ফেসবুক পেজ এক লক্ষের গন্ডি পার হল

তরুন ম্যাজিস্ট্রেটরা জেগে আছেন ॥ নাগরিক সেবায় এগিয়ে যাচ্ছে বিমানবন্দর

ফেসবুকের হাজারো পেজের ভিতর একটা পেজের আজকের স্ট্যাটাসটা আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করি।

“হা, আমরা গর্বিত। আমাদের অন-লাইন সেবার পরিধি আজ ১ লাখ ছাড়িয়েছে। আমরা সত্যিই গর্বিত, এই সেবকদের মাথার উপর আজ এক লাখ মনিব আছে। সো, হু কেয়ারস, উই ডেয়ার টু চেইজ..
কিল দ্য ক্রাইম, ক্যাচ দ্য ক্রিমিনালস”

আসলেই দেশের মালিক জনগন। সরকারী কর্মকর্তারা সেই মালিকদের সেবক। অনলাইনের সামাজিক জালের সুবিধা কাজে লাগিয়ে প্রথমে এগিয়ে এসেছিলেন সিনিয়র এ এস পি মাশরুফ হোসেন তার উত্তরা পুলিশ পেট্রলের ফেসবুক পেজ দিয়ে। পরে তিনি গুলশান সার্কেলে বদলী হয়ে গেলে তার নিজের নামে খুলেছিলেন একটা পেজ। এরপর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কর্মরত সিনিয়র এ এস পি আলমগীর হোসেন ও এহেতাশামুল হকের হাত ধরে এসেছিল বিমানবন্দরের আর্মড পুলিশ ব্যাট্যালিয়নের পেজ। এই সংবাদে যে পেজটির কথা বলছি সেই কারিগরদের নামে নয়, কাজে প্রমান হয়েছে “Magistrates, All Airports of Bangladesh” পেজটি কতটা সফলভাবে মানুষের কল্যানে কাজ করছে। আজ শুক্রবার সেই পেজের লাইক সংখ্যা এক লক্ষ অতিক্রম করেছে। বিমান বন্দরে কর্মরত এই দু’জন ম্যাজিস্ট্রেটের কাহিনী পড়লে সরকারী কর্মকর্তাদের উপর থাকা আপনার কোন ক্ষোভ বরফ হয়ে শীতল হবে। এক দুই নয় দুই লক্ষ চোখ সার্বক্ষনিক নজর রাখছে তাদের উপর যেন কোন অপশক্তির অশুভ ছায়া তাদের কোন ক্ষতি করতে না পারে।

এই পেজটি শুরু থেকেই ফেসবুক পাঠকদের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠে। আর জনসাধারণ এখান থেকে প্রতিনিয়তই পেয়েছে নানান আইনি সহায়তা ও পরামর্শ, আইনের যথাযত প্রয়োগে বিপদে পড়া যাত্রী পেয়েছেন আস্থা ও ভালবাসার ছোঁয়া। বাংলাদেশের জন্য মূল্যবান বৈদেশিক মূদ্রা অর্জনকারী প্রবাসী শ্রমিকদের জন্য সরকার নানাবিধ সুবিধা বিমানবন্দরে চালু করলেও সেগুলোর সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছিল বিমানবন্দরে কর্মরত দূর্নীতিবাজ চক্রের কারনে। দেশের স্বজনদের জন্য আনা লাগেজ ভর্তি ভালবাসাও অনেকে বিমানবন্দরে নেমে পায়না সেই চক্রের কারনে। তবে দিন এখন আর সেই চক্রের জন্য সুগম নয়। শুভদিন এখন যাত্রীদের। মানুষের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ রক্ষা করে আমাদের তরুন ম্যাজিস্ট্রেটরা অনিয়ম, দূর্নীতিকে করেছেন কঠিন।

বাংলাদেশের সরকারী সংস্থাগুলোর প্রতি মানুষের আস্থা দিন দিন কমে যাচ্ছিল দূর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও আন্তরিকতার অভাবে। তবে আশার কথা হল অনেক তরুন প্রান দেশপ্রেমে উজ্জিবীত হয়ে হাল ধরেছেন আলোকিত করতে সরকারী সেবার মান।

নাগরিক সেবায় মাইলফলক স্থাপন করেছেন এয়ারপোর্ট ম্যাজিস্ট্রেটরা :
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর। একসময় অনেক দেশী, ভিনদেশী যাত্রীদের কাছে দুঃস্বপ্নের কারন হলেও বর্তমানে বদলে গেছে এর চিত্র। দেশে আসা কিংবা বহিঃর্গমন যাত্রীদের কাছ থেকে বিমানবন্দরের লোডারদের লাগেজ টানাটানির সেই চিরচেনা দৃশ্য এখন প্রায় অনেকাংশেই অদৃশ্য! সরকারের আন্তরিকতা এবং বিমানবন্দরে নিযুক্ত ম্যাজিস্ট্রেটরা এবং আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন সহ শুভ শক্তির ২৪ ঘন্টা নিরবচ্ছিন্ন সেবা দানের ফলেই সম্ভব হয়েছে এই অসাধ্য সাধন।

