এবার মাংস নিয়ে ঘরমুখো মানুষ

শুক্রবার সারাদেশের পবিত্র ঈদুল আজহা শেষ হয়েছে। তবে কোরবানি হয়েছে আজও (শনিবার)। দু’দিনের কোরবানি শেষে মাংস নিয়ে বাড়ি ফিরছেন নগরবাসী। নগরবাসীর বাড়ি ফেরার সংখ্যা কম হলেও মৌসুমী মাংস সংগ্রহকারীদের সংখ্যা বেশি।

বাস, লঞ্চ ও রেল পথে গত বৃস্পতিবার রাতে রাজধানীর গাবতলী, মহাখালী, কমলাপুর রেল স্টেশন, খিলগাঁও রেলগেট, মহাখালী রেল গেট, মালিবাগ রেলগেট, সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালসহ নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে এসব মৌসুমী (ভিক্ষুক) মাংস সংগ্রহকারীরা অবস্থান নেয়।

শুক্রবার ঈদের নামাজ শেষে এসব মৌসুমী ভিক্ষুকরা বিভিন্ন বাসায় বাসায়, পাড়া-মহল্লায় মাংস ভিক্ষায় নেমে পড়ে। অনেকে ১০ কেজি থেকে আধামণ পর্যন্তও মাংস সংগ্রহ করেছে। এখন বাড়ি ফিরে যাওয়ার জন্য রাজধানীর বিভিন্ন পরিবহন টার্মিনালে ভিড় করছেন।

শনিবার দুপুরে রাজধানীর কমলাপুর রেল স্টেশন, গাবতলী, কলাবাগান, গুলিস্তান বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে এমন দৃশ্যই দেখা গেছে। তবে মৌসুমী ভিক্ষুকদের সংখ্যা জামালপুর, সরিষাবাড়ী, রংপুর অঞ্চলের বেশি বলে মো. আয়নাল হক নামের এক মৌসুমী ভিক্ষুক জানান।

তিনি বলেন, ‘আমরা বৃহস্পতিবার রাতে জামালপুর থেকে ৫৬ সিটের একটি বাস ভাড়া করে ৮০ জন মাংস টুকাই শুক্রবার ভোরে খিলগাঁও রেলগেটে এসেছি। একেকজন ৫ থেকে ১০ কেজি পর্যন্ত মাংস সংগ্রহ করেছি। অনেকে মাংস বিক্রি করে দিয়েছে, আবার অনেকে অর্ধেক বিক্রি করে বাকি মাংস বাড়ি নিয়ে যাচ্ছে।’ তারা আজ শনিবার সন্ধ্যায় জামালপুরগামী হবেন বলে আয়নাল হক জানান।

শনিবার দুপুর দেড়টায় কমলাপুর রেল স্টেশনের ১৭ ও ১৮নং টিকিট কাউন্টারের সামনে দেখা যায় ৫০ জনের একটি গ্রুপ বসে আসে। জানতে চাইলে মো. সাইদ নামের এক যাত্রী জানান, তারা সবাই জামালপুরের বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দা। কোরবানির ঈদের মাংস সংগ্রহের জন্য ঢাকায় এসেছেন।

তবে এরা কেউ মাংস নিয়ে যাচ্ছেন না। সবাই মাংস বিক্রি করে বাড়ি ফিরছেন। কে কত টাকার মাংস বিক্রি করেছেন জানতে চাইলে রমজান নামে অপর একজন বলেন, ‘১৫শ টাকা থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত মাংস বিক্রি করা হয়েছে।’

মৌসুমী ভিক্ষুকদের পাশাপাশি নগরবাসীও মাংস নিয়ে গ্রামের বাড়ি যাচ্ছেন। ঈদের আগের দিনগুলোর মতো না হলেও কিছু সংখ্যক যাত্রী তাদের কোরবানির মাংস নিয়ে গাবতলী বাস টার্মিনালে এসেছে গ্রামের বাড়িতে যাওয়ার উদ্দেশে।

কথা হয় মানিকগঞ্জগামী মোহাম্মদ বকুল মিয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমি একজন ব্যবসায়ী। ঈদে পরিবারের সকলেই ঢাকায় ছিলাম। কোরবানি ঢাকাতেই দিয়েছি। ঈদে বাড়িতে যেতে খুব কষ্ট হয়। বাসের টিকিট পাওয়া যায় না। তাছাড়া অনেক ভিড় থাকার কারণে এবার ঢাকায় ঈদ করেছি। তাই শনিবার বাড়িতে যাচ্ছি কারণ এখন রাস্তায় কোনো ভিড় বা যানজট থাকবে না। বাসের টিকিটও খুব সহজেই পাওয়া যাবে।’

তিনি বলেন, ‘আমার মা-বাবা সবাই গ্রামের বাড়িতেই থাকে। তাই তাদের জন্য কোরবানির মাংস নিয়ে যাচ্ছি।’

কথা হয় আরো বেশকিছু যাত্রীর সঙ্গে। তারা সবাই একই কথা জানান। বলেন, ঈদের সময় না যেতে পাড়লেও এখন কোরবানির মাংস নিয়ে খুব শান্তিতে বাড়িতে যাওয়া যাবে।

এমন চিত্র সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালেও দেখা গেছে। অনেকে মাংসকে বরফ দিয়ে প্রক্রিয়াজাত করে বাড়ি যাওয়ার জন্য লঞ্চের জন্য অপেক্ষা করছেন। সেখানে অবশ্য অনেকটাই ভিড় লক্ষ্য করা গেছে।

এদিকে রাজধানীর সিটি পরিবহনগুলোতে দেখা গেছে প্রচণ্ড ভিড়। কোনো কোনোটা আবার গেট বন্ধ করে যাত্রী নিয়ে বাস স্ট্যান্ড কিংবা লঞ্চঘাটের দিকে যাচ্ছে। এতে করে নগরবাসীকে কিছুটা বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে। আর এ সুযোগে দ্বিগুণ ভাড়া হাঁকাচ্ছে রিকশা ও সিএনজি চালকরা।



মন্তব্য চালু নেই