ট্রাম্পের মুসলিম নিষেধাজ্ঞায় চুপ পাকিস্তান, মিসর ও সৌদি আরব

সাতটি মুসলিম দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারির সমালোচনা ও নিন্দা জানিয়েছে জার্মানি, ফ্রান্স ও কানাডার মতো অমুসলিম দেশ। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের এ নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছে ইউরোপের আরও কয়েকটি দেশ। তবে আশ্চর্যজনকভাবে চুপ রয়েছে মুসলিম দেশগুলো। তালিকায় থাকা ইরান ও ইরাক বাদ দিলে মুসলিম বিশ্ব থেকে কোনও প্রতিবাদ আসেনি। এমনকি ৫৭টি মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর আন্তর্জাতিক জোট অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশন (ওআইসি)-ও ন্যুনতম সমালোচনা বা নিন্দা জানায়নি।

মুসলিম বিশ্বের প্রাণকেন্দ্র ও পবিত্র স্থান রয়েছে সৌদি আরবে। মিসরকে ইসলামি চর্চার সূতিকাগার হিসেবে মনে করা হয়। অথচ ইরান, ইরাক, লিবিয়া, সোমালিয়া, সুদান, সিরিয়া ও ইয়েমেনের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারির পর সৌদি আরব ও মিসর কোনও প্রতিবাদ করেনি।

রবিবার ট্রাম্পের সঙ্গে ফোনালাপ করেছেন সৌদি বাদশা সালমান। তবে ফোনালাপ নিয়ে সৌদি বাদশা সাংবাদিকদের কিছু জানাননি। মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি ইসরায়েলে মার্কিন দূতাবাস স্থানান্তর ও মুসলিম ব্রাদারহুডকে নিষেধাজ্ঞা নিয়ে ট্রাম্পের সঙ্গে আলাপ করলেও মুসলিমদের নিষেধাজ্ঞা নিয়ে কিছু বলেননি। নির্বাচিত হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ ট্রাম্পের সঙ্গে বেশ আন্তরিক আলোচনা করলেও এ বিষয়ে একেবারে চুপ পাকিস্তানও।

সৌদি আরব ও মিসরের চুপ থাকার বিষয়ে জর্জ ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটির মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক বিশেষজ্ঞ নাথান জে. ব্রাউন বলেন, নির্বাচিত ও ক্ষমতা গ্রহণের পর ট্রাম্প অনেক কিছু করার কথা বলেছেন। তবে এখনও স্পষ্ট নয় তিনি কি কি করবেন। ফলে কেউ জানে না কি ঘটতে যাচ্ছে। এমনকি হয়ত ট্রাম্পের নিজের কাছেও বিষয়গুলো স্পষ্ট নয়।’

আমেরিকান ইউনিভার্সিটি অব বৈরুত-এর ইসাম ফেয়ার্স ইন্সটিটিউটের পরিচালক রামি জি. খৌড়ি বলেন, এসব দেশের শাসকদের নিজ দেশেই তেমন কোনও বৈধতা নেই। তারা নিজ দেশের মানুষের ক্ষোভের মুখে আছেন। ফলে তারা মার্কিন প্রেসিডেন্টের রোষানলে পড়তে চান না।

প্রতিবেশী দেশ আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহার নিয়ে আশঙ্কায় আছে পাকিস্তান। ফলে তারা চুপ আছে। পাকিস্তানের রাজনৈতিক বিশ্লেষক জাহিদ হোসেন বলেন, এখানে উদ্বেগের অনেক বিষয় আছে। ফলে তারা চুপ থেকে দেখতে চায় ঘটনা কতদূর যায়।

সোমবার জর্ডানের বাদশা আবদুল্লাহ দ্বিতীয় ওয়াশিংটন ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তা ও কংগ্রেস সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। ট্রাম্পের ক্ষমতা গ্রহণের প্রথম আরব রাষ্ট্র প্রধান হিসেবে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছেন। তিনিও মুসলিমদের নিষেধাজ্ঞা নিয়ে কিছু বলেননি।

এক সময় মুসলিম বিশ্বের মধ্যে সংহতি গড়ে ওঠেছিল। বিশেষ করে একবিংশ শতাব্দীর শুরুতে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘর্ষে মুসলিম বিশ্ব ঐক্যবদ্ধ ছিল। কিন্তু বেশ কয়েকটি আঞ্চলিক সংঘর্ষ ও যুদ্ধে এখন মুসলিম বিশ্বের মধ্যে কোনও একতা নেই। মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর আন্তর্জাতিক সংস্থা ওআইসি এখন একেবারে নখদন্তহীন। কিছুদিন আগে মিসরের প্রেসিডেন্টের ব্যয় নিয়ে কৌতুক করায় সংস্থাটির প্রধানকে পদত্যাগ করতে হয়েছে।

ট্রাম্পের নির্বাচনি প্রচারণা শুরুর দিকে কড়া সমালোচনা ও প্রতিবাদ জানিয়েছিল প্রাচীন ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় আল আজহার। কিন্তু মুসলিম নিষেধাজ্ঞার নির্বাহী আদেশ দেওয়ার পর ট্রাম্পের সমালোচনা করেনি প্রতিষ্ঠানটি। অনেকেই মনে করছেন, বিশ্ববিদ্যালয়টি সরকারের নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক কিছু করতে চাচ্ছে না।

এর ফল ভালো হবে না মনে করেন আমেরিকান ইউনিভার্সিটি অব বৈরুত-এর ইসাম ফেয়ার্স ইন্সটিটিউটের পরিচালক রামি খৌড়ি বলেন, ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে আরব মুসলিম দেশগুলোর জনগণের সম্পৃক্ততা না থাকার ফলে তা ক্ষোভ আকারে ২০১১ সালে আরব বসন্ত আকারে হাজির হয়। আর যখন আমেরিকা মুসলিম ও ইসলামকে অবজ্ঞা ও অপমান করছে, তখন তারা কিছুই করছে না। এটা আরও ভয়ংকর ক্ষোভ জন্মাবে এবং চাপ জন্ম দেবে। সূত্র: ওয়াশিংটন পোস্ট।



মন্তব্য চালু নেই