টঙ্গীতে সেনাবাহিনীর গুলিতে ৬ জন নিহত
একাত্তরের এইদিনে অগ্নিগর্ভ পুরো বাংলাদেশ। দেশমাতৃকাকে হানাদারমুক্ত করতে সবাই রাজপথে। স্বাধীনতার দাবিতে উত্তাল। বঙ্গবন্ধুর ডাকে চলছে লাগাতার হরতাল। ‘বীর বাঙালী অস্ত্র ধরো, বাংলাদেশ স্বাধীন করো’- স্লোগানে স্লোগানে প্রকম্পিত শহর-বন্দর-গ্রামগঞ্জ। অহিংস আন্দোলন-সংগ্রামে নয়, সশস্ত্র সংগ্রামেই একমাত্র মুক্তির পথ, এটা বুঝতে বাঙালি জাতির বাকি রইল না। তাই আন্দোলনের পাশাপাশি সারাদেশেই গোপনে চলে সশস্ত্র সংগ্রামের প্রস্তুতি।
পহেলা মার্চ ঢাকায় যে আন্দোলন শুরু হয়েছিল, তার ঢেউ আছড়ে পড়েছে দেশের প্রতিটি পাড়া-মহল্লা, শহর-বন্দরে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অঙ্গুলি হেলনে চলছে সবকিছু। দেশ স্বাধীন না হলেও তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের সবকিছু নিয়ন্ত্রণে চলে যায় বঙ্গবন্ধুর হাতে।
বঙ্গবন্ধুর ডাকে টানা হরতাল চলছে। অহিংস আন্দোলন ক্রমশ সশস্ত্র প্রতিরোধে রূপ নিতে শুরু করে। দেশের বিভিন্নস্থানে স্বাধীন বাংলাদেশের মানচিত্র খচিত লাল-সবুজ পতাকা নিয়ে রাজপথ উত্তপ্ত করছে বীর বাঙালীরা। পাক সেনাবাহিনী ও সামরিক জান্তার রক্তচক্ষু উপেক্ষা করেই স্বাধীনতার দাবিতে অগ্নিগর্ভ হতে থাকে পুরো বাংলাদেশ। পাক সামরিক বাহিনীর সামনেই মুক্তিপাগল বাঙালী জাতি প্রকাশ্য রাজপথে সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে বাংলাদেশকে স্বাধীন করার স্লোগানে সারাদেশই প্রকম্পিত করে রাখে।
শহীদ জননী জাহানারা ইমামের লেখা বিখ্যাত প্রামাণ্য গ্রন্থ ‘একাত্তরের দিনগুলি’তে একাত্তরের ৫ মার্চ শুক্রবারের বর্ণনা দিয়েছেন এভাবে- ‘আজও ছ’টা দুটো হরতাল। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হরতালের দিনগুলোতে বেতন পাওয়ার সুবিধার জন্য এবং অতিজরুরী কাজকর্ম চালানোর জন্য সরকারী-বেসরকারী সব অফিস দুপুর আড়াইটা থেকে চারটা পর্যন্ত খোলা রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। রেশন দোকানও ওই সময়ে খোলা।
ব্যাংকও তাই। আড়াইটা চারটার মধ্যে টাকা তোলা যাবে। তবে দেড় হাজার টাকার বেশি নয়। বিকেলে ব্যাংক খোলা- ভাবতে মজাই লাগছে। শেখ মুজিবের একেকটা নির্দেশ সব কেমন ওলটপালট খেয়ে যাচ্ছে।
জরুরী সার্ভিস হিসেবে হাসপাতাল, ওষুধের দোকান, এ্যাম্বুলেন্স, ডাক্তারের গাড়ি, সংবাদপত্র ও তাদের গাড়ি, পানি, বিদ্যুত, টেলিফোন, দমকল, মেথর ও আবর্জনা ফেলা ট্রাক- এগুলোকে হরতাল থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। আজ মসজিদ ও মন্দিরে বিশেষ প্রার্থনা।
অন্যদিকে একাত্তরের আজকের দিনে হরতাল কর্মসূচী পালনকালে টঙ্গীতে সেনাবাহিনীর গুলিবর্ষণে ৬ জন নিহত ও ৩৫ জন আহত হয়। এ ছাড়াও খুলনায় ২ জন এবং রাজশাহীতে ১ জন নিহত হয়।
টঙ্গীতে ২০ হাজারেরও বেশি শ্রমিক স্বাধিকার আন্দোলনের অংশ হিসেবে বিক্ষোভ মিছিল বের করলে সেনাবাহিনী নির্বিচারে গুলিবর্ষণ করে। এ ঘটনার প্রতিবাদে বিকেলে আওয়ামী লীগ, শ্রমিক লীগ ও ছাত্রলীগের উদ্যোগে বায়তুল মোকাররম থেকে এক বিশাল লাঠি মিছিল বের হয়।
বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে আওয়ামী লীগের তরফ থেকে ব্যাংকিং লেনদেনের ওপর নতুন নির্দেশ দেয়া হয়। দলের সাধারণ সম্পাদক তাজউদ্দীন আহমদ এদিন চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, রংপুর, সিলেট ও দেশের অন্যান্য স্থানে সংঘটিত বর্বরোচিত হত্যাকান্ডের চিত্র তুলে ধরেন। যে কোন জরুরী পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য আওয়ামী লীগ একটি কন্ট্রোল রুম স্থাপন করে।
এদিন তাহরিক-ই-ইশতিকলাল পার্টির প্রধান এয়ার মার্শাল (অব) আসগর খান পাকিস্তানের সংহতি বিপন্ন উল্লেখ করে অবিলম্বে শেখ মুজিবের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের আহ্বান জানান।
মন্তব্য চালু নেই