তুরস্কে ব্যর্থ অভ্যুত্থানের পেছনে কারা জড়িত?

তুরস্কের ইতিহাসে এর আগে একাধিক সামরিক অভ্যুত্থানের নজির আছে। কিন্তু শুক্রবারের ব্যর্থ অভ্যুত্থানটি নানা কারণে নজিরবিহীন। বিশ্লেষকরা বলছেন, এ রকম একটা কিছু যে হতে পারে, তা কেউই ভাবেননি। কিন্তু এই অভ্যুত্থানের পেছনে মূলত কারা জড়িত?

বিশ্লেষকরা বলছেন, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের অনুদার নীতির কারণে দেশটির সামরিক বাহিনীর মাঝারি পর্যায়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে অসন্তোষ ছিল। কিন্তু এর কারণে যে একটা অভ্যুত্থান ঘটতে পারে, তা তারাও ভাবেননি।

তুর্কি সাংবাদিক এজগি বাসারান বিবিসির জন্য লেখা তার এক বিশ্লেষণে বলছেন, ১৬ জুলাইয়ের অভ্যুত্থানের পেছনে কারা ছিল তা নিয়ে বেশ কয়েকটি তত্ত্ব বিভিন্ন মহলে ঘুরছে। এর একটি হলো; প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান তার নিজের হাতে আরো বেশি ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করতে এই ‘সাজানো’ ঘটনাটি ঘটিয়েছেন। কিন্তু এই তত্ত্বে যাই বলা হোক সাধারণ বুদ্ধিতেই বোঝা যায় যে, ঘটনা যতদূর গড়িয়েছিল তা ‘সাজানো’ হতে পারে না।

এছাড়া তুরস্কের সামরিক বাহিনীর মধ্যে দুটি গোষ্ঠী আছে। একদল হচ্ছেন যারা কামাল আতাতুর্কপন্থী অর্থাৎ আধুনিকতাবাদী এবং ধর্মনিরপেক্ষ মনোভাবাপন্ন। আরেকটি হচ্ছে একজন প্রভাবশালী ধর্মীয় নেতা; বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাসিত ফেতুল্লাহ গুলেনের অনুসারী। এই গুলেন এক সময় এরদোয়ানের মিত্র ছিলেন, তবে পরে তাদের মধ্যে শত্রুতা এবং ক্ষমতার দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। বলা হয়, তুরস্কের রাষ্ট্রীয় স্তরের গভীরে সর্বত্র গুলেনের সমর্থকরা বসে আছে কিন্তু তাদের চিহ্নিত করা খুবই কঠিন।

এর আগে প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান একটি সন্ত্রাসবাদী সমান্তরাল রাষ্ট্রের হাত থেকে দেশকে মুক্ত করার কথা বলেছেন এবং বিভিন্ন সময় এদের খুঁজে বের করা ও গ্রেফতারে অভিযান চালিয়েছেন।

বিশ্লেষকরা আরো বলছেন, কামাল আতাতুর্কপন্থী কর্মকর্তারা গুলেনপন্থীদের কৌশলে নিজেদের দলে টেনে নিয়ে এই অভ্যুত্থানটি ঘটিয়েছে। তাদের হিসেব ছিল: এই অভ্যুত্থান যদি ব্যর্থ হয়, তাহলে এরদোয়ানের পাল্টা ব্যবস্থার শিকার হবে গুলেনপন্থীরাই।

পুলিশের বিভিন্ন সূত্র আরো একটি তত্ত্ব সামনে নিয়ে আসছে। তারা বলছেন, এরদোয়ানের একে পার্টি সরকার শুক্রবার গুলেন-সমর্থক সামরিক কর্মকর্তাদের গ্রেফতার করার পরিকল্পনা করেছিল; যা টের পেয়ে অভ্যুত্থানকারীরা নির্ধারিত সময়ের আগেই বিদ্রোহ ঘটিয়ে ফেলে। এটাই ছিল গুলেন সমর্থকদের ক্ষমতা দখলের একটা শেষ চেষ্টা।

এজগি বাসারান বলছেন, এসব তত্ত্বে কিছু তথ্য সঠিক হলেও অনেক অসঙ্গতিও আছে। প্রথমত, যেভাবে এই অভ্যুত্থানকারীরা সহিংসতা ঘটিয়েছে তা গুলেন আন্দোলনের কর্মপদ্ধতির সঙ্গে মেলে না। দ্বিতীয়ত, অভ্যুত্থানকারীদের যে বিবৃতিটি টিভিতে পাঠ করা হয়েছিল তার সঙ্গে কামাল আতাতুর্কের বিখ্যাত বক্তৃতার ভাষার খুব মিল আছে। তবে গুলেনপন্থীরা এটাকে তাদের পরিচয় গোপন রাখার জন্যও ব্যবহার করে থাকতে পারে; এমন সম্ভাবনাও আছে।

একেপি সরকার বলছে, একজন সামরিক কৌঁসুলি এ অভ্যুত্থানের পেছনে ছিলেন, তার সঙ্গে ছিলেন আরো ৪৬ জন অফিসার। এদের নাম গতকাল গভীর রাতে প্রকাশ করা হয়েছে।



মন্তব্য চালু নেই