তুরস্কে ৮ হাজার পুলিশ সদস্য বরখাস্ত

তুরস্কে অভ্যুত্থান চেষ্টার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে প্রায় ৮ হাজার পুলিশ সদস্যকে বরখাস্ত করা হয়েছে।

এর আগে দেশটির সামরিক বাহিনী ও বিচার বিভাগের প্রায় ৬ হাজার সদস্যকে বরখাস্ত করে তুরস্ক সরকার। এর মধ্যে সেনাবাহিনীর কয়েকজন জেনারেলকেও বরখাস্ত করা হয়।

অভ্যুত্থান চেষ্টা নিয়ন্ত্রণের পর তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান বলেছেন, রাষ্ট্রের সব স্তর থেকে ‘ভাইরাস’ ঝেড়ে ফেলা হবে। ভাইরাস বলতে তিনি অভ্যুত্থান চেষ্টার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে বুঝিয়েছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি তুরস্কের ঘটনার বিষয়ে গণতন্ত্রের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। বেলজিয়ামের ব্রাসেলসে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠকের সময় কেরি বলেন, সব দিক থেকে তুরস্কের গণতান্ত্রিক নেতৃত্বের সঙ্গে আছে যুক্তরাষ্ট্র।

তিনি আরো বলেন, অভ্যুত্থান চেষ্টায় যুক্ত ষড়যন্ত্রকারীদের বিচারের মুখোমুখি করার বিষয়ে আমরা অবশ্যই সমর্থন দেব। কিন্তু এ বিষয়ে আমরা সতর্ক রয়েছি।

যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়ায় স্বেচ্ছায় নির্বাসিত ধর্মীয় নেতা ফেতুল্লাহ গুলেনকে এ অভ্যুত্থানের ষড়যন্ত্রকারী হিসেবে উল্লেখ করেছে তুরস্কের সরকার। তুর্কি প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান, প্রধানমন্ত্রী বিনালি ইলদিরিম বার বার গুলেনের নাম উচ্চারণ করেছেন। এ ছাড়া গুলেনকে তুরস্কের হাতে তুলে দিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন এরদোয়ান।

ফেতুল্লাহ গুলেন তুরস্ক সরকারের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন। তিনি সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, এ অভ্যুত্থান চেষ্টার সঙ্গে তার কোনো যোগসূত্র নেই।

তুরস্কের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম আনাদোলু জানিয়েছে, সোমবার দেশজুড়ে অভিযান চালিয়ে প্রায় ১০০ জেনারেল ও অ্যাডমিরালকে আটক করা হয়েছে।

তুরস্কের যে আট সেনাকর্মকর্তা হেলিকপ্টার নিয়ে গ্রিসে পালিয়ে যান, তাদের সোমবার আদালতে তোলা হয়। তাদের বিরুদ্ধে গ্রিসে অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগ আনা হয়েছে। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত তাদের বিষয়ে আদালত মূলতবি করা হয়েছে।

এই আট সেনাকর্মকর্তাকে ফিরিয়ে দিতে গ্রিসের প্রতি অনুরোধ করেছে তুরস্ক। তারা সেখানে রাজনৈতিক আশ্রয় ছেয়েছেন।

শনিবার প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান জানিয়েছেন, মৃত্যুদন্ড বহালের বিষয়ে তুরস্ক পুনর্বিবেচনা করতে পারে। এ বিষয়ে পার্লামেন্টে প্রস্তাব আনার কথা বলেন তিনি।

২০০৪ সালে তুরস্কে মৃত্যুদন্ড রোধ করা হয়। ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) যোগ দেওয়ার শর্ত হিসেবে সাংবিধানিকভাবে মৃত্যুদন্ড বিলোপ করে তুরস্ক। ১৯৮৪ সাল থেকে দেশটিতে কোনো মৃত্যুদন্ড কার্যকর হয়নি।

ব্রাসেলসে ইইউয়ের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকে তুরস্কের ঘটনাপ্রবাহ আলোচ্যসূচিতে সর্বাধিক গুরুত্ব পাচ্ছে। বিশ্বের সবচেয়ে বড় সামরিক জোট ন্যাটোর সদস্য তুরস্ক। ইইউয়ের মিত্র হিসেবে স্বীকৃত দেশটি।

মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে ইইউয়ের পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক প্রধান ফেডেরিকা মোগেরিনা আইনের শাসনের প্রতি গুরুত্বারোপ করেন। তুরস্কের ঘটনাপ্রবাহের দিকে মন্ত্রীদের মনোযোগ দিতে অনুরোধ করেন তিনি।

তিনি বলেন, গণতন্ত্র, মানবাধিকার এবং মৌলিক অধিকারে প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা করা উচিত, তুর্কিদের শ্রদ্ধা করা উচিত।

উল্লেখ্য, ইইউয়ের সদস্য হওয়ার জন্য দীর্ঘদিন প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছে তুরস্ক।



মন্তব্য চালু নেই