ডিসিসির বিলবোর্ড হবু অভিভাবকদের দখলে

আসন্ন ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচন উপলক্ষ্যে সম্ভাব্য মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের দখলে রয়েছে রাজধানীর বিলবোর্ড। জোর করে বিভিন্ন বিজ্ঞাপনী প্রতিষ্ঠানের বিলবোর্ড দখল করে তারা আগাম প্রচারণা চালাচ্ছেন বলেও অভিযোগ মিলেছে। এছাড়া বিভিন্ন দালানের বাইরের অংশ বিশাল ডিজিটাল ব্যানার দিয়ে ঢেকে চলছে প্রচারণা। একই সঙ্গে নগরীর প্রধান প্রধান সড়কগুলোর বিভিন্ন মোড়ে বাঁশের খুঁটি তৈরি করেও বিলবোর্ড লাগানো হয়েছে।

করপোরেশন কর্তৃপক্ষ বলছেন বিলবোর্ড দখলের বিষয়ে তাদের কাছে এখনো কোনো অভিযোগ আসেনি। তাছাড়া এটা তাদের দেখার বিষয়ও নয়। তারা বিভিন্ন বিজ্ঞাপনী প্রতিষ্ঠানকে বিলবোর্ডগুলো ভাড়া দিয়েছেন। আর বিজ্ঞাপনী প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে নগরীর হবু অভিভাবকদের কাছ থেকে এমন আচরণ মেনে নেয়া যায় না।

সরেজমিনে দেখা গেছে, এমন প্রচারণার দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে এগিয়ে আছেন ক্ষমতাশীন আওয়ামী লীগের মহানগর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাজী মো. সেলিম। তার সঙ্গেই আছেন সাঈদ খোকন ও জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য সাবেক ছাত্রনেতা সাঈফ উদ্দিন আহমেদ মিলন। উত্তর সিটি করপোরেশনে রয়েছেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী ও সাবেক এফবিসিসিআই সভাপতি আনিসুল হক, ঢাকা ১৫ আসনের সংসদ সদস্য ও ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি কামাল আহমেদ মজুমদার ও মহানগর আওয়ামী লীগের অপর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আওলাদ হোসেন।

রাজধানীর ফকিরাপুল মোড়। গুরুত্বপূর্ণ এ মোড়টিতে রয়েছে সিটি করপোরেশনের বেশ কয়েকটি বিলবোর্ড। এতোদিন এগুলোতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পণ্যের বিজ্ঞাপন শোভা পেলেও এখন সেগুলো দখল করে চলছে মেয়র প্রার্থীদের নির্বাচনী অঙ্গীকারের প্রচারণা। বিশাল আকারের একটি বিলবোর্ডে শোভা পাচ্ছে হাজী মো. সেলিমের ছবি। সেই সঙ্গে আছে লাল-সবুজের তারকাখচিত আওয়ামী লীগের দলীয় পতাকা। ওপরের এক কোণে জাতির জনক ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর ছবি। এরই মধ্যে বড় অক্ষরে লেখা পরিচ্ছন্ন নগরী গড়তে আমি আছি আপনাদের পাশে -হাজী মো. সেলিম, সংসদ সদস্য, ঢাকা-৭, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ। প্রচারে এলাকাবাসী। এর পাশের বিলবোর্ডটিতে জাতীয় পার্টির প্রার্থী সাঈফ উদ্দিন আহমেদ মিলনের। তিনি লিখেছেন -মানুষ চায় পরিবর্তন, তোমার হাত ধরেই আসুক পরিবর্তন -মেয়র পদপ্রার্থী সাইফ উদ্দিন আহমেদ মিলন।

Bilbordএকই অবস্থা দেখা গেছে বিজয় নগর মোড়েও। এতে হাজী সেলিমের পাশাপাশি শোভা পাচ্ছে আওয়ামী লীগ সমর্থিত আরেক প্রার্থী সাঈদ খোকনের ছবি। পাশে লেখা আছে, সচেতনতাই পরিবর্তনের শক্তি -সাঈদ খোকন।

যাত্রাবাড়ী মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের নিচে শতাধিক বাঁশের খুঁটির ওপর নড়বড়ে অবস্থায় স্থাপন করা হয়েছে বিশালাকৃতির রঙ-বেরঙের বিলবোর্ড। দেখে বুঝতে অসুবিধা হবে না যে এই বিলবোর্ডগুলো করপোরেশনের কাছ থেকে অনুমতি না নিয়েই স্থাপন করা হয়েছে। সিটি করপোরেশনও বলছে এগুলো সম্পূর্ণ অবৈধ। খুব শিগগিরই এসব উচ্ছেদ করা হবে।

