উত্তর সিটি করপোরেশনে আ.লীগের প্রার্থী ঘোষণা :

ডিসিসির নির্বাচন ঝুলে থাকায় প্রধানমন্ত্রীর ক্ষোভ

বিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের (ডিসিসি- উত্তর ও দক্ষিণ) নির্বাচন দীর্ঘদিন ঝুলে থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নির্বাচন সম্পন্ন করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশও দিয়েছেন তিনি।

সোমবার সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনির্ধারিত আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী এ ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

বৈঠক শেষে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন মন্ত্রী জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্থানীয় সরকার ও সমবায় মন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে বলেন, আর কত দিন সিটি করপোরেশন নির্বাচন ঝুলিয়ে রাখবেন। দ্রুততম সময়ে বিভক্ত দুই ডিসিসির নির্বাচনের কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। এসময় সৈয়দ আশরাফ চুপ ছিলেন।

আইনি জটিলতায় প্রায় সাত বছর আটকে আছে ডিসিসি নির্বাচন। প্রশাসক নিয়োগ করে রুটিন কাজ করা হচ্ছে। তবে গত বছরের ৮ ডিসেম্বর মন্ত্রিসভা বৈঠকে প্রশাসকদের মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব অনুমোদন না করে কিভাবে ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচন করা যায়, সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দিতে বলেন প্রধানমন্ত্রী।

গত ৪ ফেব্রুয়ারি প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ঢাকা সিটি করপোরেশন (ডিসিসি) নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশন (ইসি) প্রস্তুত রয়েছে।

এদিকে চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটেও এই দুই সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের ব্যয়ও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এর জন্য বাজেটে অতিরিক্ত ৪৫ কোটি টাকা সংস্থান রাখার জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে আ.লীগের প্রার্থী আনিসুল হক

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন দ্য ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ড্রাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সাবেক সভাপতি আনিসুল হক। এ কথা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই জানিয়েছেন।

সোমবার সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বৈঠকে এক অনির্ধারিত আলোচনায় তিনি এ কথা বলেন। বিশ্বস্ত সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

প্রধানমন্ত্রী তখন বলেন, ‘ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রার্থী আমি দিচ্ছি।’Anis2

ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচন প্রসঙ্গে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে তিনি বলেন, ‘ডিসিসি নির্বাচন দিন, আর কতো আটকিয়ে রাখবেন?’

এর আগে চলতি বছরের শীত মৌসুমের মধ্যে রাজধানী ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচন দিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত ৮ ডিসেম্বর সচিবালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকে তিনি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে এ নির্দেশ দিয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর এমন নির্দেশের পরও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগ থেকে কার্যত কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি।

সে সময় নির্বাচন কমিশন (ইসি) বলেছিল, দুই ডিসিসির সীমানা জটিলতা নিরসন না করে নির্বাচন সম্ভব নয়। তবে সীমানা পুনর্নির্ধারণ সম্পন্ন হলে ফেব্রুয়ারিতে তফসিল ঘোষণা করে মার্চে নির্বাচন অনুষ্ঠান করা সম্ভব হবে। কিন্তু সব বাধা দূর করে দ্রুত নির্বাচন দেয়া সম্ভব হলেও সরকারের পক্ষ থেকে কার্যত এখনো কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি।

গেলো বছরের এপ্রিলের দিকে নগরবাসীর দুর্ভোগ ও জনসমস্যা নিরসনের লক্ষ্যে বিভক্ত ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে প্রশাসনিক কর্মকর্তার পরিবর্তে ‘রাজনৈতিক প্রশাসক’ নিয়োগ দেয়ার পরিকল্পনা করেছিল সরকার। তখন সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়- সরকার নগরবাসীর সেবার বিষয়টি মাথায় রেখেই এমন সিদ্ধান্ত হাতে নিতে চাইছে।

বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের উচ্চ পর্যায়ে ব্যাপক আলাপ আলোচনাও হয়। কিন্তু এ নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর আওয়ামী লীগের বর্ষিয়ান বেশ কয়েকজন নেতাদের সঙ্গে দেশের সুশীলসমাজের প্রতিনিধিরাও তীব্র বিরোধীতা করেন। একই সঙ্গে আইনি জটিলতায় সে সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে বাধ্য হয় সরকার।

২০১১ সালের ২৯ নভেম্বর জাতীয় সংসদে আইন পাসের মাধ্যমে ঢাকা সিটি করপোরেশনকে দুই ভাগ করা হয়। অভিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের সর্বশেষ নির্বাচন হয় ২০০২ সালের এপ্রিলে। এরপর টানা প্রায় ১০ বছর মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন বিএনপি নেতা সাদেক হোসেন খোকা। ২০০৭ সালের ১৫ মে তার মেয়াদ শেষ হলে সেখানে ক্ষমতাশীন আওয়ামী লীগ প্রশাসক নিয়োগ করে।

এরপর ২০১২ সালের ২৯ এপ্রিল তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। এতে ২৪ মে নির্বাচনের দিন ধার্য করা হয়। কিন্তু ভোটার তালিকা ও সীমানা নির্ধারণ সংক্রান্ত জটিলতা থাকায় নির্বাচনের ওপর নিষেদাজ্ঞা জারি করেন আদালত। এরপর ২০১৩ সালের ১৩ মে আদালত নিষেধাজ্ঞা তুলে নেন।

আবার ওই বছরের অক্টোবর-নভেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের ঘোষণা দেয় কমিশন। কিন্তু ঢাকার সুলতানগঞ্জ ইউনিয়ন ঢাকা সিটি করপোরেশনের অন্তর্ভুক্ত না হওয়ায় আবারো দেখা দেয় জটিলতা। এরপর নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়- দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর ডিসিসি নির্বাচন দেয়া হবে। কিন্তু এক বছর পেরিয়ে গেলোও এখন পর্যন্ত তার কোনো উদ্যোগ নেই।

তবে সোমবার মন্ত্রিসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ঘোষণার পরই নির্বাচনের আশা জাগ্রতো হলো।



মন্তব্য চালু নেই