ট্রাম্পকে নসিয়ত দিলেন আহমেদিনেজাদ

তুন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কার্যকলাপ নিয়ে কিভাবে ঠেকাবেন তা নিয়ে অনেকটা ঘোরের মধ্যে আছেন মার্কিনিরা। ট্রাম্পের বিতর্কিত সিদ্ধান্ত আমেরিকার পাশাপাশি পুরো বিশ্বের ব্যবস্থাকে নতুন সংকটে ফেলে দিয়েছে। এমন অবস্থায় আমেরিকার পররাষ্ট্রনীতি, অভিবাসন ইস্যু, নারী কেলেঙ্কারী ও জাতিসংঘের মতো স্পর্শকাতর বিষয় এবং ট্রাম্পের ব্যক্তিগত জীবনে নিয়ে একপ্রকার নসিয়তই দিলেন ক্লীন ইমেজধারী ইরানের সাবেক প্রেসিডেন্ট আহমেদিনেজাদ। চিঠি দিলেন ট্রাম্পকে।

সাড়ে তিন হাজার শব্দের এক দীর্ঘ চিঠি লিখলেন ইরানের সাবেক প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আহমেদিনেজাদ। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে উদ্দেশ্য করা লেখা চিঠিটি নিজের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করেছেন। চিঠিটি ইংরেজি ও ফার্সি ভাষায় প্রকাশ করা হয়েছে তার ওয়েবসাইটে। সেই চিঠি এখন বিশ্ব মিডিয়ায় আলোচনার ঢেউ তুলছে।

মূলত কিছুটা উপদেশ ও কয়েকটি বিষয়ে বিচক্ষণ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে মার্জিত ভাষায় লেখা হয় চিঠি। প্রথমেই চিঠিতে ট্রাম্পকে রাজকীয় সম্ভাষণ জানান আহমেদিনেজাদ।

আমেরিকার ইতিহাসে সাধারণত হুট করেই পররাষ্ট্রনীতি বদলায় না। কিন্তু ট্রাম্প ক্ষমতায় গিয়েই নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন শুরু করে দিয়েছেন কোনোরকম প্রস্তুতি গ্রহণ ছাড়াই। যে প্রতিশ্রুতিগুলো তখনই বিতর্কের জন্ম দিয়েছিল। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল, অভিবাসন, মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল নির্মাণ, রাশিয়ার সঙ্গে বিশেষ সম্পর্ক স্থাপন ও চীন সাগর দখল। ক্ষমতায় গিয়েই মাস খানেকের মধ্যে এতোগুলো বিতকির্ত ইস্যু তৈরি করেছেন তিনি। যার প্রভাব পড়েছে বিশ্ব কূটনীতি ও দ্বিপাক্ষিক রাষ্ট্রীয় সম্পর্কে। এ নিয়ে সাংবাদিকদের প্রতিও ক্ষেপেছেন তিনি। অনেকে এটিকে দেখছেন ট্রাম্পের ক্ষমতার বড়াই হিসেবে।

এসবের প্রতি দৃষ্টি দিয়ে ইরানের সাবেক এ প্রেসিডেন্ট উপদেশ দিয়ে বলেছেন, ক্ষমতার চার বছর অনেক বড় সময়। কিন্তু খুব দ্রুত গতিতে শেষ হয়। সুযোগকে গুরুত্ব দিয়ে মূল্যায়িত করতে হয়, প্রতিটি মূহুর্তকে সর্বোচ্চ মেধা দিয়ে ব্যবহার করতে হবে। এসময়ে তিনি জাতিগত বৈচিত্রের প্রতি সম্মান ও গুরুত্ব দেয়ার জন্য ট্রাম্পকে আহ্বান জানান।

চিঠিটি এমন সময়ে লেখা হলো, যখন ক্ষমতায় এসেই সাত মুসলিমপ্রধান দেশের অধিবাসীদের ওপর আমেরিকায় বাস করতে নিষেধাজ্ঞা জারি করে নির্বাহী আদেশে সই করেন ট্রাম্প। আদালতের পাল্টা নির্দেশে সেই আদেশ স্থগিত করা হয়। সেই নিষিদ্ধের তালিকায় ইরানও ছিল।

এ প্রসঙ্গে আহমেদিনেজাদ বলেন, ট্রাম্পের ভেতরে আমি স্বজাতিপ্রীতি দেখেছি। আমেরিকার উন্নয়নে অভিবাসীদের অবদান কম নয়। বিশেষ করে অধিবাসীদের মধ্যে অনেক নামকরা বিজ্ঞানি রয়েছেন। বিজ্ঞানসহ অনেক ক্ষেত্রে ইরানিদের অনেক অবদান রয়েছে। আমেরিকা সবার। প্রেসিডেন্ট হিসেবে আমেরিকায় বসবাসরত জাতিগত বৈচিত্রের প্রতি সম্মান ও গুরুত্ব দিতে হবে ট্রাম্পকে উল্লেখ করেন তিনি।

