টাইটানিকের ঘাতকের ছবি এবার নিলামে
সমুদ্র যাত্রার ইতিহাসে স্মরণকালের সবচেয়ে দুঃখজনক অধ্যায়ের জন্ম দিয়েছিল ডুবে যাওয়া প্রমোদতরী টাইটানিক। এই জাহাজের বিপুল সংখ্যাক জিনিস এ যাবৎ পর্যন্ত নিলামে ওঠেছে। বিক্রিও হয়েছে বিপুল টাকায়। অর্থাৎ টাইটানিকের সঙ্গে সম্পৃক্ততা রয়েছে এমন কোনো বিষয় বরাবরই কৌতুহলী বিশ্ববাসীর মনোযোগ আকর্ষণে বেশি সময় নেয় না। এবার টাইটানিক থেকে উদ্ধার হওয়া কোনো জিনিস নয়। বরং একটু ভিন্ন ধাঁচের কিছুর দিকে দৃষ্টি সবার। আর তা হল টাইটানিকের ঘাতকের ছবি যা নিলামে ওঠতে আচ্ছে খুব শিগগিরই। টাইটানিকের ঘাতক ওই হিমশৈলর ছবিটি একশ বছরের বেশি সময় ধরেই ঝুলে ছিল বিশ্ববিখ্যাত হোয়াইট স্টার লাইনের আইনজীবী সংস্থার দপ্তরের দেয়ালে।
এবার ওই ছবিই নিলামে তোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। এই হোয়াইট স্টার লাইনই বিশ্ববিখ্যাত প্রমোদতরী টাইটানিকের মালিকানার অধিকারী। এই কোম্পানীই তৈরি করেছিল জাহাজটি। তাদের আইনজীবী সংস্থার দেয়ালেই ঝোলানো ছিল ঘাতকের ছবি। ১৯১২ সালের ১৫ এপ্রিল বিশাল ওই হিমশৈলর ছবি তুলে নিয়েছিলেন জার্মান ওশান লাইনার প্রিন্স আডেলবার্টের চিফ স্টুয়ার্ড। তিনি জানতেন না, কয়েক ঘণ্টা আগে ওই হিমশৈলর ধাক্কাতেই সেই সময়ের সবচেয়ে বড় এবং বিখ্যাত প্রমোদতরী তলিয়ে গিয়েছে আটলান্টিকের হিমশীতল জলে। জাহাজের ২,২০০ যাত্রীর মধ্যে ১,৫১৭ জনের সলিলসমাধি হয়েছিল ওই দুর্ঘটনায়।
‘শোলা ডুবে যাবে, কিন্তু টাইটানিক নয়’, বেলফাস্টের হার্টল্যান্ড অ্যান্ড উল্ফ নামের বিখ্যাত জাহাজ নির্মাণ সংস্থার প্রযুক্তিবিদরা টাইটানিকের নিরাপত্তাব্যবস্থা সম্পর্কে বলতে গিয়ে সদম্ভে এমনই উক্তি করেছিলেন। তারা জানতেন না, নিয়তির নিষ্ঠুর পরিহাস তাদের জন্য কি নিয়ে অপেক্ষা করছে। আর মাত্র চার দিনের মাথায় সেটা বেড়িয়ে এসেছিল। প্রথমবার সাগরপাড়ি দেওয়ার চার দিনের মধ্যেই তৎকালীন সেরা প্রযুক্তিতে নির্মিত টাইটানিক ডুবে গেলো।
ওই ঘাতক হিমশৈলর সঙ্গে টাইটানিকের ধাক্কায় চুরমার হয়ে যায় পাশের দিকের পাঁচটি কামরা। মাত্র দুই ঘণ্টা ৪০ মিনিটের মধ্যেই টাইটানিক ডুবে যায়। ১৫ এপ্রিল ১৯১২ সকালে যখন সেখানে হাজির হয়েছিল প্রিন্স আডেলবার্ট, ততক্ষণে অত বড় প্রমোদতরীর আর কোনো অস্তিত্বই নেই। কিন্তু, জলের ওপর তখনও আগের মতোই ভাসছিল একটা দানবিক হিমশৈল। এক পাশে দগদগে ক্ষতচিহ্নের মতো লালচে একটা দাগ। পরবর্তীকালে বিশেষজ্ঞরা অনুমান করেছেন, ওই জায়গাতেই জাহাজ ধাক্কা খেয়েছিল হিমশৈলর সঙ্গে। তবে, জার্মান জাহাজের চিফ স্টুয়ার্ড কিছু না বুঝেই ছবি তুলেছিলেন হিমশৈলটার।
সেই ছবিই ঝোলানো হয়েছিল হোয়াইট স্টার লাইনের আইনজীবী সংস্থার দপ্তরে। ২০০২ সালে বন্ধ হয়ে যায় ওই আইন সংস্থার দপ্তর। কিন্তু, তার চার অংশীদার সিদ্ধান্ত নেন ছবিটি নিলামে তোলার। আগামী ২৪ অক্টোবর টাইটানিক-ঘাতক ওই হিমশৈলর ছবি নিলামে অন্তত ১০ হাজার থেকে ১৫ হাজার পাউন্ডে বিক্রি হওয়ার আশা করছেন তারা।
মন্তব্য চালু নেই