একটা সময় ছিল, যখন মধ্যপ্রাচ্য সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গমনেচ্ছু যাত্রীদের সাথে এয়ারলাইন্স এবং বিমানবন্দরের কতিপয় রগচটা অসাধু কর্মকর্তাদের দুর্ব্যাবহার ছিল প্রতিদিনকার ঘটনা। দিন বদলেছে, যাত্রীদের সাথে খারাপ ব্যাবহার করার সময়ও ফুরিয়েছে সেই সাথে। যাত্রীদের যেকোন প্রয়োজনে এখন আর তাঁরা নিজেদের অসহায় বোধ করেন না।

যাঁরা জানেন তাঁরা ঠিকই ছুটে যান বিমানবন্দরে কর্মরত ম্যাজিস্ট্রেটদের কাছে আর যাঁরা জানেন না তাদের কাছে ছুটে যান খোদ ম্যাজিস্ট্রেটরাই! অপরাধ, দুর্নীতি ধরা পড়লেই বাংলাদেশ দণ্ডবিধি এবং এভিয়েশন আইনে আইনি সহায়তা দেন যাত্রীদের! আশ্চর্য হচ্ছেন? না পাঠক এমনই হচ্ছে আজকাল বিমানবন্দরে। বেশ কিছুদিন যাবৎ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে একটি পেইজের কার্যক্রম চলছে। “ম্যাজিস্ট্রেটস, অল এয়ারপোর্ট অফ বাংলাদেশ” নামক এই পেজে প্রায় প্রতিদিনই যাত্রীদের সব ধরনের আইনি সহায়তা গ্রহন করার জন্য উৎসাহ দেয়া হচ্ছে, জানানো হচ্ছে নানা সফলতার গল্প।

ফেইসবুকের এই পেজটির ভাষাও অনেকটা সাবলীল, এর ফলে ভুক্তভোগী কিংবা সাধারন অনেক যাত্রীরাই তাঁদের সমস্যার কথা তুলে ধরছেন, বলছেন তাঁদের সাথে ঘটে যাওয়া কিছু অপ্রিয় মুহুর্ত। বিমানবন্দরের মতো স্পর্শকাতর স্থানে যা বহিঃবিশ্বের কাছে বাংলাদেশের ভাবমূর্তিও প্রকাশ করে, সেখানকার সমস্যা সমাধানে ম্যাজিস্ট্রেটদ্বয়ের এই উদ্যোগকে অনেকেই বলছেন বর্তমান প্রজন্মের ম্যাজিস্ট্রেসি। যথাসময়ে আইনি সহায়তা দেয়া ম্যাজিস্ট্রেটদের দায়িত্ব হলেও বর্তমান প্রেক্ষাপটে এমনটা অনেক সময় হয়ে ওঠে না। এজন্য বিমানবন্দরের ম্যাজিস্ট্রেটরা সাধুবাদ পেতেই পারেন।

বিমানবন্দরের যে কোন সমস্যা, দুর্নীতি কিংবা হয়রানির অভিযোগ জানাতে যে কোন সময় ফোন করতে পারেন নিচের নম্বর গুলোতে।

বর্তমান প্রজন্মের আধুনিক ম্যাজিস্ট্রেটরা প্রস্তুত আছেন আপনার সাহায্যার্থে।
ফোন নম্বর সমূহ – ০১৮৬৬ ৫ ৪৪৪৪৪, ০১৮৬৬ ৫ ৬৬৬৬৬, ০১৭৮৭ ৬ ৬১১৪৪, ০১৭৮৭ ৬ ৬১১৬৬

সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্র অবশ্য থেমে নেই, তাদের দীর্ঘদিনের লক্ষপতি, কোটিপতি হওয়ার পথ এখন কাঁটায় পরিপূর্ণ। আমরা আশা করি দুই লক্ষ চোখের সার্বক্ষনিক নজরদারিতে তাদের সেই অপরাধের যাত্রা থেমে থাকবে। আমরা আশা করব এই দুই লক্ষ চোখ শুধু ফেসবুকে সীমাবন্ধ না থেকে তারা সর্বক্ষেত্রে অন্যায়ের প্রতিবাদ করবে। ভাল উদ্যোগের সঙ্গী হবে।

অভিনন্দন ম্যাজিস্ট্রেটস!



মন্তব্য চালু নেই