‘দুজনই নব্য জেএমবির অর্থ যোগানদাতা’

রাজধানীর পল্লবী থেকে জেএমবির সারোয়ার-তামিম গ্রুপের দুই জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। গ্রেপ্তারকৃত দুজনই জেএমবির অর্থের যোগানদাতা বলে সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেছে র‌্যাব।

গ্রেপ্তারকৃত দুজন হলেন- মো. আতিকুর রহমান ওরফে মিলন ও মো. খাদেমুল ইসলাম ওরফে খাদেম।

মঙ্গলবার দুপুরে কারওয়ান বাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে র‌্যাব-৪ এর অধিনায়ক লুৎফুল কবির জানান, মঙ্গলবার ভোরে লালমাটিয়া এলাকা থেকে দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে ৫টি জিহাদী বই, বিভিন্ন ধরনের লিফলেট, নগদ অর্থ ৩৭ হাজার ৫৯৩ টাকা ও ৪টি ধারালো অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃত আতিকুর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে বলেছে, ২০১১ সালে সে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ ৪.৫০ পেয়ে এসএসসি পাশ করে। পরে ডিমলা ইসলামিয়া ডিগ্রি কলেজ থেকে জিপিএ ৩.৫০ পেয়ে ২০১৪ সালে এইচএসসি পাশ করে। বিশ্ববিদ্যালয় কোচিং করার জন্য রংপুরে অবস্থান করে। এরপর সে সাভার বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে ২০১৫ সালে সমাজকর্ম বিষয়ে অনার্স ১ম বর্ষে ভর্তি হয়। সেখানে কিছুদিন ক্লাস করার পর পারিবারিক অভাব-অনটনের কারণে লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যায়।

লুৎফুল কবির আরো জানান, ২০১৬ সালের জানুয়ারি মাসে ফেসবুকের মাধ্যমে ফজলে রাব্বীর সঙ্গে তার যোগাযোগ হয়। ফজলে রাব্বী নিজেকে জেএমবির (সারোয়ার-তামিম গ্রুপের) সদস্য হিসেবে পরিচয় দেয়। ফজলে রাব্বী তার ফেসবুক আইডিতে যে সমস্ত জিহাদী পোস্ট দিতেন সেগুলো মিলন লাইক দিয়ে তার নিজের আইডিতে শেয়ার করত। পরবর্তী সময়ে তাদের মধ্যে মোবাইল অ্যাপসের মাধ্যমে যোগাযোগ হয়। ফজলে রাব্বী মিলনকে ২০১৬ সালের জুলাই মাসে ‘আব্দুর রহমান’ নামে সংগঠনের এক বড় ভাইয়ের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়। গত ৮ অক্টোবর র‌্যাবের অভিযানে আব্দুর রহমান মারা গেলে সে জানতে পারে উল্লেখিত বড় ভাই জেএমবির একটি গ্রুপের প্রধান। ওই সময় রহমান মিলনকে বিভিন্ন জায়গায় অর্থ বহনের কাজে নিয়োগ করে। এরই ধারাবাহিকতায় মিলন গাজীপুরসহ কয়েকটি জায়গায় অর্থ দিয়ে আসে এবং টঙ্গীর একটি বস্তিতে অর্থ দিতে গিয়ে খাদেমুলের সঙ্গে তার পরিচয় হয়।

খাদেমুলের বরাত দিয়ে র‌্যাব কর্মকর্তা আরো বলেন, ১৯৯৫ সালে ফায়দাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে পঞ্চম শ্রেণি পাশ করে। পারিবারিক আর্থিক সংকটের কারণে তার লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যায়। এরপর জীবিকার জন্য ফকিরাপুল পানির ট্যাঙ্কি এলাকায় ব্যাগ তৈরি কারখানাসহ বিভিন্ন এলাকায় কাজ করে। এ ছাড়া বর্তমানে তুরাগ থানা এলাকায় একটি অফিসে পিয়ন হিসাবে কর্মরত ছিল। তার ছোট ভাই নাজমুল ২০১৩ সালে আজমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে আজমপুর ছাপড়া মসজিদে জুমআর নামাজের পর দেখতে পায়, কতিপয় অপরিচিত লোক ল্যাপটপের মাধ্যমে মাওলানা জসীম উদ্দিন রহমানীর ওয়াজ শুনছেন। তখন নাজমুল ওই ওয়াজ মোবাইলের মেমরি কার্ডে লোড করে নেয় এবং এ ওয়াজ খাদেমুলকে শুনায়। তখন থেকেই সে জিহাদের প্রতি অনুপ্রাণিত হয়। ২০১৬ সালে ফেব্রুয়ারি মাসে টঙ্গী আহলে হাদীস মসজিদে নামাজ পড়ার সময় তার ছোট ভাই নাজমুলের সঙ্গে তাজুল ইসলামের পরিচয় হয়। তাজুল এবং নাজমুল এ মসজিদে নামাজ পড়ত। তাজুল নামাজের পর নাজমুলকে নিয়ে ইসলামের বিভিন্ন দিক আলোচনা করতো। এক সময় সারোয়ার-তামিম গ্রুপের প্রচার ও প্রসার নিয়ে দাওয়াতী কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বিভিন্ন কথাবার্তা হয়। এরপর ২০১৬ সালের আগস্ট মাসের প্রথমদিকে তাজুলের মাধ্যমে মাহমুদ ও নীরব (বাড়ি-সিলেট) এর সঙ্গে তার পরিচয় হয়। যে সমস্ত জঙ্গিরা প্রাথমিকপর্যায়ে ঘরবাড়ি ছেড়ে চলে আসত তাদের আশ্রয়ের দায়িত্বে ছিল খাদেমুল ও নাজমুল। খাদেমুল জঙ্গিদের আশ্রয়ের জন্য বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ব্যক্তির মাধ্যমে টাকা পেত।



মন্তব্য চালু নেই