ঢাকায় বাস সিস্টেম পাল্টে দিতে চান আনিসুল
এটা মেয়রের কাজ না-তবু জনস্বার্থে বাস সিস্টেম আধুনিকায়নে কাজ শুরু করার কথা জানিয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আনিসুল হক। তিনি বলেন, পৃথিবীর অন্যান্য দেশে যে পদ্ধতিতে চলে, সেভাবেই ঢাকায় বাস চালু করতে চান তিনি। এরই মধ্যে একটি মডেল দাঁড় করানো হয়েছে। বাস মালিকদের সঙ্গে তার বৈঠক হয়েছে। আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই এসব চালু হবে।
বৃহস্পতিবার সকালে বারিধারায় রাশিয়া ও সৌদি আরবের দূতাবাস সংলগ্ন ফুটপাত দখলমুক্ত অভিযানের সময় মেয়র এ কথা বলেন।
মেয়র জানান, নতুন পদ্ধতি চালু হলে যেখানে সেখানে দাঁড়িয়ে যাত্রী তোলা বন্ধ হবে। বিভিন্ন রুটের বাসকে সাতটি কোম্পানিতে বিভক্ত করা হবে। আর বাসগুলো তাদের লাভ ভাগাভাগি করবে। এতে করে আলাদা কোনো বাসে যাত্রী কম বা বেশি হলে সেই বাসের চালক বা যাত্রীর কোনো ফায়দা হবে না।
রাজধানীতে গণপরিবহন নিয়ে যাত্রীদের ভোগান্তির শেষ নেই। অতিরিক্ত ভাড়া, মানহীন পরিবেশ আর বিশৃঙ্খলায় নিত্য দিনের যাতায়াত উষ্ঠাগত। বিশেষ করে গত কয়েক দিন ধরে সিটিং সার্ভিস বন্ধ আর পুরনায় চালুর ঘটনা নিয়ে যা ঘটলো তা নিয়ে জন অসন্তোষ আরও বেড়েছে।
মেয়র আনিসুল বলেন, ইস্যু কেবল অতিরিক্ত ভাড়া নয়। তিনি বলেন, ‘বাস বেতে বাস দাঁড়ায় না, একসাথে চারটা দাঁড়ায়, একটার ঘাড়ে আরেকটা ওঠে। আমরা পৃথিবীর অন্যান্য দেশকে স্টাডি করার চেষ্টা করেছি।’
আনিসুল হক বলেন, ‘এটা মেয়রের কাজ না, তারপরও আমরা এটা গুছিয়ে দিয়ে, প্রধানমন্ত্রী যার কাছে বলবেন তার কাছে হ্যান্ডওভার করব। আমরা পুরো বাস সিস্টেমটি চেঞ্জ করে ফেলব।’
নতুন বাস নামানোর পরিকল্পনা জানিয়ে মেয়র বলেন, ‘এখানে দুটো দিক আছে, সারাদেশ থেকে ১১ হাজার বাস ঢাকায় ঢোকে। কিন্তু ঢাকা এবং সাভার নিয়ে সাড়ে পাঁচ ছয় হাজার বাস চলে। রুট আছে ২০০টির মতো। কোনটা আধা কিলোমিটার কোনটা তারও বেশি। প্রায় ২০০ জনের মতো মালিক আছেন যারা এই ছয় হাজার বাসকে নিয়ন্ত্রণ করেন।’
নতুনভাবে সব বাস রুট পুনর্বিন্যাসের পরিকল্পনা বর্ণনা করে আনিসুল হক বলেন, ‘আমি তাদেরকে (বাস মালিক) বললাম, আসুন আমরা হোল্ডিং কোম্পানি করি। একটা নতুন আইডিয়া এই হোল্ডিং কোম্পানি। এতে ২০০মালিককে নিয়ে সাতটা কোম্পানি গঠন করা হবে, যেখানে লাল, নীল, হলুদসহ সাতটি রঙ এর বাস আলাদা রুটে নামানো হবে। যদি তাই হয় তবে বাসে বাসে মারামারি থাকবে না। কারণ তখন একজন বাস মালিক যদি সারাদিনে একজন যাত্রীও না পায় এবং অন্যজন যদি বেশি যাত্রী পায়, তাহলে তা সমান ভাগে ভাগ হবে। তখন এক ধরনের শৃঙ্খলা আসবে।’
যেখানে সেখানে দাঁড়িয়ে যাত্রী উঠানামা করা যাবে না বলেও জানান মেয়র। বলেন, ‘বাস দাঁড়াবে বাস বে তে, যাত্রী নিয়ে টানাহেঁচড়া থাকবে না।’
গত দেড় বছরে বাস মালিক সমিতির সঙ্গে এ নিয়ে ২৬ বারের বেশি বৈঠক হয়েছে বলেও জানান মেয়র আনিসুল। তিনি বলেন, ‘অনেকে কোটি টাকার ব্ল্যাক মানির অফার করেছে। ওনারাই (বাস মালিক) বলেছে যে, এখানে অনেক লোকের অনেক স্বার্থ আছে। আমি বললাম, এখানে তাদের স্বার্থর থেকে দেশের মানুষের স্বার্থ বেশি।’
মেয়র বলেন, ‘আমি বলে দিয়েছি, এখানে যদি ব্যবসা করতে হয়, তবে বাধ্যতামূলকভাবে চালকদের ট্রেনিং একাডেমি করে দিতে হবে। আধুনিক টিকেটিং সিস্টেম লাগবে। তারাও এতে রাজি হয়েছেন।’
চার হাজার বাস কবে নামবে-সে বিষয়ে মেয়র বলেন, ‘এ জন্য সময় লাগবে। মালিকরা চার শতাংশ সুদে ঋণের দাবি করছেন। আর তারও আগে এক থেকে দেড় হাজার পুরনো বাস উঠিয়ে নিতে হবে।’
মেয়র জানান, মে মাসের প্রথম সপ্তাহে যোগাযোগ মন্ত্রীর কাছে সময় নিয়েছেন তিনি, তখনই চুক্তি হবে বাস কেনার। আর এ বছরের মধ্যে কিছু নতুন বাস ঢাকায় দেখা যাবে।
মন্তব্য চালু নেই