তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ কি শুরু হয়ে গেছে?

বর্তমান বিশ্বের প্রায় প্রতিটি প্রান্তেই চলছে অস্থিরতা। অনেক জায়গাতেই দেখা যাচ্ছে ভয়াবহ সহিংস পরিস্থিতি। একের পর এক পারমাণবিক বোমার পরীক্ষা চালিয়ে যাচ্ছে উত্তর কোরিয়া। কাশ্মীর ইস্যুতে আবার সীমান্তে গোলাগুলি শুরু করেছে ভারত-পাকিস্তান। আর সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ ও জঙ্গিবাদ দমনের প্রশ্নে ক্রমেই বিভক্ত হচ্ছে দুই বৈশ্বিক পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া। বর্তমান এই রাজনৈতিক গতিপ্রকৃতি পর্যবেক্ষণ করে তাই এমন প্রশ্নই তুলেছে যুক্তরাজ্যের বিখ্যাত ইনডিপেনডেন্ট পত্রিকা- তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ কি শুরু হয়ে গেছে?

আইসল্যান্ড, ডেনমার্ক, অস্ট্রিয়া, সুইজারল্যান্ডের মতো হাতে গোনা কিছু দেশ ছাড়া বিশ্বের প্রায় প্রতিটি প্রান্তেই দেখা যাচ্ছে সহিংস পরিস্থিতি। ৯০-এর দশকে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর আবার নতুন করে দেখা যাচ্ছে রাশিয়া-যুক্তরাষ্ট্রের ঠান্ডা যুদ্ধ। সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ প্রশ্নে ক্রমেই বিপরীতমুখী অবস্থানে চলে যাচ্ছে দুই বৈশ্বিক পরাশক্তি। দুই পক্ষের মধ্যে শান্তি আলোচনা হলেও তার কোনো বাস্তব প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না। অনেকেই সিরিয়ার বর্তমান এই পরিস্থিতির তুলনা করেছেন ১৯৬২ সালের কিউবার ক্ষেপণাস্ত্র সংকটের সঙ্গে। এভাবেই চলতে থাকলে পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকে যেতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক রাশিয়ান বিশ্লেষক আলেক্সান্ডার কারলভ।

২০১৪ সালে ইউক্রেনে হামলা চালিয়ে ক্রিমিয়াকে রাশিয়ার দখলে নিয়েছিলেন ভ্লাদিমির পুতিন। তারপর থেকেই ইউরোপিয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে রাজনৈতিক টানাপোড়েন শুরু হয় রাশিয়ার। আর সম্প্রতি সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে দুই পক্ষের বিপরীতমুখী অবস্থান সেই বৈরিতাকে নিয়ে গেছে চরম পর্যায়ে। পারমাণবিক শক্তিধর দুই দেশ এবার তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু করে দেয় কি না, সে আলোচনা জোরেসোরেই চলছে পুরো বিশ্বে।

সম্প্রতি পোল্যান্ড ও লিথুয়ানিয়ার মধ্যবর্তী সীমান্তে দীর্ঘদিন ধরে নিষ্ক্রিয় থাকা সামরিক ঘাঁটি আবার নতুন করে চালু করছে রাশিয়া। যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার বিরুদ্ধে পারমাণবিক হামলা চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে দেশবাসীকে সতর্ক করেছে রাশিয়া। সত্যিই তেমন পরিস্থিতি হলে ভূগর্ভস্থ আশ্রয়স্থলে কীভাবে যেতে হবে সে বিষয়ে মহড়াও দিয়েছে দেশটি।

যুক্তরাষ্ট্র সেনাবাহিনীর প্রধান কমান্ডার মার্ক মিলিও সম্প্রতি রাশিয়ার প্রতি ইঙ্গিত দিয়ে বলেছেন, ‘যারা আমাদের বা আমাদের মিত্রদের জীবনধারা ধ্বংস করতে চায় তাদের আমরা যেকোনোভাবে থামাব। আমরা তাদের কঠোরভাবে আঘাত করব। যেমনটা আগে কেউ কখনো করেনি। আমরা যেকোনো শত্রুকে যেকোনো সময় যেকোনো জায়গায় হারাতে পারি।’ আরো

যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার এই সাম্প্রতিক অবস্থানগুলো ক্রমেই ঘনীভূত করছে আরেকটি বিশ্বযুদ্ধের আশঙ্কা। আর সত্যিই তেমনটা হলে পরিণতি খুবই ভয়াবহ হবে বলে সতর্ক করেছেন যুক্তরাষ্ট্র সেনাবাহিনীর আরেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা উইলিয়াম হিক্স। তিনি বলেছেন, অদূর ভবিষ্যতে একটা প্রথাগত সংঘর্ষের পরিণাম হবে খুবই ভয়ানক ও দ্রুতগতির। আর এটা থামানোর কোনো উপায় থাকবে না আমাদের।’

যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপিয় ইউনিয়নের সঙ্গে চলমান দ্বন্দ্বের মধ্যে ইউরোপের সীমান্তে নতুন করে সেনা ও ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের আশঙ্কা বাড়িয়ে দিয়েছে রাশিয়া। অনেকের মনেই প্রশ্ন জেগেছে যে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে হিটলার যেভাবে প্রতিবেশী দেশগুলো আক্রমণ করে নিজেদের দখলে নিয়েছিল, রাশিয়াও এখন সেই পথেই হাঁটছে কি না।

সরাসরি যুদ্ধে না জড়িয়ে একে অপরের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি প্রক্সি যুদ্ধও চালিয়ে যেতে পারে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া। এখন ঠিক যেমনটা দেখা যাচ্ছে সিরিয়ার ক্ষেত্রে। ৯০-এর দশকের পর যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়ার নতুন এই ঠাণ্ডাযুদ্ধের ফলে পৃথিবীর আরো অনেক জায়গায় ভয়াবহ যুদ্ধ পরিস্থিতি দেখা যেতে পারে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। আর এই প্রক্সি যুদ্ধ লড়তে লড়তে এক সময় নিজেদের মধ্যেই যুদ্ধ শুরু করে দিতে পারে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া।



মন্তব্য চালু নেই