ব্যবসায়ী ট্রাম্প টাকার কুমির। রয়েছে আলিশান বিলাস বহুল বাড়ি, হোটেল, বিমান। তাই পাশ্চাত্য সংস্কৃতির প্রভাবে জরিয়ে পড়েছেন নারী কেলেঙ্কারীতে। ব্যক্তিগত জীবনে তার নারী কেলেঙ্কারী ও নারীদের নিয়ে বিকৃত মন্তব্য খোদ রিপাবলিকানদেরও প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।

এ নিয়ে নারী প্রসঙ্গে আহমেদিনেজাদ লিখেছেন, ইতিহাসের সকল মহান ব্যাক্তিরা নারীর প্রতি সর্বোচ্চ শ্রদ্ধা দেখিয়েছেন। আল্লাহ প্রদ্ত্ত নারীদের বিশেষ গুণের স্বীকৃতি দিয়েছেন তারা। তাদের উপযুক্ত জায়গায় রেখেছেন।

আহমেদিনেজাদের বক্তব্যে বাদ যায়নি যুদ্ধ বিদ্ধস্ত দেশগুলোর কথা। সিরিয়া, ইরাক, আফগানিস্তানে যুদ্ধের পিছনে আমেরিকার ইন্ধন ও প্রকাশ্য অংশগ্রহণ দেখেছে বিশ্ব। যেখানে জাতিসংঘ ছিল অসহায়। সেই নীতির কঠোর সমালোচনা করেন তিনি। আহমেদিনেজাদ বলেন, অতীতে জাতিসংঘের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের অতিরিক্ত খবরদারির কারণে বিশ্বে নিরাপত্তাজনিত সমস্যা, যুদ্ধ, বিভাজন, হত্যাযজ্ঞ ও জাতিগত বৈষম্যর সৃষ্টি হয়েছে। বিশ্বকে যুদ্ধ দেখতে হয়েছে। নতুন আমেরিকাকে এ পথ থেকে বের হতে পারলে লাভবান হবে মানবজাতি।

ইরানের এই সাবেক প্রেসিডেন্ট যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতি নিয়েও কথা বলেছেন চিঠিতে। তিনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক ও নির্বাচন ব্যবস্থা দুর্নীতিগ্রস্ত ও জনবিরোধী। ট্রাম্পকে পরামর্শ দিয়ে লিখেছেন, আগের প্রেসিডেন্টদের মতো তিনি যেন পশ্চিমএশিয়ায় নানা বিষয়ে নাক গলিয়ে দাম্ভিকতার পরিচয় না দেন।

আহমাদিনেজাদের এই চিঠি ইরানের সুইস অ্যাম্বাসিকে দেয়া হয়েছে আমেরিকান প্রেসিডেন্টের কাছে পৌঁছে দেয়ার জন্য। ইরানে মাকির্ন দূতাবাস নেই। তেহরানের সুইস অ্যাম্বাসিই মার্কিনকে প্রতিনিধিত্ব করে।

আহমেদিনেজাদ ইতোপূর্বে বিশ্বের ক্ষমতাধর প্রেসিডেন্ট ও ব্যক্তিকে চিঠি লিখেছেন। তার মধ্যে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মার্কেল, জর্জ ডব্লিউ বুশ ও পোপ উল্লেখযোগ্য।

এর আগে ইরানের জনপ্রিয় এই সাবেক প্রেসিডেন্ট বিশ্ব ব্যবস্থার পুনর্গঠনে আগ্রহ প্রকাশ করে নতুন ধারনার কথা বলেছিলেন। তার নতুন ধারনা নিয়ে বিশ্বব্যাপী কাজে লাগাতে ভূমিকা রাখবেন বলে জানিয়েছিলেন।

ইরানে অনেকেই ট্রাম্প ও আহমেদিনেজাদের মধ্যে মিল খুঁজে পান। দুই জনের পোশাকের ধরনের মধ্যে মিল রয়েছে বলে জনশ্রুতি রয়েছে।

ইরানের রাজনীতিতে ২০০৫ সালে উল্কারগতিতে উত্থান হয় আহমেদিনেজাদের। প্রেসিডেন্ট হয়েও সাবলীল চলাফেরা, সাধারণ মানুষের মতো সাদা-মাটা জীবন-যাপনে অভ্যস্ত ছিলেন তিনি। এই চলন বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়তা এনে দেয় তাকে। ক্ষমতায় থাকলেও কোনো দাম্ভিকতা ছিল না। কিন্তু ইরান পরিচালনায় অত্যন্ত দাপট দেখিয়েছেন তিনি।

কঠোর হুমকি উপেক্ষা করে আমেরিকার মতো দেশকে কূটনীতিতে সামাল দিয়ে পরমাণু গবেষণা চালিয়ে গিয়েছেন। তার সময়ে অর্থ ব্যবস্থাপনায়ও আনা হয় বিরাট পরিবর্তন। সেই আহমাদিনেজাদ ফের আলোচনায় এলেন।



মন্তব্য চালু নেই