দুই বছরেও খোঁজ মেলেনি সমুদ্র পথে মালয়েশিয়াগামী বসন্তপুর গ্রামের ১৬ যুবকের

কেটে গেছে দুই বছর। তার পরও কোন খোঁজ মেলেনি সমুদ্র পথে মালয়েশিয়া যাওয়া নিখোঁজ সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার বসন্তপুর গ্রামের ১৬ যুবকের। সম্প্রতি থাইল্যান্ডে গণ কবরের খবর পাওয়ার পর ওই পরিবারগুলিতে চলছে শোকের মাতম। সন্তানহারা মা-বাবার বুক চাপড়ানো আর্তনাদে এলাকার পরিবেশ ভারী হয়ে উঠেছে।

দুই বছর আগে উন্নত জীবিকার সন্ধ্যানে দালালের খপ্পরে পড়ে সমুদ্র পথে মালয়েশিয়া যায় বসন্তপুর গ্রামের সাহেদ আলী, সাইফুল, আরিফ সহ ১৬ জন তরুন। উঠতি বয়সী এসব তরুনেরা কেউ কলেজ পড়–যা, কেউ আবার মা-বাবার একমাত্র সন্তান। অভিভাবকদের দেয়া তথ্যানুযায়ী, উপজেলার কাজীরহাট গ্রামের রউফ ও শুভঙ্করকাটি গ্রামের আজিজ মালযেশিয়ায় ভাল চাকরীর প্রলোভন দেখিয়ে প্রত্যেককের কাছ থেকে কয়েক লাখ টাকা নিয়ে তাদেরকে সমুদ্রপথে মালেশিয়া পাঠানোর ব্যবস্থা করে।

দুই’বছর আগে তারা দালালের হাত ধরে বাড়ী থেকে বের হয়। তবে ট্রলারে উঠার পর থেকে পরিবারের কারোর সাথে আর কোন যোগাযোগ হয়নি। অভিভাবকরা জানেন না তাদের প্রিয় সন্তানটি বেচে আছে,না মারা গেছে। সম্প্রতি থাইল্যান্ডের জঙ্গলে গনকবর আবিস্কৃত হওয়ার পর থেকে অভিভাবকদের হতাশা বেড়েছে, বেড়েছে সন্তান হারানোর বুকফাটা আর্তনাদ। নিখোঁজ আজমল মোড়লের বাবা সিরাজুল ইসলাম জানান, নিজের পৈতৃক জমি বিক্রির তিন লাখ টাকা ব্যয়ে একমাত্র ছেলেকে মালয়েশিয়ায় পাঠিয়ে নিঃস্ব হয়েছেন। এতে তার কষ্ট না থাকলেও ছেলের খোঁজ না পেয়ে তার পরিবারের সদস্যরা এখন শয্যাশায়ী।

কলেজ পড়–য়া একমাত্র ছেলে আরিফ হোসেনের খোঁজ না পেয়ে দিন রাত বুক চাপড়াচ্ছেন মা সালেহ খাতুন মেরী। নিখোঁজ সুমনের বাবা আরশাদ আলী জানান, তার পরিবার থেকে ছেলে, ছোট ভাই, ভাইপো সহ নিখোঁজ হয়েছে চারজন। দালালদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা বেচে আছে বলে মুক্তিপণ দাবী করলে তা দেওয়ার পরও খোঁজ মিলছে না তাদের। এমনকি ছেলেদের খুজে দেওয়ার নাম করে পুলিশ এসেও কয়েকবার মোটা অংকের টাকা নিয়েছে। দালালদের শাস্তি দাবী করেছেন এক বাবা। একমাত্র ছেলেকে বুকে ফিরে পাওয়ার আশায় দিন গুনছেন একযুগ আগে স্বামী হারান নিখোঁজ সাইফুলের মা নাসিমা খাতুন । খেয়ে না খেয়ে এখন খুবই কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন তিনি।

নিখোজ সাহেদ আলীর ভাই জহুরুল ইসলাম জানান, এ বিষয়ে থানায় অভিযোগ করলে দালালদের আটকের পর ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ। জয়নগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফিরোজ আহমেদ জানান,মায়ানমার, মালেশিয়া, ও থাইল্যন্ডের বিভিন্ন কারাগারে খোঁজ খবর নেওয়া হলেও তাদের কোন সন্ধান পাওয়া যায়নি। এ ব্যাপারে পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় সহ বিভিন্ন দপ্তরে একাধিকবার জানান হলেও কোন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।



মন্তব্য চালু নেই