তিন অর্থবছরের বাজেট প্রথমবারের মত প্রাক্কলন

প্রথমবারের মত আগামী তিন অর্থবছরের বাজেটের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল অাবদুল মুহিত। এর মধ্যে আগামী ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরের জন্য ৩ লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকা, ২০১৭-২০১৮ জন্য ৪ লাখ ১৫ হাজার কোটি টাকা এবং ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরের জন্য ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা।

চলতি অর্থবছরের বাজেটের আকার ২ লাখ ৯৫ হাজার ১০০ কোটি টাকা। অর্থাৎ আগামী তিন অর্থবছরের বাজেট যথাক্রমে ১৫ শতাংশ ২০ শতাংশ ও ১৫ শতাংশ হারে বাড়ানোর চিন্তা করছেন তিনি।

এরই মধ্যে বিষয়টি অবহিত করতে সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীদের আধা সরকারি চিঠির মাধ্যমে (ডিও লেটার) অবহিত করা হয়েছে বলে জানা গেছে। আগামী ২০ অক্টোবরের মধ্যে অর্থমন্ত্রণালয়ে মতামত পাঠাতে বলা হয়েছে।

এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের অর্থনীতি বড় হচ্ছে, আমাদের বাজেটের আকারও বাড়বে এটাই স্বাভাবিক। বিগত বাজেটগুলোকেও অনেকে উচ্চাভিলাষী এবং বাস্তবায়ন যোগ্য নয় বলে মন্তব্য করেছেন। তবে আমি তা মনে করি না। আমার কথা হলো স্বপ্ন বড় না দেখলে বড় হওয়া যায় না।’

তিনি বলেন, ‘এই রকম বাজেট বাস্তবায়নের জন্য আগে থেকে যাতে সবাই প্রস্তুতি নিতে পারে সে জন্য এ ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। একটি অর্থবছরে বাজেট প্রনয়নের পরেই পরবর্তী অর্থবছরের বাজেট প্রনয়নের কাজ শুরু হয়ে যায়। তবে তিন অর্থবছরের বাজেটের লক্ষ্যমাত্রা এর সঙ্গে নির্ধারন করা হয়েছে কাজের সুবিধার জন্য।’

তিনি আরো বলেন, ‘বাজেট বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন রাজস্ব আদায় বৃদ্ধি, বৈদেশিক সহায়তার হার বৃদ্ধি ও স্বশাসিত সংস্থাগুলো থেকে অতিরিক্ত উদ্বৃত্ত আদায়। স্বশাসিত সংস্থাগুলো তাদের উদ্বৃত্ত সরকারকে সব সময় দেয় না। তাদের আদায়ের উচ্চ গতি নিশ্চিত করতে হবে এবং তাদের উদ্বৃত্ত সরকারি হিসাবে নিয়ে আসা বাধ্যতামূলক করতে হবে। আর এ জন্যই আমার সহকর্মীদের কাছে তাদের মন্তব্য ও মতামত জানতে চেয়েছি।’

অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার উন্নয়নের একটি বিশ্ব মডেল। এই মডেলের মর্যাদা বজায় রাখার জন্য আমাদের এই অগ্রিম প্রক্ষেপন অতি প্রয়োজনীয়। সবাই যাতে বাজেট প্রনয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখতে পারে তাই প্রচলিত ধারার বাইরে এসে আগে থেকেই তিন বছরের বাজেটের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে। এতে ভাল ফল পাওয়া যাবে আশা করি।’

২০১৫ সাল সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার শেষ বছর। সহ¯্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ও ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ঘাটতি এবং ২০১৫ পরবর্তী উন্নয়ন এজেন্ডার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ৭ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা গত জুলাই থেকে শুরু হয়েছে। এই পরিকল্পনার উল্লেখযোগ্য বিষয়গুলো হচ্ছে, কারিগরি ও প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন মানব সম্পদ গঠন; বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও যোগাযোগ খাতে অবকাঠামোগত সীমাবদ্ধতা দূর করা, কৃষিভিত্তিক শিল্পসহ ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পখাতের উন্নয়ন কৌশল নির্ধারন, আইসিটি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা সংক্রান্ত সেবা রপ্তানিতে সুনির্দিষ্ট নীতিকৌশল প্রণয়ন, সরকারি-বেসরকারি বিনিয়োগে গতিশীলতা আনা এবং রপ্তানির গতিশীলতা এবং একইসঙ্গে পণ্যের বৈচিত্র আনা। এই সব লক্ষ্য অর্জনে সঞ্চয়, বিনিয়োগ, সরকারি আয়-ব্যয়, ঘাটতি অর্থায়ন, বৈদেশিক সহায়তা, সরকারি ও বেসরকারি খাতের ভ’মিকা, প্রাতিষ্ঠানিক অবকাঠমো ও সংস্কারের ধরন বিষয়গুলো চিন্তায় এনে অর্থমন্ত্রী আগামী তিন অর্থবছরে বাজেটের আকার নির্ধারন করেছেন বলে অর্থমন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।

সূত্র জানায়, ইতিমধ্যেই উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জনের রূপরেখা প্রণয়ন করা হয়েছে। এই রূপরেখার মধ্যে আগামী ২০১৯-২০ অর্থবছরে কৃষি, শিল্প ও সেবা খাতের উচ্চতর প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নিরূপণ করা হয়েছে। ওই সময়ে কৃষি খাতের প্রবৃদ্ধি ৩ দশমিক ৫ শতাংশ, শিল্পের প্রবৃদ্ধি ১২ দশমিক ৫ শতাংশ ও সেবা খাতের প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে বাজেটের প্রবৃদ্ধি আগামী তিন অর্থবছরে যথাক্রমে ১৫ শতাংশ , ২০ শতাংশ ও ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। এটা অর্জন করা সম্ভব। রাইজিংবিডি



মন্তব্য চালু নেই