিন্তু নারীর এ অগ্রগতি খুবই নগন্য। তারপরেও নারী অগ্রগতির জন্য সরকার আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেয়েছে। বিদেশিরাও বাংলাদেশের প্রশংসা করছেন। অথচ যার কারণে যার অবদানে নারী জাতির অগ্রগতি হলো, সরকার পুরস্কার পেল সেই তসলিমা নাসরিনকে আজও নির্বাসিতই থাকতে হচ্ছে। এর চেয়ে দু:খজনক ঘটনা আর কী হতে পারে!
দেশের জন্যই তসলিমা নাসরিনকে ফিরিয়ে আনতে হবে
আর কতকাল তসলিমা নাসরিনকে নির্বাসিত জীবন কাটাতে হবে- এই প্রশ্ন কার কাছে করবো জানি না। তবে বর্তমান সরকারের উচিৎ তসলিমা নাসরিনকে দেশে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ গ্রহণ করা।
তসলিমাকে আজ বড় প্রয়োজন। তসলিমার জন্য নয়, আমাদের জন্য প্রয়োজন। এদেশের নির্যাতিত-নিপীড়িত মানুষের জন্য প্রয়োজন, অবহেলিত-লাঞ্ছিত নারীর জন্য প্রয়োজন। ধর্মীয় কুসংস্কার থেকে দেশের মানুষকে মুক্ত করতে এবং নারী-পুরুষের মধ্যকার বৈষম্য দূর করতে তসলিমা নাসরিনকে সত্যিই আজ বড় প্রয়োজন।
লেখক: প্রভাষক, খিদিরপুর ডিগ্রি কলেজ, পাবনা।
ইমেল- [email protected]
মন্তব্য চালু নেই