দুষ্কৃতীদের হাত থেকে মান বাঁচাতে গিয়ে গাড়ির চাকায় পিষ্ট তরুণী
কাজ সেরে বান্ধবীদের সঙ্গে বাড়ি ফিরছিলেন ২০ বছরের তরুণী। পথে তাঁর হাত ধরে চলন্ত গাড়িতে টেনে তোলার চেষ্টা করেছিল ম্যাটাডরের খালাসি। সম্মানরক্ষা করতে গিয়ে গাড়ির চাকার তলায় পিষ্ট হলেন হুগলির পোলবার সিংহীবাগানের বাসিন্দা জয়ন্তী সোরেন (২০)। শুক্রবার রাতের ঘটনায় রাজ্যে মহিলাদের নিরাপত্তা নিয়ে পুরনো বিতর্কে ফের বিদ্ধ পুলিশ-প্রশাসন।
কাজ সেরে বান্ধবীদের সঙ্গে বাড়ি ফিরছিলেন ২০ বছরের তরুণী। পথে তাঁর হাত ধরে চলন্ত গাড়িতে টেনে তোলার চেষ্টা করেছিল ম্যাটাডরের খালাসি। সম্মানরক্ষা করতে গিয়ে গাড়ির চাকার তলায় পিষ্ট হলেন হুগলির পোলবার সিংহীবাগানের বাসিন্দা জয়ন্তী সোরেন (২০)। শুক্রবার রাতের ঘটনায় রাজ্যে মহিলাদের নিরাপত্তা নিয়ে পুরনো বিতর্কে ফের বিদ্ধ পুলিশ-প্রশাসন।
পুলিশ সূত্রের খবর, জয়ন্তীর পাশাপাশি তাঁর বান্ধবী পূজা ওঁরাও’কে অপহরণের চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু পূজা খালাসির কবল থেকে নিজেকে ছাড়াতে সক্ষম হলেও, জয়ন্তী পারেননি। বান্ধবীকে বাঁচাতে গিয়ে জখম হন পূজা। গুরুতর জখম অবস্থায় তিনি চুঁচুড়ার ইমামবাড়া হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
হুগলির পোলবার ঘটনায় আতঙ্কিত কামদেবপুরের চকোলেট কারখানার কর্মরত অন্য তরুণীদের পরিবারও। ওই কারখানা থেকে কাজ সেরেই শুক্রবার রাতে বাড়ি ফিরছিলেন জয়ন্তীরা। বাড়িতে বাবা-মা দু’জনেই অসুস্থ। সংসার চালাতে কারখানার কাজে ঢোকেন জয়ন্তী। সাধারণত ছ’টার সময় ছুটি হয়ে যায়। কিন্তু শুক্রবার ওভারটাইম করে রাত আটটা নাগাদ কারখানা থেকে বার হন জয়ন্তীরা। জয়ন্তী এবং পূজা একসঙ্গে হাঁটছিলেন। সামনের দিকে ছিলেন কারখানার আরও দু’জন মহিলা শ্রমিক। এদিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন পূজা বলেন, ‘‘আচমকা একটা গাড়ি আমাদের কাছাকাছি চলে আসে। গাড়ি থেকে একজন জয়ন্তীর হাত ধরে টেনে তোলার চেষ্টা করে। আমার হাত ধরার চেষ্টা করলেও আমি বেরিয়ে যায়।’’
প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান অনুযায়ী, ওই ঘটনায় অভিযুক্তের সঙ্গে ধস্তাধস্তিতে জয়ন্তী রাস্তায় পড়ে যান। তাঁকে বাঁচাতে গিয়ে হাঁটুতে চোট পান পূজাও। তবে গাড়ি থেকে তিনি দূরে থাকায় বেঁচে যান। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, খালাসির হাত ছাড়িয়ে পিছনের চাকার কাছাকাছি পড়েছিলেন জয়ন্তী। কিন্তু তাঁর ওড়না গাড়ির সাইলেন্সার পাইপে জড়িয়ে যায়। ওই অবস্থায় প্রায় ১০০ মিটার রাস্তা জয়ন্তীকে টেনে নিয়ে যায় গাড়িটি। একসময় পিছনের চাকার তলায় চলে আসেন বছর কুড়ির তরুণী। চোখের সামনে সহকর্মীর ওই পরিণতি দেখে চিৎকার করে লোক জড়ো করেন জয়ন্তী-পূজার আরও দুই বান্ধবী। স্থানীয় বাসিন্দারা জড়ো হয়ে গেলে দিল্লি রোডের উপরে গাড়ি ফেলে চম্পট দেয় চালক এবং খালাসি। গুরুতর জখম অবস্থায় জয়ন্তীকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
ঘটনার পরপরই অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কোটেশ্বর রাওয়ের নেতৃত্বে বিশেষ দল গড়ে তদন্তের কাজ শুরু করে পুলিশ। শনিবার বিকেলে হাওড়ার সালকিয়া থেকে খুন, অপহরণ এবং শ্লীলতাহানির অভিযোগে ম্যাটাডরের চালক রঞ্জিত বৈঠাকে গ্রেফতারও করা হয়েছে। খালাসির খোঁজ চলছে। পুলিশ দোষীদের ধরতে তৎপর হলেও প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন করতে ছাড়েননি মৃতার পরিজনেরা। তাঁদের কথায়, ‘‘অভাবের সংসারে মেয়েদেরও কাজ করতে হয়। আমাদের মেয়েদের নিরাপত্তার কী হবে? প্রশাসন কী করছে?’’ মৃতার বাবা বলেন, ‘‘টাকা-পয়সা চাই না। দোষীদের কঠোর শাস্তি চাই।’’
শুক্রবার রাত সাড়ে আটটা নাগাদ ভয়াবহ কাণ্ডের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে গাড়িটি আটক করে পুলিশ। তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, গাড়ির মালিক বিহারের বাসিন্দা। তাঁর কাছ থেকে চালক ও খালাসির নাম, ঠিকানা, মোবাইল নম্বর জানা যায়। এরপর মোবাইল টাওয়ার চিহ্নিত করে হাওড়ার সালকিয়া থেকে এদিন চালককে গ্রেফতার করে পুলিশ।
মন্তব্য চালু নেই