ট্রাম্পের অশালীন আলাপসঙ্গী বিলি বুশ বরখাস্ত
যুক্তরাষ্ট্রের আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান দলের প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের ফাঁস হওয়া অশালীন মন্তব্যের আলাপসঙ্গী বিলি বুশকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে যুক্তরাষ্ট্রের জনপ্রিয় টেলিভিশন চ্যানেল এনবিসি। বিলি ওই চ্যানেলটির জনপ্রিয় সংবাদভিত্তিক অনুষ্ঠান ‘টুডে’র উপস্থাপক। সম্প্রতি দ্য ওয়াশিংটন পোস্টে ফাঁস হওয়া ২০০৫ সালের এক ভিডিও টেপে অশালীন কথোপকথনের জেরে ট্রাম্পের সঙ্গে বিলি বুশকেও সমালোচনার মুখে পড়তে হয়।
ওই সমালোচনার মুখে গত শুক্রবারই একবার দুঃখপ্রকাশ করেছিলেন বিলি বুশ। কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না। প্রকাশিত ভিডিওতে নারীদের সম্পর্কে ‘সম্মানহানিকর’ বক্তব্যের জন্য তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে টেলিভিশন কর্তৃপক্ষ।
এনবিসির ‘টুডে’ অনুষ্ঠানটির নির্বাহী কর্মকর্তা নোয়াহ ওপেনহেইম তাঁর দলের সদস্যদের উদ্দেশে পাঠানো এক দাপ্তরিক চিঠিতে বলেন, ‘গত ৪৮ ঘণ্টা আমরা চরমভাবে বিপর্যস্ত। তবে একটা বিষয় পরিষ্কার যে, ওই ভিডিওতে বিলির ভাষা এবং আচরণের কোনো ব্যাখ্যা নেই। এই পরিস্থিতিতে এনবিসি কর্তৃপক্ষ বিলিকে সাময়িক বরখাস্তের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এবং পরবর্তী পর্যালোচনার জন্য বিষয়টি স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’
গত শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী পত্রিকা দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট ২০০৫ সালে ট্রাম্পের সঙ্গে বিলি বুশের কথোপকথনের একটি রেকর্ড প্রকাশ করে। ওই ভিডিওতে ওই সময়ের ‘এক্সেস হলিউডের’ উপস্থাপক বিলি ও ‘ডেজ অব আওয়ার লাইভস’ অভিনেত্রী আরিয়ানি জাকারকে ট্রাম্পের সঙ্গে দেখা যায়। তার আগে বিলিকে ট্রাম্পের সঙ্গে কথা বলতে শোনা যায়। ওখানেই নারীদের সম্পর্কে অশালীন আলাপে তাঁর সঙ্গী ছিলেন বিলি।
ভিডিওতে দেখা গেছে, বাসে নারীদের সম্পর্কে অশালীন আলাপ করতে করতেই নেমে আসেন বিলি ও ট্রাম্প। এ সময় অভিনেত্রী আরিয়ানি তাঁদের স্বাগত জানান। কথা বলতে বলতে একসময় অভিনেত্রী আরিয়ানিকে নিজের কাছে নিয়ে নেন ট্রাম্প। এরপর আরিয়ানি তিনজনের মাঝখানে গিয়ে ট্রাম্পের বাঁ হাত ও বিলি বুশের ডান হাত জড়িয়ে ধরে সামনে হেঁটে যান।
বিলির সঙ্গে ফাঁস হওয়া ট্রাম্পের ওই কথোপকথনে ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর যৌনজীবন সম্পর্কেও আলাপ করেন। আলাপে ট্রাম্প হাসতে হাসতে অবলীলায় বর্ণনা দেন, কীভাবে একজন বিবাহিত নারীর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করার চেষ্টা করেছিলেন তিনি। এ ছাড়া নারীদের চুমু খাওয়া, তাঁদের কীভাবে আয়ত্তে আনা যায়, তা নিয়েও তিনি আপত্তিকর সব মন্তব্য করেন। আর এই পুরো অশালীন কথোপকথনে তাঁকে সঙ্গ দিয়ে যান তখনকার সময়ে ‘এক্সেস হলিউডের’ উপস্থাপক বিলি বুশ। গত শুক্রবার রাতে এ ভিডিও প্রকাশ হওয়ার পর তীব্র সমালোচনা সৃষ্টি হয় খোদ রিপাবলিকান শিবিরেও।
ভিডিও প্রকাশের পর পরই এক বিবৃতিতে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘এগুলো ছিল লকার রুমের ঠাট্টা। এই ব্যক্তিগত কথাবার্তা অনেক বছর আগে হয়েছে। গলফ কোর্সে বিল ক্লিনটনের (সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট) চেয়ে খারাপ কিছু আমাকে বলেছেন, যা এর (ট্রাম্পের কথার) কাছাকাছিও নয়। কেউ এতে অসন্তুষ্ট হলে আমি দুঃখিত।’
তবে দুঃখ প্রকাশ করেই পার পাচ্ছেন না ডোনাল্ড ট্রাম্প। ওই ভিডিওটি নিয়ে মার্কিনসহ বিশ্ব গণমাধ্যম এবং যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলে ট্রাম্পের মন্তব্য নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়েছে। ট্রাম্পের নিজের দল রিপাবলিকান পার্টির নেতাকর্মীরাও এর সমালোচনা করেছেন। এ ছাড়া এ ভিডিও টেপ প্রকাশের ঘটনা তাঁর নির্বাচনী প্রচারণার ক্ষেত্রে একটি বড় ধরনের ধাক্কা বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।
মার্কিন সিনেটের সংখ্যাগরিষ্ঠ রিপাবলিকানদের নেতা মিচ ম্যাককনেল বলেন, সব নারী ও মেয়ের কাছে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ক্ষমা চাইতে হবে।
রিপাবলিকান দলের অপর জ্যেষ্ঠ নেতা জন ম্যাককেইন বলেন, ডোনাল্ড ট্রাম্পের মন্তব্যের কোনো সাফাই হতে পারে না।
মন্তব্য চালু নেই