শুধু ফকিরাপুল, বিজয় নগর কিংবা যাত্রাবাড়ী নয়। রাজধানীর প্রায় সব ক’টি গুরুত্বপূর্ণ মোড়েই শোভা পাচ্ছে সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থীদের এমন নির্বাচনী প্রচারণা।

আসন্ন নির্বাচন নিয়ে এখন বিলবোর্ড, ব্যানার, ফেস্টুনে প্রার্থীদের প্রচারণায় সয়লাব হয়ে গেছে রাজধানীর শাহবাগ, পল্টন, মতিঝিল, জিপিও, মৎস ভবন, কাওরান বাজার, ফার্মগেট, বিজয় সরণি, মহাখালী, বনানী, গুলশান, মিরপুর, তেজগাঁও, খিলগাঁও, মানিক নগর, সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ী, বংশাল, লালবাগ, মৌচাক, মালিবাগ, ধানমণ্ডি, রামপুরা, প্রেসক্লাব, দৈনিক বাংলা, গুলিস্তান, ফকিরাপুল, বাসাবো, উত্তরা, আজমপুর, খিলক্ষেত, নিউমার্কেট, নীলক্ষেত, মগবাজার, বাংলামোটর, তেজগাঁও, মোহাম্মদপুর, আসাদগেট, গাবতলী, মিরপুর, কাফরুল, পল্লবীসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকা। গুরুত্বপূর্ণ এসব পয়েন্টে ব্যানার-বিলবোর্ডের মাধ্যমে সম্ভাব্য মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের নানা স্লোগান ও নানা চেহারার ছবি দিয়ে চলছে দলীয় ও নগরবাসীর সমর্থন আদায়ের চেষ্টা চলছে।

তবে হাজী মো. সেলিম বলেন, ‘আমি কোনো বিলবোর্ড দখল করিনি। নির্বাচন করতে হলে বিলবোর্ড দখল করতে হবে কেন? মানুষতো আমাকে চিনে। আমার নামে কে বা কারা এমন করেছে তা আমার জানা নেই।’

মেয়র প্রার্থী আনিসুল হক বলেন, ‘আমি বিলবোর্ড দখল করে প্রচারণা করবো এটা আপনাদের বিশ্বাস হলো কিভাবে? এটা আমার কাজ না। সমর্থকরাই করতে পারে।’

দুই সিটি করপোরেশনের সংশ্লিষ্ট বিভাগ বলছে, এতে তাদের কোনো ক্ষতি নেই। করপোরেশন বিলবোর্ড গুলো বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে প্রতি অর্থবছরের শুরুতে বিলবোর্ড তৈরি কিংবা ভাড়া দেয়ার অনুমতি দেন। ওই সব প্রতিষ্ঠান বিলবোর্ড তৈরি করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে বিভিন্ন মেয়াদে ভাড়া দেয়। এতে করপোরেশনের কোনো ক্ষতি হয় না।

Bilbord-2বিলবোর্ড ভাড়া নেয়া প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, প্রার্থীরা তাদের কাছে থেকে সেগুলো ভাড়া না নিয়েই অবৈধ দখল করে প্রচার প্রচারণা চালাচ্ছেন। এদেরকে বাধাও দেয়া যায় না। দলীয় প্রভাব কিংবা নির্বাচিত হলে ক্ষতির অশঙ্কায় কিছু বলছেন না তারা।

বিলবোর্ড ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ আউটডোর ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও নেপচুন অ্যাডের পরিচালক রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘যারাই সিটি করপোরেশনের অভিভাবক হবেন, তারাই যদি রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে করপোরেশনের সম্পদ দখল করেন তাহলে তাদের কাছ থেকে নগরবাসী কী আশা করবে?’

এ বিষয়ে ডিএনসিসির প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন বিপন কুমার সাহা বলেন, ‘বিলবোর্ড দখলে সিটি করপোরেশনের কোনো ক্ষতি হয় না। ক্ষতি হয় ইজারা নেয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর। কিন্তু তো কেউ এখন পর্যন্ত আমাদের কাছে এমন কোনো অভিযোগ করেনি। সম্ভাবত তারা ভাড়া পাচ্ছেন।’

একই কথা বলেন ডিএসসিসির সংশ্লিষ্ট বিভাগের দায়িত্ব থাকা রাজস্ব বিভাগের উপ-প্রধান কর্মকর্তা ইউসুফ আলী সরদার। তিনি বলেন কেউ অভিযোগ করলে আমরা উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করবো।



মন্তব্য চালু নেই